কয়লা পাচার, গরু পাচারের পর এবার বেআইনি বালি পাচারের অভিযোগ উঠল রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। বীরভূম জেলার নলহাটি ২ নম্বর ব্লকে ব্রহ্মাণী নদী থেকে বেআইনি বালি তোলার বিরুদ্ধে গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রতিরোধের মুখে পিছু হটতে বাধ্য হল অবৈধ বালি পাচারকারীরা।
রামপুরহাট মহকুমার অন্তর্গত শীতলগ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বলরামপুর গ্রামের ব্রহ্মাণী নদীর গর্ভ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বেআইনিভাবে বালি তোলার অভিযোগ উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে বালি তুলে বিক্রি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ। নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূল নেতারা প্রত্যক্ষভাবে এর সাথে জড়িত বলে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিআই(এম)।
গ্রামবাসীরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, এইভাবে যদি বালি তোলা হয়, তাহলে গোটা বলরামপুর গ্রামটাই নদীগর্ভে তলিয়ে যাবে। এই গ্রামের যত বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তা নদীপাড়ের বিদ্যুতের খুঁটি থেকে এসেছে। এইভাবে যদি বালি তোলা হয় যে কোনও সময় বিদ্যুতের খুঁটি ধসে যেতে পারে। গ্রামবাসীরা এই আশঙ্কা এবং ভয় থেকে অবৈধ উপায়ে বালি তোলা যাতে বন্ধ হয় তার জন্য ২ নম্বর ব্লকের বিডিও, বিএলআরও, বিদ্যুৎ দপ্তর সবার কাছে সংঘবদ্ধ এবং লিখিতভাবে বারবার আবেদন জানিয়েছেন। যদিও কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি বলে অভিযোগ।
গত ১০ জুলাই, রবিবার যখন অবৈধভাবে বালি তোলার সময় গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই এই বালি তুলতে বাধা দেন। তাঁরা বলেন, "এইখান থেকে এইভাবে আমরা আর বালি তুলতে দেব না। আমাদেরকেই এর প্রতিকার করতে হবে।" এর ফলে সাময়িকভাবে বালি তোলা বন্ধ হয়। এখনও পর্যন্ত অবৈধ ভাবে বালি তোলা বন্ধ থাকলেও কতদিন পর্যন্ত তা বন্ধ থাকবে সে বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় প্রকাশ করেছেন গ্রামবাসীরা।
এ প্রসঙ্গে তৃণমূলের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছে সিপিআই(এম)। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা প্রকাশ্যে এনে সিপিআই(এম) বীরভূম জেলা সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য সঞ্জীব বর্মন এক ভিডিও বার্তায় জানিয়েছেন, "সাময়িকভাবে বালি তোলা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু এর আগেও এরকম কিছুদিনের জন্য বন্ধ হয়েছে, আবার তোলা হয়েছে। আমাদের আশঙ্কা আবার বালি তোলা শুরু হতে পারে। তার কারণ, বলরামপুরে ব্রহ্মাণী নদীর গর্ভ থেকে অবৈধ উপায়ে বালি তোলার ঘটনা কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। সারা রাজ্য জুড়ে অবৈধ কারবারটাই এখন নিয়ম। তোলাবাজি, চুরি-জোচ্চুরিই যখন তৃণমূল কংগ্রেসের নিয়ম তখন মানুষ সংঘবদ্ধভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এটা বন্ধ হবে না।"
তিনি আরও বলেন, "এই অবৈধ কারবার গোটা জেলা জুড়ে চলছে। অবৈধ বালি, অবৈধ কয়লা, গরু পাচার থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। কারণ, তৃণমূলের সর্বোচ্চ স্তর থেকে প্রশ্রয় আছে। লুঠ, তোলাবাজি এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে এখন নিজেদের মধ্যে শুরু হয়েছে খুনোখুনি। বগটুই থেকে ক্যানিং সর্বত্র একই ছবি। বালিঘাট থেকে কালিঘাট তৃণমূলের সব নেতারা এই অবৈধ কারবারে যুক্ত থেকে কোটি কোটি টাকা কামিয়ে ফুলেফেঁপে ঢোল।"
মানুষের প্রতি আস্থা রেখে সিপিআই(এম) নেতা জানান, " গ্রামের মানুষ এই অবৈধ বালি কারবার, লুঠ, তোলাবাজি, চুরি-জোচ্চুরি এবার বন্ধ করবেই। কিছুতেই আর মানুষ এই জিনিস মেনে নেবে না। আজ ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী)-র পক্ষ থেকে মাননীয় মহকুমা শাসকের কাছে আমরা লিখিতভাবে আবেদন জানিয়ে বলেছি, আপনাকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। যারা প্রতিবাদী, তাঁদের মুখ বন্ধ করার জন্য নলহাটি ২ নম্বর ব্লকের তৃণমূলের সর্বোচ্চ নেতা চক্রান্ত শুরু করেছেন। ভয় দেখিয়ে, নিরীহ গ্রামবাসীদের মুখ করার চেষ্টা হতে পারে আমরা এরকম আশঙ্কা করছি। আমরা মহকুমা শাসককে বলেছি অবৈধ উপায়ে বালি তোলা বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে, প্রতিবাদী গ্রামবাসীদের নিরাপত্তার দিকে নজর দিতে হবে। সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যাতে তাঁদের কোনও ক্ষতি যাতে কেউ করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে হবে প্রশাসনকে। আগামীকাল আমাদের পার্টির নলহাটি ২ নং ব্লকের নেতারা বিডিও, বিএলআরও এবং বিদ্যুৎ দপ্তরের কাছে আবেদন জমা দেবেন।"
তিনি আরও বলেছেন, " আমরা আশা করছি মাননীয় মহকুমা শাসকের হস্তক্ষেপে এই অবৈধ বালি কারবার শুধু বলরামপুরে নয় গোটা রামপুরহাট মহকুমাতেই বন্ধ হবে। নাহলে, আজকে সংঘবদ্ধ গ্রামবাসীদের প্রতিবাদকে যেমন আমরা সর্বতোভাবে সমর্থন করছি, তেমনই আমরা পার্টির পক্ষ থেকে সংঘবদ্ধ আন্দোলনে যাব। সর্বতোভাবে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে এই লুঠ আমরা বন্ধ করবই। মানুষ জাগছে, তৃণমূলের এই তোলাবাজি আর চলবে না।"
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।