

সকাল সাড়ে ৯টায় ফালাকাটা থেকে শুরু। রাত প্রায় পৌনে দশটা পেরিয়ে গেছে। তখনও ইসলামপুরে চলছে পথসভা। সিপিআইএম-এর ডাকে বাংলা বাঁচাও যাত্রার দ্বিতীয় দিনে সকালে আলিপুরদুয়ার থেকে শুরু করে রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ যাত্রা পৌঁছে গেল ডালখোলা। তৃতীয় দিন সকালে ডালখোলা থেকে শুরু হয়ে যাত্রা এগিয়ে যাবে রসখোয়া, করণদীঘি হয়ে হেমতাবাদ। প্রথম দিনের মতই দ্বিতীয় দিনেও যাত্রা ঘিরে সাধারণ মানুষের উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মত।
মূল যে ১৮ দাবিতে বাংলা বাঁচাও যাত্রা এদিন বক্তাদের কথায় বার বার উঠে এসেছে সেসব কথা। পাশাপাশি ধূপগুড়ির সমাবেশে এসে নিজেদের কথা জানান জেলায় সাম্প্রতিক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা। এই পথসভাতেই মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, সব হারা মানুষের পাশে আছে একমাত্র বামপন্থীরা, একমাত্র লালঝান্ডা। আজ সব দিক থেকে বিপর্যস্ত বাংলার প্রাণ ফিরিয়ে দিতে লালঝান্ডার পুনরুত্থান চাই। সেই কাজে চাই আপনাদের সকলকে। তাহলেই একমাত্র বাংলাকে বাঁচানো যাবে। তৃণমূল বিজেপির আঁতাত থেকে বাংলাকে রক্ষা করা যাবে।
শিলিগুড়ি ঢোকার মুখে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের শিল্প বাঁচাতে হবে, শিক্ষা বাঁচাতে হবে, কৃষি বাঁচাতে হবে, মানুষকে বাঁচাতে হবে। চা বাগান হোক, নদী হোক, পাহাড় হোক – সব আমাদের বাঁচাতে হবে। মানুষের ঐক্যকে বাঁচাতে হবে। রাজ্যটা জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে। সেইজন্য মানুষ চাইছে মুক্তি। গোটা দেশকে মোদী যেমন জাহান্নামে নিয়ে, এখানে মমতা রাজ্যকে সেরকম জাহান্নামে নিয়ে যাচ্ছে। বাংলাকে বাঁচাতে পারে একমাত্র বাংলার মানুষের ঐক্য।
শিলিগুড়ির সমাবেশে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, এরা আমাদের জল জমি পাহাড় জঙ্গল সবকিছু মাফিয়াদের হাতে তুলে দিচ্ছে। কর্পোরেটদের হাতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূলের এই লুটতরাজ রুখতে উত্তরের মানুষ দু’হাত ভরে ভোট দিয়েছিল বিজেপিকে। কিন্তু বিজেপির একজন বিধায়কের হিম্মত হয়নি তৃণমূলের এই চুরি দুর্নীতি আটকানোর। একশো দিনের কাজের টাকা লুঠ করার হাত থেকে বিজেপি কি বিধানসভার ভেতরে থেকেও তৃণমূলকে আটকাতে পেরেছে? এরা সকালে তৃণমূল, বিকেলে বিজেপি। আমরা মানুষের সামনে এই প্রশ্ন রাখছি। দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে, গুন্ডারাজের বিরুদ্ধে, মানুষের ওপর আক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই গড়ে তুলতে আপনাদের কাছে আমরা এসেছি। তৃণমূল বিজেপির এই রাজনৈতিক খেলার বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতেই হবে। কোমর শক্ত করে দাঁড়াতে হবে। সেই কাজে আপনাদের পাশে চাই। রাস্তার দখল নিই। সবাই একসাথে মিলে রাস্তায় না নামলে বাংলাকে বাঁচানো যাবে না।
৩০ নভেম্বর ফালাকাটা থেকে যাত্রা শুরু করে প্রথম থামে শালবাড়িতে। সেখানে মীনাক্ষী মুখার্জির সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর আলিপুরদুয়ার ছেড়ে জলপাইগুড়িতে প্রবেশ করে বাংলা বাঁচাও যাত্রা। ধূপগুড়ির পথসভায় আলিপুরদুয়ার জেলা সম্পাদক কিশোর দাসের হাত থেকে বাংলা বাঁচাও যাত্রার পতাকা গ্রহণ করেন জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক পীযূষ মিশ্র। একইভাবে শিলিগুড়ির সমাবেশে পীযূষ মিশ্রের হাত থেকে পতাকা গ্রহণ করেন সিপিআইএম দার্জিলিং জেলা সম্পাদক সমন পাঠক।
গুগলের হিসেব মত ফালাকাটা থেকে ডালখোলার দূরত্ব প্রায় ২২১ কিলোমিটার। যদিও সোজা পথে না এসে শহর গ্রাম ছুঁয়ে আসার জন্য সে যাত্রাপথ আরও দীর্ঘ হয়েছে। ধূপগুড়ি, ময়নাগুড়ির পথসভার পর জলপাইগুড়ির কালিয়াগঞ্জে সমাবেশ। এরপর শিলিগুড়ির সমাবেশ, ইসলামপুরের পথসভা। মাঝে কিছু কিছু এলাকায় যাত্রীদের সম্বর্ধনা। রাত এগারোটার কিছু পরে ডালখোলা। তৃতীয় দিনে এখান থেকেই শুরু হবে বাংলা বাঁচাও যাত্রার পরবর্তী পর্যায়।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন