
প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলার নয়া মোড়। ছয় বছর ধরে বঞ্চিত এমন ২৩ জন টেট চাকরিপ্রার্থীকে আগামী ২৩ দিনের মধ্যে শিক্ষক পদে নিয়োগ করার নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
সোমবার, উচ্চ আদালতের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গেল বেঞ্চে এই মামলার শুনানি ছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের স্পষ্ট নির্দেশ - শূন্যপদ না থাকলেও, প্রয়োজনে শূন্যপদ তৈরি করে ২৩ জন মামলাকারীকে চাকরি দিতে হবে। শুধু তাই নয়, তাঁরা চাকরি পেয়েছেন কিনা, সেটা পরবর্তী শুনানির দিন আদালতকে জানাতে হবে।
২০১৪ সালের প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক নিয়োগের টেট পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন সোহম রায়চৌধুরী সহ ২৩ জন পরীক্ষার্থী। ফলপ্রকাশ হয়েছিল ২০১৬ সালে। ফলপ্রকাশের পর দেখা যায় তাঁরা সকলেই অসফল হয়েছেন। সেই কারণেই তাঁদের নিয়োগ করা হয়নি। অথচ সোহমদের দাবি, ৬টি প্রশ্ন ভুল থাকার কারণে তাঁরা উত্তীর্ণ হতে পারেননি। এমনকি, তাঁদের জায়গায় সেই সময় প্রশিক্ষিত নন এমন অনেকেই চাকরি পেয়েছেন বলে অভিযোগ।
কিন্তু ঘটনাচক্রে, সেই সময় প্রশ্ন ভুল থাকার কারণে আদালতে আরও একটি মামলা দায়ের হয়েছিল। কয়েকজন মামলাকারীকে বাড়তি নম্বর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সেই নির্দেশকে হাতিয়ার করেই বাড়তি নম্বরের আশায় আদালতে মামলা করেন সোহমরা।
টেটের প্রশ্ন ভুল থাকার কারণে ২০২০ সালের নভেম্বর মাসে মামলাকারীদের বাড়তি নম্বর দেওয়া যায় কিনা, তা পর্ষদকে বিবেচনা করতে বলে হাইকোর্ট। ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে সোহম সহ ২৩ জন চাকরিপ্রার্থীদের বাড়তি ৬ নম্বর দেয় পর্ষদ। যার ফলে টেট উত্তীর্ণ হন তাঁরা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাঁদের চাকরিতে নিয়োগ করা হয়নি বলেই অভিযোগ।
এ প্রসঙ্গে মামলাকারীদের আইনজীবী সুদীপ্ত দাশগুপ্তের বক্তব্য, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নন এমন অনেকে যদি চাকরি পান, তবে এই মামলাকারীরাও চাকরি পাওয়ার যোগ্য। কারণ, এক দিকে, সোহমরা প্রশিক্ষিত চাকরিপ্রার্থী। অন্য দিকে, বাড়তি নম্বর পাওয়ার ফলে তাঁরা টেট উত্তীর্ণ।
তবে পর্ষদের পাল্টা বক্তব্য, ভুল হয়েছে ঠিকই। কিন্তু এই মুহূর্তে তাদের কাছে শূন্যপদের তালিকা নেই। তাই এখনও ২৩ জনকে নিয়োগ করা যায়নি। রাজ্য শূন্যপদ জানালে নিয়োগ করা হবে তাঁদের।
পর্ষদের এই যুক্তি আদালতের আছে কোনওভাবেই গ্রহণযোগ্য হয়নি। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, দীর্ঘ ছয় বছর ধরে এই ২৩ জন বঞ্চিত হয়েছেন। তাই আর সময় দেওয়া সম্ভব নয়। প্রয়োজনে ভবিষ্যতের জন্য থাকা শূন্যপদ থেকে নিয়োগ দিতে হবে। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এই ২৩ জন উত্তীর্ণ প্রার্থীকে অবিলম্বে চাকরিতে নিয়োগের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন