প্রায় ৫০% রাজ্য কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেয় না, অধিকাংশই বিজেপিশাসিত! সুপ্রিম কোর্টে জানাল মমতার সরকার

People's Reporter: গত ৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি শেষ হলেও রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। তবে বিচারপতিরা নির্দেশ দিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষেরা চাইলে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে পারবেন।
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্টফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) ইস্যুতে সুপ্রিম কোর্টে বড় পদক্ষেপ নিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সোমবার আদালতে লিখিত আকারে নিজেদের বক্তব্য জমা দিয়ে রাজ্য জানিয়েছে, দেশের অন্তত ১২টি রাজ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্ধারিত হারে ডিএ দেয় না। তালিকায় কেরালা, কর্ণাটক, ছত্তীশগড়, হিমাচল প্রদেশ, মহারাষ্ট্র, মণিপুর, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, তেলঙ্গানা এবং ত্রিপুরার নাম রয়েছে। এর মধ্যে চারটি রাজ্য বাদ দিলে বাকিগুলি বিজেপি শাসিত অথবা বিজেপির সঙ্গে জোটে থাকা রাজ্য।

গত ৮ সেপ্টেম্বর এই মামলার শুনানি শেষ হলেও রায় ঘোষণা স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত। তবে বিচারপতিরা নির্দেশ দিয়েছিলেন, সংশ্লিষ্ট পক্ষেরা চাইলে লিখিত বক্তব্য জমা দিতে পারবেন। সেই নির্দেশ মেনেই রাজ্যের পক্ষ থেকে সোমবার হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের পক্ষ থেকে সোমবার লিখিত আকারে হলফনামা জমা দেওয়া হয়েছে। সেই হলফনামায় রাজ্যের বক্তব্য, সংবিধানের ৩০৯ অনুচ্ছেদে প্রতিটি রাজ্যের নিজস্ব কর্মীদের বেতন-ভাতা নির্ধারণের অধিকার রয়েছে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় ডিএ নীতি অনুসরণ করতে রাজ্যগুলো বাধ্য নয়। আদালত আগেও এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছে।

রাজ্যের আইনজীবী কপিল সিব্বল আদালতে জানান, ভোক্তা মূল্য সূচক (সিপিআই) মেনে ডিএ দেওয়া নিয়েও রাজ্যভেদে বৈষম্য রয়েছে। যেমন— ছত্তীশগড়, মেঘালয়, হিমাচল প্রদেশ ও সিকিমের মতো রাজ্যে ‘রিভিশন অফ পে অ্যান্ড অ্যালাওয়েন্স’ (আরওপিএ) নিয়মে সিপিআই-এর উল্লেখ থাকলেও, সেখানে ডিএ-র হার কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে মেলে না।

শুনানি চলাকালীন রাজ্যের বক্তব্য ছিল, ডিএ কোনও মৌলিক অধিকার নয়, এটি মূলত সরকারের বিজ্ঞপ্তি ও সার্ভিস রুলসের সীমার মধ্যে কর্মচারীদের দাবি। প্রতিটি রাজ্যের আর্থিক সামর্থ্য, অগ্রাধিকার ও আগে থেকে দেওয়া অন্যান্য সুবিধা মিলে ডিএ নির্ধারিত হয়। ফলে কেন্দ্রীয় হারের সঙ্গে রাজ্যের হার হুবহু এক হওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের দাবি, ডিএ ইচ্ছেমতো দেওয়া যায় না। বেতন কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট সময় অন্তর ডিএ দিতে হবে, এবং প্রয়োজনে বকেয়া কিস্তিতে মেটাতে হবে। তাদের মতে, ডিএ প্রদানের নির্দিষ্ট সময়সূচি সরকারের নীতিগত দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।

মামলাটি প্রথমে স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইব্যুনাল (এসএটি), পরে কলকাতা হাই কোর্ট এবং অবশেষে সুপ্রিম কোর্টে ওঠে। ট্রাইব্যুনাল নির্দেশ দিয়েছিল, রাজ্য সরকারকে এআইসিপিআইয়ের ভিত্তিতে নিজস্ব নীতি প্রণয়ন করতে হবে। তবে মামলাকারীদের ব্যাখ্যায়, হাইকোর্টের নির্দেশ কার্যত রাজ্যের উপর কেন্দ্রীয় হারে ডিএ চাপিয়ে দেওয়ার সমান।

এদিকে সোমবার রাজ্যের পক্ষ থেকে হলফনামা জমা দেওয়ার পর, মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের একাংশের আইনজীবী করুণা নন্দী জানিয়েছেন, পাল্টা বক্তব্যও দাখিল করা হবে। বিচারপতি সঞ্জয় কারোল এবং বিচারপতি বিপুল মনুভাই পাঞ্চোলির বেঞ্চ আগেই জানিয়েছিল, এ জন্য এক সপ্তাহ সময় রয়েছে। ফলে ওই সময়ের মধ্যে পাল্টা বক্তব্য জমা দিতে পারবেন মামলাকারী সরকারি কর্মচারীদের আইনজীবীরা। আইনজীবীদের একাংশের মতে, উভয়পক্ষের হলফনামা শুনে রায় ঘোষণা করতে পারে সুপ্রিম কোর্ট।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in