
বিয়ের টোপ দিয়ে ধর্ষণ, প্রতারণা, মারপিট - কসবা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত 'এম' তথা শাসক দলের প্রভাবশালী ছাত্রনেতার বিরুদ্ধে রয়েছে ভুরি ভুরি অভিযোগ। ইতিমধ্যেই সে সমস্ত প্রকাশ্যে এসেছে। এবার 'এম'-এর কাণ্ডকারখানা প্রকাশ করল তারই পুরোনো 'বন্ধু' তথা সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজের আর এক প্রাক্তনী তিতাস মান্না।
২০১২ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ কলকাতার ল কলেজেরই আইনের ছাত্র ছিলেন ৩১ বছর বয়সী 'এম'। তিতাসও তাঁর সঙ্গেই কলেজে ভর্তি হন। তিতাস জানিয়েছেন, কলেজে প্রবেশের এক বছরের মধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছিল 'এম'-র দাদাগিরি। ২০১৩ সালে চেতলা ব্রিজের উপর কেটারিংয়ের কর্মীদের আঙুল কেটে দেওয়া এবং মারধরের জন্য তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ঘটনার পর প্রায় দু'বছর গা-ঢাকা দিয়েছিলেন 'এম'।
ওই মামলাটি নিষ্পত্তি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ফের কলেজে যোগদান করেন 'এম'। ২০১৭ সালে রাজনীতিতে ফিরে আসার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেই সময় 'এম'-এর অপরাধের কারণে তৃণমূল থেকে তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়। তিতাস জানিয়েছেন, "তৃণমূলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল, 'এম' কলেজে আসতে পারেন, ক্লাসে যোগ দিতে পারেন তবে ছাত্র ইউনিয়নে থাকতে দেওয়া হবে না"।
এরপর ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে বহিরাগত গুন্ডাবাহিনী নিয়ে এসে কলেজে ভাঙচুর চালান ‘এম’। বেশ কয়েক মাস এই নিয়ে থানাপুলিশ চলে। গড়িয়াহাট থানা এফআইআর করে তদন্তে নামলেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে অভিযোগ। শেষমেশ নানা কসরত করে ২০১৭ সালে পুনরায় ওই কলেজেরই প্রথম বর্ষে ভর্তি হন ‘এম’। তিতাসের দাবি, ২০১৭ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ধর্ষণ, র্যাগিং, তোলাবাজি, গুন্ডামি থেকে শুরু করে নানা কীর্তিকলাপ রয়েছে ‘এম’-র। কখনও তা প্রকাশ্যে এসেছে, আবার কখনও ধামাচাপা পড়ে গেছে।
সহপাঠীর কথায়, ২০১৮ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত ফের ‘এম’-কে এক বছরের জন্য কলেজ থেকে বহিষ্কার করা হয়। এরপরেও নানা ঘটনা ঘটিয়েছেন তিনি। যার মধ্যে অন্যতম মেয়েদের উতক্ত্য করা। ২০১৯ এবং ২০২২ সালে তার বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানির মামলাও হয়েছে। ২০২৩ সাল থেকে ফের কলেজে দাপট বাড়ে তার। নিজেকেই সংগঠনের ইউনিট প্রেসিডেন্ট দাবি করে কলেজে দাদাগিরি শুরু করেন। তিতাসের দাবি, ক্যাম্পাস জুড়ে তার আতঙ্ক ছিল।
তৃণমূল কোনও দিন এই কলেজে 'এম'-কে কোনও পদ দেয়নি। তারপরেও কলেজ জুড়ে চলত তার দাপট। সহপাঠীর দাবি, কলেজে একাধিকবার একাধিক মেয়েকে হেনস্থা করার চেষ্টা করেছেন 'এম'। ইমপ্রেস করতে চিরাচরিত ওয়ান লাইনার ব্যবহার করতেন তিনি - 'তুই আমায় বিয়ে করবি?'। এমনকি একাধিক মেয়েদের ছবি বিকৃত করে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করতেন। যে মহিলাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন করতেন, তাঁদের গোপন ভিডিও তুলে বন্ধুদের পাঠাতেন। বিভিন্ন গ্রুপে সেই সমস্ত ভিডিও পোস্ট করে মেয়েদের বডি শেমিং করতেন 'এম' এবং তাঁর সঙ্গীরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন