জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ছবি থাকলেই ঘনিষ্ঠ হয় না - ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে দিলীপকে তোপ ফিরহাদের

তড়িঘড়ি তৃণমূলের পক্ষ থেকে কসবা ভ্যাকসিন কাণ্ডের অন্যতম নায়ক দেবাঞ্জনের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধী রাজনীতিকরাও আদা জল খেয়ে নেমেছে ভ্যাকসিন কাণ্ডের শেষ দেখতে।
তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের সঙ্গে দেবাঞ্জন দেব
তৃণমূল সাংসদ শান্তনু সেনের সঙ্গে দেবাঞ্জন দেবছবি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত
Published on

প্রথমে কালো রঙ দিয়ে ঢেকে দেবার পর গতকালই তালতলায় দ্রুততার সঙ্গে ভেঙে ফেলা হয়েছে ভুয়ো ভ্যাকসিন কান্ডে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের নামফলক। যেখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মূর্তির নীচে একাধিক তৃণমূল নেতা মন্ত্রীর সঙ্গে নাম ছিলো দেবাঞ্জন দেবেরও। ঠিক যেভাবে সারদা কাণ্ডে নাম জড়িয়েছিলো একাধিক তৃণমূল নেতা নেত্রীর এবার কসবা ভ্যাকসিন কাণ্ডেও নাম জড়িয়েছে তৃণমূলের হেভিওয়েট নেতা মন্ত্রীদের।

তড়িঘড়ি তৃণমূলের পক্ষ থেকে কসবা ভ্যাকসিন কাণ্ডের অন্যতম নায়ক দেবাঞ্জনের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক অস্বীকার করা হয়েছে। কিন্তু বিরোধী রাজনীতিকরাও আদা জল খেয়ে নেমেছে ভ্যাকসিন কাণ্ডের শেষ দেখতে। বিজেপির একের পর তির্যক বাক্যবাণ ধেয়ে আসছে শাসক শিবিরের দিকে। শুক্রবার তারই পাল্টা তোপ দেগেছেন রাজ্যের মন্ত্রী তথা কলকাতা পুরসভায় প্রশাসক মন্ডলীর মুখ্য প্রশাসক ফিরহাদ হাকিম।

কসবা ভ্যাকসিন কাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত ভুয়ো আই এ এস দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে পৌরসভার বর্তমান প্রশাসক মন্ডলীর চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিমের ছবিকে কেন্দ্র করে, পদত্যাগ দাবি করেছেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। বিজেপি রাজ্য সভাপতির সেই মন্তব্যের পাল্টা মন্তব্য করেন ফিরহাদ। এ প্রসঙ্গে ফিরহাদ বলেন, 'জনপ্রতিনিধিদের আশপাশে থাকা লোকের সঙ্গে ছবি থাকলেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকবে এমন কোন কথা নেই। কোন মানুষ কি ধরনের, কে বা কারা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত তা দেখার দায়িত্ব পুলিশ প্রশাসনের। জনগণের স্বার্থে কাজ করি আমরা, কখনোই পুলিশের কাজ করতে পারি না। আইন আইনের পথে চলবে। দোষী সাব্যস্ত হলে তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে।' ফিরহাদ এদিন দিলীপ ঘোষকে উদ্দেশ্য করে পাল্টা বলেন, 'মেহুল চোকসি সহ আর্থিক তছরুপের সঙ্গে যুক্ত অনেকের সঙ্গে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি দেখা গিয়েছে। দিলীপবাবু প্রথমে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির পদত্যাগ দাবি করুন।'

ফিরহাদ হাকিমের পথে হেঁটেই ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে অভিযুক্ত দেবাঞ্জন দেবের সঙ্গে কলকাতা পুরসভা বা পুর প্রতিনিধিদের যোগের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন পুর প্রশাসক মন্ডলীর সদস্য তথা বিধায়ক অতীন ঘোষ। গতকাল সকাল থেকেই শাসক দলের নেতা-মন্ত্রী ও কলকাতা পুর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে দেবাঞ্জন দেবকে দেখা গিয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন বিজেপি নেতৃত্ব। তালতলায় একটি ফলকে ফিরহাদ হাকিম, অতীন ঘোষ, তাপস রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় ও নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামের সঙ্গে একই সঙ্গে দেবাঞ্জন দেবের নাম থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বে।

রবীন্দ্রনাথের মূর্তি উন্মোচনের ওই ফলকে দেবাঞ্জন দেবের নামের পাশে লেখা ছিল যুগ্ম সচিব, পশ্চিমবঙ্গ সরকার। সেই ফলকের ছবি ভাইরাল করেই এদিন সকাল থেকে সুর চড়ান বিরোধীরা। কিন্তু বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে অতীন ঘোষ জানিয়ে দেন, ওই ফলক পুরসভার তরফে বসানো হয়নি। এমনকী, ওই অনুষ্ঠানেও তিনি বা ফিরহাদ হাকিম, কেউই উপস্থিত ছিলেন না। গতকালই তড়িঘড়ি মিস্ত্রি ডেকে ওই ফলকটি ভেঙে ফেলা হয়।

তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের নামের সঙ্গে একই ফলকে দেবাঞ্জন দেবের নাম থাকা প্রসঙ্গে অতীন ঘোষ জানান, ‘চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি তালতলার রাস্তায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি মূর্তি উদ্বোধন হয়। তাতেই লাগানো হয় ফলকটি। তিনি বলেন, ‘শহরের বিভিন্ন জায়গায় এমন বহু ফলক লাগানো হয়। সেক্ষেত্রে কে বা কারা ফলক লাগিয়েছেন, অনেক সময়ই তা নজরে রাখা সম্ভব হয় না। তালতলার রবীন্দ্র ফলক উদ্বোধনের ঘটনাও ঠিক একই রকম।’ এই ভুয়ো ফলক লাগানোর ঘটনায় ইতিমধ্যেই তালতলা থানায় দেবাঞ্জনের দেবের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন নয়না বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিকে, ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডের নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে শুক্রবার বিকালে স্বাস্থ্যভবনে গিয়ে স্বাস্থ্যসচিবের সঙ্গে দেখা করেন শুভেন্দু অধিকারী।

ভুয়ো ভ্যাকসিন কাণ্ডে নাম জড়ানোর পর তৃণমূলের রাজ্য সভার সাংসদ শান্তনু সেন ও বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় নিজেদের লেটার হেডে কলকাতা পুলিশের নগরপাল সৌমেন মিত্রকে চিঠি দিয়ে দেবঞ্জনের সঙ্গে সমস্ত রকমের যোগ উড়িয়েছেন। চিঠিতে তাঁরা স্পষ্ট উল্লেখ করেছেন, এই নামের কোনো ব্যাক্তির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ ছিলো না। তালতলার ওই ফলকে তাঁদের যে নাম ব্যাবহার করা হয়ে ছিলো সেই অনুষ্ঠানেও তারা কেউ উপস্থিত ছিলেন না।

পাশাপাশি সৌমেন মিত্রের কাছে ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানান। একই সঙ্গে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কড়া শাস্তির আর্জি জানান। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাস্তার ওপরে জ্বলজ্বল করে থাকা ফলকে নিজেদের নাম কি ভাবে তৃণমূলের নেতা মন্ত্রীদের অগোচরে হল তা নিয়ে সন্দেহ দানা বাঁধছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in