
ওঁরা যখন সবাইকে বিচ্ছিন্ন করছে আমরা তখন সবাইকে একজোট করছি। এটাই বামপন্থা। রবিবার বিকেলে আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে সিপিআই(এম) রাজ্য অফিসে এক সাংবাদিক সম্মেলনে একথা বলেন দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম।
এদিন বিজেপির ব্রিগেড জনসভা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেন - এই প্রথম ব্রিগেডে শুনলাম মঞ্চ থেকে নেতা বলছেন তালি বাজাও বাজাও। এটা উত্তর পশ্চিম ভারতের সংস্কৃতি। আমাদের সংস্কৃতি নয়। যা যা তৃণমূলের অপকর্ম আছে, তোলাবাজী, সিন্ডিকেট রাজ এসব নিয়ে প্রধানমন্ত্রী যখন বলছেন তখন কারা মঞ্চ আলো করে কারা বসে আছে? চিটফান্ড বলতে যার নাম প্রথম মনে আসে, সারদা বলতে যে নেতার নাম মনে ভেসে আসে, সিন্ডিকেট রাজ বলতে, সন্ত্রাস বলতে যাদের নাম মনে আসে, তোলাবাজীর কথা বলতে যাদের মুখ ভেসে আসে তাঁরাই তো আজ মঞ্চ আলো করে বসেছিলো। তাদেরকে মহানায়ক বলে রিপ্যাকেজ করা যেতে পারে, তাদের মহান নেতা বলে সাজানো যেতে পারে, কিন্তু ওটা তো টিএমসি ২।
তিনি আরও বলেন - আজ বামের বিরুদ্ধে বলেছেন, কিন্তু এঁরাই তো আর এস এস-এর নির্দেশে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে বলেছিল এ রাজ্যে লাল ঝান্ডা থাকবে না। আর এখন তৃণমূলের সেই ঝান্ডাকে ন্যাকড়া করে মোদী অমিত শাহের জুতো পালিশ করছে এঁরা। শুভেন্দুর মত লোকেরা। বাঙলার গর্ব সেটা?
তৃণমূল বিজেপির যোগসাজোশের অভিযোগ এনে সিপিআই(এম) নেতা বলেন - সমস্ত কুখ্যাত তৃণমূলের নেতারা দল পালটে আজ নতুন সাজে সেজে ওখানে হাজির হয়েছিলেন। যারা ১০ বছর ধরে হামলা করলো, সন্ত্রাস করলো, টাকা পয়সা নিয়ে দলবদল করলো, মানুষকে ঘরছাড়া করলো তারাই তো আজ ওখানে ছিলো। আমরা বারবার বলেছি তৃণমূল ছাড়া বিজেপি বাঁচতে পারে না। বিজেপি ছাড়া তৃণমূল বাঁচতে পারেনা। বামপন্থীরা ভবিষ্যৎমুখী। দক্ষিণপন্থীরা সবসময় অতীতমুখী। এটাই বেসিক তফাৎ।
বিজেপির মিথ্যাচার সম্পর্কে তিনি বলেন - বিজেপির প্রতিষ্ঠায় বাঙালির হাত আরও একটা মিথ্যে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। একটা বাঙালির নাম বলুন। ইতিহাসকে বিকৃত করবেন? এটাই তো মুখোশ। ১৯৮০ তে মুম্বাইতে বিজেপির প্রতিষ্ঠা কনফারেন্স হয় এক শুক্রবারে। বাজপেয়ীজী চলে গেছিলেন নামাজ পড়তে। নাটক এটাকে বলে। মমতা ব্যানার্জি হিজাব কোথা থেকে শিখলেন? আমি সকলের কাছে চ্যালেঞ্জ করছি একজন বাঙালির নাম করুন। জনসংঘ যখন প্রতিষ্ঠা হয় তখন বাঙালির হাত ছিলো। আর এরাজ্যে তো তৃণমূলের হাত ধরেই বিজেপি ঢুকেছে।
এদিন তিনি বলেন - যে নরেন্দ্র মোদী ২০ বছর গুজরাট শাসন করার পর ট্রাম্প যখন আসে তখন ঝুপড়ি ঢাকার জন্য দেওয়াল তুলতে হয়েছিলো। ট্রাম্পের কাছে মুখ বাঁচাতে মুখোশ দিয়ে মুখ ঢাকতে হয়েছিলো। তিনি এখন বাঙলায় এসে উন্নয়ন নিয়ে কথা বলেন কোন মুখে। ৩৪ বছরে বামেদের আমলে শহরে কোনো নতুন ঝুপড়ি তৈরি হয়নি। এটা আমাদের গর্ব ছিলো।
বাম কংগ্রেস নির্বাচনী সমঝোতায় বিজেপির সমালোচনার উত্তরে তিনি বলেন - আমরা যখন কারোর বিরুদ্ধে রঙ দেখে, জাতি দেখে, ধর্ম দেখে, ভাষা দেখে লড়িনা। জরুরি অবস্থার সময় আমরাই বিরোধিতা করেছিলাম। কালা আইনের সময় লড়াই করেছি। আজকে তিনটে কালা আইন হয়েছে আমরা লড়াই করছি। বামপন্থীরা নেতৃত্ব দিচ্ছে কিষাণ আন্দোলনে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ি। যে অন্যায় করবে তার বিরুদ্ধে লড়বো।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন - সাত বছর ধরে বিনাশ করে এখন বিকাশ খুঁজছেন। সবকিছু বেচছেন। এবারের বাজেটে বলেছেন দুটো ব্যাঙ্ক বেচবেন। বিজেপি সরকার আসার পরে কলকাতায় হেড অফিস থাকা ব্যাঙ্ক সংযুক্তির নামে সরিয়ে দিয়েছেন। আজ বাঙলার উন্নয়নের কথা বলছেন কোন মুখে। উনি বলুন হিন্দুস্থান কেবলস কেন বেচে দেওয়া হচ্ছে? বার্ন স্ট্যান্ডার্ড। কত নাম বলবো। রাজ্য সরকার যা পেরেছে বেচেছে। কেন্দ্র যা পারছে বেচছে।
আরএসএস প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন - কেনা বেচার রাজনীতিতে বাঙলার ছোঁয়া মানে বাঙলার অপমান। মনে রাখতে হবে আরএসএস-এর রাজনীতি বাঙলার বিরুদ্ধে। বাংলা স্বদেশী আন্দোলনের সময় থেকে বলেছে বিদেশী পণ্য বর্জন করুন। আর মোদী সাজ সজ্জা থেকে সমস্ত কিছু ব্র্যান্ড বিদেশী। কলম, চশমা, জুতো, স্যুট সবই তো বিদেশী। একমাত্র মমতা ব্যানার্জি যে কুর্তা পাজামা আর রসগোল্লা প্রতি বছর পাঠান সেটা এদেশী।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন