শুভেন্দু অধিকারীর নিরাপত্তারক্ষী খুনের ঘটনায় প্রকৃত সত্য উদঘাটনের দাবি তুলে FIR দায়ের হলো। কাঁথি থানায় FIR দায়ের করেছেন মৃত নিরাপত্তারক্ষীর স্ত্রী সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তী।
প্রায় তিন বছর আগে রহস্যজনকভাবে মৃত্যু হয় শুভেন্দু অধিকারীর সেইসময়ের নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত চক্রবর্তীর। তাঁর স্ত্রী সুপর্ণা চক্রবর্তীর কথায়, তখন শুভেন্দু অধিকারী জেলা এবং রাজ্যস্তরে খুব শক্তিশালী ব্যক্তি ছিলেন তাই স্বামীর মৃত্যু নিয়ে মনে সন্দেহ তৈরি হলেও প্রশ্ন করার সাহস পাননি তিনি। কিন্তু গত বছরের শেষের দিকে দলবদল করে বর্তমানে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা হয়েছেন শুভেন্দু। পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটেছে। তাই এখন বিচার পাওয়ার আশায় কাঁথি থানার আইসির কাছে এফআইআর করেছেন তিনি।
২০১৮ সালের ১৩ অক্টোবর কাঁথির পুলিশ ব্যারাকে নিজের রিভলবারেই গুলিবিদ্ধ হন শুভেন্দুর তৎকালীন নিরাপত্তারক্ষী শুভব্রত। এর ঠিক পরদিন কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে মৃত্যু হয় ওই নিরাপত্তারক্ষীর। শুভব্রতর স্ত্রী সুপর্ণা তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, "আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর আমার ভাসুর (দেবব্রত চক্রবর্তী) বয়ান দেন যে তাঁর ভাই এই কাজ (সুইসাইড) করতে পারেন না। ময়নাতদন্তের সময় সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন তিনি। এরপর রাখাল বেরা নামের এক ব্যক্তি জানিয়েছিলেন ভাসুরের এই বয়ানে শুভেন্দুবাবু অসন্তুষ্ট হয়েছেন। চিকিৎসকও দেহ ময়নাতদন্তে রাজি ছিলেন না। এক পুলিশ আধিকারিক বয়ান দেওয়ার পর পোস্টমর্টেমের কাজ শুরু হয়।" বর্তমানে ওই রাখাল বেরা জেলে রয়েছেন।
মৃত নিরাপত্তারক্ষীর স্ত্রীর দাবি, তাঁর স্বামী ৬-৭ বছর যাবত শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি গার্ড ছিলেন। প্রতিদিনের মত গুলিবিদ্ধ হওয়ার দিনেও (১৩. ১০. ১৮) সকালে স্বামীর সাথে কথা হয় তাঁর। এমনকি বাড়ি আসার জন্য জামা পরছেন বলে জানিয়েছিলেন তিনি। এর কিছুক্ষন পরেই জানতে পারেন তাঁর স্বামী কাঁথি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। খবর পাওয়া মাত্রই দুই ভাসুর ও অন্যান্য আত্মীয়দের নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে তিনি জানতে পারেন শুভেন্দু অধিকারীর নির্দেশমতো চিকিৎসার জন্য কলকাতায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে তাঁর স্বামীকে। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পরও অ্যাম্বুলেন্স এসে পৌঁছায়নি। ফলে তাঁর স্বামীর চিকিৎসায় দেরি হয় বলে অভিযোগ স্ত্রীর। সকালে গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছিল, কিন্তু সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ তাঁকে কলকাতার অ্যাপোলো হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
সুপর্ণা চক্রবর্তী তাঁর অভিযোগপত্রে জানিয়েছেন, "আমার স্বামীর মৃত্যুর কারণ নিয়ে মনে সন্দেহ ছিল প্রথম থেকে। শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটি হিসেবে কাজ করা সত্ত্বেও আমার স্বামী গুলিবিদ্ধ হলেন। এছাড়া শুভেন্দু অধিকারীর সিকিউরিটির অ্যাম্বুলেন্স পেতে দেরি কিসের জন্য হলো সেটাও আমার কাছে পরিস্কার নয়।"
সুপর্ণা কাঞ্জিলাল চক্রবর্তীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইপিসি ৩০২ এবং ১২০বি ধারায় মামলা দায়ের করেছে কাঁথি থানা।
এই অভিযোগের প্রতিলিপির ছবি ট্যুইট করে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ লিখেছেন, "দিলীপ ঘোষ, আপনি বা আপনার কেন্দ্রীয় দল এই মহিলাকে চেনেন? তাঁর স্বামী আপনার দলের এক নেতার রক্ষী ছিলেন। দয়া করে তাঁর আবেদন পড়ে দেখুন। বিরোধী দলনেতা এই বিধবার প্রশ্ন নিশ্চয়ই এড়িয়ে যাবেন।"
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।