
পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি হচ্ছেন শমীক ভট্টাচার্য (Shamik Bhattacharya)। বুধবারই তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় বিজেপির নিযুক্ত নির্বাচনী আধিকারিক রবিশঙ্কর প্রসাদ। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানে ডাক মেলেনি রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ (Dilip Ghosh)-এর। এমনকি রাজ্য সভাপতি নির্বাচনের গোটা প্রক্রিয়া থেকেই দূরে ছিলেন দিলীপ। যা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে দলের অন্দরেই। তিনি ছাড়াও আজকের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানান হয়নি আর এক প্রাক্তন সভাপতি তথাগত রায়কেও।
এবিষয়ে এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে দিলীপ ঘোষ জানিয়েছেন, "এই অনুষ্ঠানে আমি যাচ্ছি না, কারণ আমাকে আলাদা করে কোনও খবর দেওয়া হয়নি। আমি সভাপতি নির্বাচনের ভোটার নই। যাঁরা প্রদেশ পরিষদ সদস্য, তাঁরাই ভোটার। আজকের অনুষ্ঠানেও তাঁদেরই ডাকা হয়েছে। তার সঙ্গে আরও কয়েক জন ডাক পেয়েছেন। আমার ওখানে যাওয়ার কথাও নয়"।
তথাগত রায় জানিয়েছেন, আমন্ত্রিত থাকলেও তিনি যেতে পারতেন না। কারণ তাঁর জ্বর। শমীক বাবু নিজে তাঁকে ফোন করেছিলেন সেকথাও জানিয়েছেন তিনি।
বুধবার সভাপতি পদের জন্য মনোনয়ন জমা দেওয়া এবং স্ক্রুটিনির কাজ হয়েছে সল্টলেকের বিজেপির দফতরে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের সদ্য প্রাক্তন সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। শুধু একটিই বৈধ মনোনয়ন জমা এবং গৃহীত হয়েছিল, যা শমীক ভট্টাচার্যর। তার ভিত্তিতেই নতুন সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। বৃহস্পতিবার তাঁর হাতে শংসাপত্র তুলে দিয়েছেন রবিশঙ্কর প্রসাদ।
দিলীপ ঘোষ কেন নেই? এবিষয়ে বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব কিছু না বললেও সূত্রের খবর, সাম্প্রতিক কালে দিলীপকে কোনও দলীয় কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না। কারণ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা চাইছেন না। সেই নির্দেশ মেনেই আপাতত তাঁকে দলের কোনও কর্মসূচিতে ডাকা হচ্ছে না।
দীঘায় জগন্নাথ মন্দিরে সস্ত্রীক উপস্থিত হয়ে কার্যত দলের রোষের মুখে পড়েছিলেন দিলীপ। এছাড়া প্রকাশ্যে একাধিকবার ‘আদি-নব্য’ দ্বন্দ্ব উস্কে দিয়ে তিনি অনেকেরই বিরাগভাজন হয়েছেন। পর পর এই ঘটনা দলের সঙ্গে তাঁর দূরত্ব বাড়িয়েছে। জগন্নাথ মন্দিরে যাওয়ার পর রাজ্য বিজেপির প্রথম বড় বৈঠক ছিল ৬ মে। রাজ্য দফতরে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির গুরুত্বপূর্ণ নেতা-নেত্রীকে ডেকে পাঠিয়ে সে দিন প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কথা বলেছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকেরা। বৈঠকে ডাক পেয়েছিলেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দুই সংগঠন সম্পাদক, পাঁচ সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা। এমনকি, প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহাও ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু ডাক পাননি দিলীপ ঘোষ।
এর পরের দিন বিধাননগরের সেক্টর ফাইভে একটি হোটেলে বিজেপির আরও বড় বৈঠক বসে। সেখানে রাজ্য পদাধিকারীরা এবং জেলা সভাপতিরা ডাক পান। প্রত্যেক জেলা থেকে আরও তিন জন করে প্রতিনিধিকে ডাকা হয়েছিল। দিলীপকে সেখানেও দেখা যায়নি। অনেকে বলছেন, দিলীপ যেহেতু রাজ্যের পদাধিকারী নন, তাই ডাকা হয়নি।
এরপর গত ২৯ মে আলিপুরদুয়ারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভাতেও দেখা যায়নি দিলীপ ঘোষকে। জুন মাসে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সভাতেও ছিলেন না তিনি।
অনেকের মতে, পদাধিকারী না হওয়ায় তাঁকে আর ডাকা হচ্ছে না। তবে কেন নেই দিলীপ ঘোষ, তা নিয়ে সকলের মনে কৌতূহল তৈরি হয়েছে। তাহলে কী নতুন দল গড়ছেন দিলীপ? এদিন সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, "মানুষকে জায়গায় শিবের ডুগডুগি বাজাচ্ছি। সংগঠনের কাজেই আছি। ব্যারাকে আছি, বাজনা বাজালেই যুদ্ধে নেমে পড়ব"।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন