Kolkata: প্রবল বর্ষণে জলমগ্ন কলকাতার সব হাসপাতাল, ভোগান্তি চরমে, আমজনতাকে বাড়িতে থাকার বার্তা মেয়রের

People's Reporter: কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “জন্ম থেকে কলকাতায় আছি। এত বৃষ্টি এর আগে দেখিনি। রাত থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।”
(বাঁদিকে) জলমগ্ন আরজি কর  হাসপাতাল, (ডানদিকে) পরিস্থিতির দিকে নজর মেয়র ফিরহাদ হাকিমের
(বাঁদিকে) জলমগ্ন আরজি কর হাসপাতাল, (ডানদিকে) পরিস্থিতির দিকে নজর মেয়র ফিরহাদ হাকিমেরছবি - সংগৃহীত
Published on

রাতভর প্রবল বর্ষণে কার্যত অচল হয়ে গেছে কলকাতা। মঙ্গলবার সকালে শহরের প্রায় সব হাসপাতালেই দেখা গেল জলমগ্ন চিত্র। চিকিৎসা পরিষেবা আপাতত সচল থাকলেও সমস্যায় পড়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বাস ও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হওয়ায় অনেকেই সঠিক সময়ে হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননি। ফলে রাতের ডিউটিতে থাকা কর্মীদেরই কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রোগীদের পরিষেবা বন্ধ হয়নি, তবে নানা অসুবিধা তৈরি হয়েছে।

হাসপাতালগুলির পরিস্থিতি

এসএসকেএম ও ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের ল্যাবরেটরি, এক্স-রে রুমে হাঁটুসমান জল জমে রয়েছে। পাম্প চালিয়ে জল নামানোর চেষ্টা হলেও তেমন সাফল্য মেলেনি। অন্যদিকে, এনআরএস হাসপাতালের সাধারণ ওয়ার্ড ও ইমার্জেন্সি বিভাগে জল না থাকলেও ভেতরের রাস্তায় জল দাঁড়িয়ে আছে। কর্মী সংকট এখানে স্পষ্ট।

এদিকে আরজি কর হাসপাতালের তিনটি প্রধান গেটই জলে ডুবে। পার্কিং, ক্যান্টিন-সহ নিচু অংশগুলো প্লাবিত। পাম্প চালানো হলেও আশপাশে জল জমে থাকায় বারবার জল ঢুকে পড়ছে।  হাসপাতালগুলির বক্তব্য, আশপাশের এলাকা জলমগ্ন থাকায় জল বার করার চেষ্টা করা হলেও বিশেষ লাভ হচ্ছে না। ফের জল ঢুকছে নানা অংশ দিয়ে।  বহির্বিভাগ খোলা থাকলেও রোগীর সংখ্যা খুবই কম।

কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় গত রাত থেকে সকাল পর্যন্ত রেকর্ড করা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ -

  • কামডহরি (গড়িয়া): ৩৩২ মিমি

  • যোধপুর পার্ক: ২৮৫ মিমি

  • কালীঘাট: ২৮০.২ মিমি

  • তপসিয়া: ২৭৫ মিমি

  • বালিগঞ্জ: ২৬৪ মিমি

  • চেতলা: ২৬২ মিমি

  • মোমিনপুর: ২৩৪ মিমি

  • চিংড়িঘাটা: ২৩৭ মিমি

  • পামার বাজার: ২১৭ মিমি

  • ধাপা: ২১২ মিমি

  • সিপিটি ক্যানাল: ২০৯.৪ মিমি

  • উল্টোডাঙ্গা: ২০৭ মিমি

  • কুঁদঘাট: ২০৩.৪ মিমি

  • পাগলাডাঙা (ট্যাংরা): ২০১ মিমি

  • কুলিয়া (ট্যাংরা): ১৯৬ মিমি

  • ঠনঠনিয়া: ১৯৫ মিমি

কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, “জন্ম থেকে কলকাতায় আছি। এত বৃষ্টি এর আগে দেখিনি। রাত থেকে ৩০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হয়েছে।”

মেয়র জানান, গঙ্গায় জলস্তর বাড়ায় এবং খালগুলিও ভরে যাওয়ায় ড্রেনেজ ব্যবস্থায় ব্যাকফ্লো হচ্ছে। ফলে পাম্প চালিয়েও জল নামছে না। কলকাতার পাম্পিং স্টেশনগুলি ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২০ মিমি জল তুলতে পারে, কিন্তু এক রাতেই ৩০০ মিমি বৃষ্টি হওয়ায় সময় লাগছে। দুপুর দেড়টার পর গঙ্গায় জোয়ার নামলে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেছেন তিনি।

সতর্কবার্তায় মেয়রের অনুরোধ, “আজ যতটা সম্ভব বাড়ি থেকে বেরোবেন না।” তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই কয়েকজন বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন। যদিও তাঁর দাবি, পুরসভা আগেই রাস্তায় লাইট বন্ধ করেছিল। অন্য কোনও কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সব মিলিয়ে, কলকাতা শহর মঙ্গলবার সকালেও জলমগ্ন। হাসপাতাল থেকে রাস্তাঘাট—সব জায়গায় ভোগান্তির ছবি স্পষ্ট। তবু ডাক্তার, নার্স ও কর্মীদের অক্লান্ত প্রচেষ্টায় চিকিৎসা পরিষেবা আপাতত সচল রাখা সম্ভব হয়েছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in