
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠান চলাকালীন রাত ১০ টা ২০ নাগাদ চার নম্বর গেটের কাছে ছাত্র ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন পুকুর থেকে উদ্ধার হল এক ছাত্রীর দেহ। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। বিশ্ববিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিষয়ের স্নাতক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী তিনি। মৃত্যুর কারণ এখনও স্পষ্ট নয়। তদন্ত শুরু করেছে যাদবপুর থানার পুলিশ। খতিয়ে দেখা হচ্ছে তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যেয় চার নম্বর গেটের কাছে গৌর দাস বাউল ও তাঁর দলকে নিয়ে ‘ড্রামা ক্লাব’ একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া এবং প্রাক্তনীরা। জানা গেছে, রাত ১০টা ২০ নাগাদ নজরে পড়ে কলা বিভাগের ছাত্র ইউনিয়ন রুম সংলগ্ন পুকুরে কেউ ভাসছেন। অচৈতন্য অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করা হলে জানা যায়, বিশ্বিদ্যালয়েরই ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। নাম অনামিকা মণ্ডল। বেলঘড়িয়ার নিমতা এলাকায় বাড়ি তাঁর।
উদ্ধারের পর বেশ কিছুক্ষণ সিপিআর ও জল বার করার চেষ্টা করেন পড়ুয়ারা। এরপরে কেপিসি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা দেহ পরীক্ষা করে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। জানা গেছে, দেহ পাঠানো হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য। কী ভাবে তাঁর মৃত্যু হল, এখনও স্পষ্ট নয়। আপাতত অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রজু করে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। নজর রাখা হচ্ছে চার নম্বর গেটের তিনটি সিসিটিভি ক্যামেরার দিকে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে পারে ফরেন্সিক দল।
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চার নম্বর গেটে ঢুকেই বাঁ দিকে কলা বিভাগের বিল্ডিং। সেখানেই ইংরেজি বিভাগ। ওই বিভাগের মুখোমুখি রয়েছে একটি সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া সিকিউরিটি রুমের কাছে একটি সিসি ক্যামেরা রয়েছে এবং কলা বিভাগের দিকে রয়েছে আরও একটি সিসি ক্যামেরা। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে কিছু হয়ে থাকলে, তা এই সমস্ত ক্যামেরায় ধরা পড়ে থাকতে পারে।
সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার কলা বিভাগের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন অনামিকা। ওই ইউনিয়ন রুমের পাশে পুকুড়পাড়ের ধারে রয়েছে একটি সরু রাস্তা। তার শেষ প্রান্তে রয়েছে দু’টি শৌচাগার। অনামিকা সে দিকে গিয়েছিলেন কি না, যেতে গিয়ে পুকুরে পড়ে গিয়েছেন কি না, খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে তাঁর পরিবারের তরফে এখনও কিছু জানানো হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের তরফেও এখনও কোনও বক্তব্য দেওয়া হয়নি।
যদিও কেন অত রাত অবধি অনুষ্ঠানের অনুমতি দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে। ছাত্র পরিষদের সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। দু’বছর আগে স্বপ্নদীপের মৃত্যু দেখেছি, আজ আবার একজন। ক্যাম্পাসে সিসিটিভি লাগানো ও স্থায়ী পুলিশ পোস্টিং আমাদের বরাবরের দাবি। এইগুলো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। যারা সিসিটিভি লাগানো ও পুলিশ পোস্টিং-এর বিরুদ্ধে, তারা এর দায়ভার এড়াতে পারে না। আর যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে স্থায়ী উপাচার্যের অভাবে কাজকর্ম বিঘ্নিত হচ্ছে। আমরা অবিলম্বে মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারা মনোনীত স্থায়ী উপাচার্য চাই।’’
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা যাদবপুরের প্রাক্তনী সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘এই ঘটনায় প্রাক্তনী হিসেবে আমি স্তম্ভিত। এই মুহূর্তে রাজনৈতিক কচকচানির মতো মানসিকতা তৃণমূলের পক্ষেই দেখানো সম্ভব।’’ তৃণমূলের তোলা প্রশ্নের জবাবে সৃজন বলেন, ‘‘আরজি করে তো সিসিটিভি ছিল। তা হলে তিলোত্তমাকে কেন মরতে হল? দক্ষিণ কলকাতার আইনের কলেজে তো বামপন্থীরা নেই, সেখানে ওই ঘটনা ঘটল কেন?’’
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে আগস্ট মাসে যাদবপুরের বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে রহস্য তৈরি হয়। অভিযোগ উঠেছিল, মেন হোস্টেলে র্যাগিংয়ের শিকার হয়েছিলেন তিনি। এরপর তিন তলার বারান্দা থেকে পড়ে মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার পর ক্যাম্পাস চত্বরে বসে অতিরিক্ত সিসি ক্যামেরা। তবে পড়ুয়াদের একাংশের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশের সময় আই-কার্ড এখনও যাচাই করা হয় না।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন