মামলার রায়ের উপর নির্ভর করবে জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ, পঞ্চায়েত-হিংসা মামলায় মন্তব্য হাইকোর্টের

উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, যে ৫০০০ বুথে পুননির্বাচনের দাবি করা হয়েছে, কমিশনারকে তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। যে বুথগুলির প্রসঙ্গ মামলায় এসেছে সেগুলি দেখতে হবে এবং যে ঘটনা ঘটেছে তার দায়িত্ব নিতে হবে কমিশনকে।
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম
কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম ফাইল ছবি, গ্রাফিক্স - রিয়া সরকার
Published on

হিংসা ঠেকাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে রাজ্য। কমিশনের প্রতিক্রিয়াও যথেষ্ট নয়। পঞ্চায়েত নির্বাচন এবং গণনা পরনে হওয়া লাগাতার অশান্তি নিয়ে রাজ্য ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে এভাবেই ভর্ৎসনা করলো কলকাতা হাইকোর্ট।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে হওয়া অশান্তি এবং পুননির্বাচনের দাবিতে মঙ্গলবার তিনটি নতুন জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। বুধবার এই মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, এই মামলার ভবিষ্যতের উপর জয়ী প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করবে। নির্বাচন কমিশনকেও জয়ী প্রার্থীদের একথা জানিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। আগামী ২০ জুলাই এই মামলার পরবর্তী শুনানি।

এদিনের শুনানিতে হাজির হয়নি রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কোনও প্রতিনিধি। কমিশনের প্রতিনিধির অনুপস্থিতিতেই উচ্চ আদালত নির্দেশ দেয়, যে ৫০০০ বুথে পুননির্বাচনের দাবি করা হয়েছে, নির্বাচন কমিশনারকে তা বিবেচনা করে দেখতে হবে। যে বুথগুলির প্রসঙ্গ মামলায় এসেছে সেগুলি দেখতে হবে এবং যে ঘটনা ঘটেছে তার দায়িত্ব নিতে হবে কমিশনকে।

প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের কড়া পর্যবেক্ষণ, কমিশন তার দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করেনি। এমনকী, আজও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিষয়ে কেন্দ্রের নোডাল অফিসারের সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ করা হয়নি। এই বিষয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ।

আদালত বলে, নির্বাচনের ফল ঘোষণার পরেও যে সব ঘটনা ঘটছে আদালত তা দেখে বিস্মিত। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে, যে সন্ত্রাস, হিংসা চলছে রাজ্য তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। মানুষের জীবনধারণের স্বাধীনতার সঙ্গে আপস করা হচ্ছে। পুলিশ নিরীহ মানুষকে সাহায্য করছে না বলে অভিযোগ। এটিকে গুরুতর বিষয় হিসাবে আদালত নথিবদ্ধ করবে। শান্তিপুর্ণ পরিস্থিতি যাতে বিঘ্নিত না হয় তা দেখার দায়িত্ব রাজ্যের। অথচ তাতে ব্যর্থ রাজ্য, এই অভিযোগ গুরুতর। এই বিষয়ে রাজ্যকে হলফনামা দিয়ে তাদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

শুভেন্দু অধিকারীর আইনজীবী গুরু কৃষ্ণ কুমার এদিন আদালতে বুথ দখল ও বুথ লুঠের কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখিয়ে বলেন, ব্যালট পেপার টেম্পারিং হয়েছে। ভোট লুঠ হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যবহার করা হয়নি বহু বুথে। এমনকি গণনার দিনও অশান্ত হয়েছে বিভিন্ন গণনা কেন্দ্র।

তিনি আদালতকে জানান, ছবি ভিডিও সহ ভোট লুঠের বিস্তারিত তথ্য কমিশনকে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু যেখানে হিংসা হল, মানুষ মারা গেল, সেখানে রি-পোলের নির্দেশ দেয়নি কমিশন। প্রায় ছ'হাজার বুথে অশান্তি হয়েছে। আমরা একটি ব্যালট বক্স পেয়েছি। গত কাল গণনাকেন্দ্র থেকে তা ছুড়ে ফেলা হয়েছিল। আমরা সেটা আদালতে নিয়ে আসতে বলেছি। তার মধ্যে ব্যালট পেপার রয়েছে। এই সমস্ত ঘটনা সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত করা হোক।

গুরু কৃষ্ণ কুমার বলেন, 'কমিশনের কাছে যখন সংবাদ মাধ্যম জানতে চায় গুলি চললো, তখন উনি বলছেন 'কে কোথায় গুলি মারবে সেটা কি আমার দায়িত্ব!'

আইনজীবী তথা বিজেপি নেত্রী প্রিয়াঙ্কা টিবরেওয়াল আদালতের কাছে অভিযোগ করেন, ২০২১ সালের বিধানসভার পর যে হিংসার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল ঠিক একই পরিস্থিতি আবার তৈরি হয়েছে। সাধারণ মানুষ ঘরে থাকতে পারছেন না। ফের আদালতের তত্ত্বাবধানে শান্তি ফেরানোর আর্জি জানান তিনি।

আইনজীবী শ্রীজীব বলেন, 'পুলিশ বলছে, কে কোথায় গুলি চালিয়েছে জানি না। যারা আইন শৃঙ্খলা দেখার দায়িত্বে রয়েছে, তারা যদি এই বলে তাহলে কি পরিস্থিতি আদালত তা অনুমান করতে পারে।'

এডিশনাল এসিস্ট্যান্ট সলিসিটর জেনারেল আদালতকে জানান, কেন্দ্রীয় বাহিনী ব্যাবহারের ক্ষেত্রে যে অভিযোগ উঠেছে তার কারণ কমিশনের অসহযোগিতা। নিরন্তর কমিশন অসহযোগিতা চালিয়ে গেছে। কোনো রকম তথ্য ঠিকঠাক দেওয়া হয়নি।

নির্বাচন এবং গণনার সময়কার বিভিন্ন জায়গার ভিডিও ফুটেজ কমিশনকে সংরক্ষণ করার নির্দেশ প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in