
কসবার করোনার ভুয়ো টিকাকরণ কেন্দ্রের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত আছেন তৃণমূল নেতারা। এমনটাই সন্দেহ করছেন তদন্তকারী গোয়েন্দারা। তাঁদের অনুমান, প্রথম সারির তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে রাজ্যের সরকারি স্টোর থেকে টিকা হাতিয়েছিলেন দেবাঞ্জন দেব। লালবাজার সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতের অফিসে তল্লাশি চালিয়ে জাল নথিপত্র-সহ স্বাস্থ্য ভবন থেকে করোনা টিকার রিকুইজিশন ফর্মও বাজেয়াপ্ত করেছে। বৃহস্পতিবার এই ঘটনার তদন্তভার কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে যায়। তদন্ত প্রক্রিয়া যত এগিয়েছে, ততই একদিকে ধৃতের বিরুদ্ধে নানা প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড সামনে আসছে।
অন্যদিকে, তার সঙ্গে তৃণমূলের প্রথম সারির নেতাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কথা জানা যাচ্ছে। দেবাঞ্জনের সঙ্গে একাধিক তৃণমূল নেতার ছবিও প্রকাশ্যে এসেছে। ২০১৯ সালের গগনেন্দ্র প্রদর্শনালয়ে একটি চিত্র প্রদর্শনীতে এক মঞ্চে দেখা গিয়েছিল বিধায়ক দেবাশীষ কুমার, রাজ্যে তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, কলকাতা কর্পোরেশনের বোরো কো-অর্ডিনেটর সুশান্ত ঘোষ ঘোষকে। তাঁদের সামনে নিজেকে আইএএস বলে পরিচয় দিয়েছিলেন দেবাঞ্জন। তাঁকে দেখা গিয়েছে সুব্রত মুখোপাধ্যায় সঙ্গেও।
এছাড়া রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকের সঙ্গে একটি অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে ফিতে কাটার ছবিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পাওয়া যায়। তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের সঙ্গেও তাঁকে বেশ কয়েকটি ছবিতে দেখতে পাওয়া যায়। তিনি বর্তমানে কলকাতা পুরসভার কোভিড কমিটির উপদেষ্টা। কয়েক মাস আগে কলকাতা পুরসভায় তাঁর সঙ্গেই দেবাঞ্জন এসে প্রশাসক ফিরহাদ হাকিমের হাতে মাস্ক, স্যানিটাইজার তুলে দিয়ে যান। সম্প্রতি কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ি গিয়ে তিনি মাস্ক, স্যানিটাইজার তুলে দেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, আমহার্স্ট স্ট্রিট সিটি কলেজের ৭২ জন ছাত্র-ছাত্রীদের টিকাকরণ হয় এই দেবাঞ্জনের উদ্যোগে। তাঁদের মধ্যে তিনজনকে দেওয়া হয় স্পুটনিক ভি। যেখানে মাত্র কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে স্পুটনিক ভি দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে, সেখানে কলেজ পড়ুয়ারা কী করে পেলেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই শিবিরের মূল উদ্যোক্তা কলেজের প্রাক্তন টিএমসিপি নেতা ইন্দ্রজিৎ সরকার। শিবিরে দেবাঞ্জনের সঙ্গে সুস্মিতা ব্যানার্জি নামে এক মহিলা উপস্থিত ছিলেন, তিনি ডাবলু বিসিএস অফিসার পরিচয় দেন নিজের। পাশাপাশি দেবাঞ্জন কয়েকজনকে কলকাতা করপোরেশনে চাকরির নিয়োগপত্র দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন