SSC Scam: 'দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব' - নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের আশ্বাস মমতার

People's Reporter: অযোগ্যদের বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাদের ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য আছে আমি দেখব। কাকে কেন অযোগ্য বলা হয়েছে, কে তদন্ত করেছে, আলাদা করে সেটা দেখতে হবে।"
নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়
নেতাজি ইন্ডোরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ছবি - মুখ্যমন্ত্রীর ফেসবুক পেজ
Published on

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের রায় ঘোষণার পরেই বার্তা দিয়েছিলেন ৭ এপ্রিল নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মতো সোমবার নেতাজি ইন্ডোরে চাকরিহারাদের সঙ্গে বৈঠক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস, যোগ্যদের চাকরি যাবে না। সুপ্রিম কোর্টে রায়ের ব্যাখ্যা চাইবেন তিনি। নেতিবাচক উত্তর এলে দু'মাসের মধ্যে বিকল্প ব্যবস্থা নেবেন। পাশাপাশি, বরখাস্তের নোটিশ না পাওয়া পর্যন্ত স্কুলে গিয়ে স্বেচ্ছা পরিষেবা দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।

এদিন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘আমরা দু’মাসের মধ্যেই বিকল্প ব্যবস্থা করে দেব। যোগ্যদের কারও চাকরি বাতিল হবে না। মানবিকতার খাতিরে সুপ্রিম কোর্ট আমাদের হাতে যোগ্য-অযোগ্যের তালিকা তুলে দিক। ব্যাখ্যা দিক। শিক্ষাব্যবস্থা ভেঙে দেওয়ার অধিকার কারও নেই।" এরপরেই চাকরিহারাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা কি এখনও বরখাস্তের নোটিস পেয়েছেন? চাকরি করুন না। স্বেচ্ছায় সকলেই কাজ করতে পারেন।"

সুপ্রিম কোর্টের কাছে ব্যাখ্যা চাওয়া হবে বলেও জানান মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আদালতের কাছে আমরা ব্যাখ্যা চাইব। নতুন করে পরীক্ষা নেওয়ার আগে আমাদের জানতে হবে, যাঁরা স্কুলে পড়াতেন, তাঁদের জন্য আদালতের ব্যাখ্যা কী? স্কুল কে চালাবেন? বাকি কাজ কে চালাবেন? কাউকে না খাইয়ে মারার অধিকার তো কারও নেই। চাকরি দিতে পারবেন না, আমার অনুরোধ তাঁরা যেন চাকরি কেড়ে না নেন। শিক্ষা দফতর যা করার করবে।"

এরপরেই যোগ্যদের উদ্দেশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘যাঁরা যোগ্য, তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের। কোনও রাখঢাক নেই। আইন অনুযায়ী যা করার করব। পথের মধ্যেই পথ খুঁজে নিতে হবে"। মমতার চ্যালেঞ্জ, ‘‘আমি বেঁচে থাকতে যোগ্যদের চাকরি কেড়ে নিতে দেব না। এটা আমার চ্যালেঞ্জ। শিক্ষাব্যবস্থাকে ভেঙে দেওয়ার চক্রান্ত চলছে"।

অযোগ্যদের বিষয়টি পরে দেখবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন,  ‘‘আগে যোগ্যদের বিষয়টি মিটে যাক। তার পর যাদের ‘অযোগ্য’ বলা হচ্ছে, তাঁদের বিরুদ্ধে কী কী তথ্য আছে আমি দেখব। আবার আপনাদের ডাকব। সত্যি যদি তাঁরা ‘অযোগ্য’ বলে প্রমাণিত হন, আমার তখন কিছু করার থাকবে না। কিন্তু কাকে কেন অযোগ্য বলা হয়েছে, কে তদন্ত করেছে, আলাদা করে সেটা দেখতে হবে। আলাদা করে সেটা নিয়ে আমি কথা বলব। সকলে নিশ্চিন্তে থাকুন। যোগ্য-অযোগ্যের মধ্যে গোলমাল লাগাবেন না। নিশ্চিন্ত ভাবে আপনারা শিক্ষা দিন, শিক্ষিত করুন"।

এদিন নেতাজি ইন্ডোরে ফের সিপিআইএমকে নিশানা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘‘আমি অনেক কথা জেনেও সিপিএমের কারও কোনও চাকরি খাইনি। বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য কেন মামলা করলেন? উত্তর দিতে হবে। সিপিএমকে এর জবাব দিতে হবে"।

মমতার কথায়, ‘‘চাকরি দেওয়ার ক্ষমতা নেই, চাকরি কাড়ার ক্ষমতা আছে। তাঁদের ধিক্কার জানাই। যাত্রাপালার মাধ্যমে আপনাদের ভুল বোঝাচ্ছে। রাজ্য সরকার অনেক চেষ্টা করেছিল। ২০২২ থেকে নোংরা খেলা শুরু করেছে"। তিনি আরও বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আমার হৃদয় পাথর হয়ে গিয়েছে। লাল, নীল, গেরুয়া কোনও রঙ দেখব না। আমাকে জেলে ভরলে ভরুক। যোগ্য ব্যক্তির চাকরি যাতে না যায়, আমরা সেটা সবসময় চাই"।

উল্লেখ্য, এদিন বৈঠক শুরুর আগে নেতাজি ইনডোরের সামনে নজিরবিহীন হাতাহাতি দেখলেন রাজ্যবাসী। বৈঠকের 'পাস' নিয়ে 'যোগ্য' এবং 'অযোগ্য'-দের মধ্যে তুমুল হাতাহাতি হয়। এক দলের কাছে বৈঠকের ‘পাস’ আছে। তাঁদের অধিকাংশ শহিদ মিনার থেকে মিছিল করে নেতাজি ইন্ডোরে পৌঁছেছেন। অপর পক্ষ রাতভর নেতাজি ইন্ডোরের সামনেই জমায়েত করেছিলেন। তাঁদের কাছে ‘পাস’ নেই। জানা গেছে, নবান্ন থেকে এই 'পাস' দেওয়া হয়েছে। তাতে লেখা ‘আমরা যোগ্য’। এই 'পাস' থাকলেই বৈঠকে ঢুকতে দেওয়া হবে।

যাঁদের 'পাস' নেই, তাঁদের অভিযোগ, এই 'পাস'ও টাকার বিনিময়ে দেওয়া হয়েছে। বেছে বেছে দেওয়া হয়েছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in