২০১৮ সালের মার্চ মাসে একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভুয়ো নথি দিয়ে ৫১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ব্যবসায়ী কৌস্তভ রায়কে গ্রেফতার করেছিল সিবিআই। সেই ব্যাক্তিকে কিভাবে রাজ্য সরকারের কর্মসূচী পর্যবেক্ষণ কমিটির মাথায় বসানো হয়েছে, তা নিয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে মুখ্যসচিব এইচ কে দ্বিবেদীকে তলব করেছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
প্রসঙ্গত, গত ৯ মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় রাজ্যের প্রোগ্রামিং মনিটরিং কমিটির দপ্তরের পক্ষ থেকে। এই দপ্তরের দায়িত্বে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই। সেই দপ্তরের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজ্য সরকারের কল্যাণ এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলির পরিকল্পনা ও পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে কৌস্তভ রায়কে। শুধু উন্নয়নমূলক কাজই নয়, রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার সাথে জড়িত পুলিশের কাজও দেখাশোনা করবে কৌস্তুভ রায় নেতৃত্বাধীন কমিটি। মাসে একবার বৈঠকে বসবে এই কমিটি।
যদিও সরকারী বিজ্ঞপ্তিতে কৌস্তভ রায়ের পরিচয় উল্লেখ করা নেই। তবে, এই কৌস্তভ রায় বলতে যে শাসক ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী কৌস্তভ রায়কে বোঝানো হয়েছে তা বুঝতে অসুবিধা হয়নি কারও। এক বেসরকারী নিউজ চ্যানেলের মালিক কৌস্তভ রায়। এছাড়াও কম্পিউটার, সফটওয়্যার সহ একাধিক ব্যবসা রয়েছে তাঁর। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক সহ একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে ভুয়ো নথি দিয়ে ৫১৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে সিবিআই গ্রেফতার করে তাঁকে। বর্তমানে তিনি জামিনে মুক্তি পেলেও এই মামলা এখনও বিচারাধীন। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের 'সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স' অস্বীকার করায় আইবি মন্ত্রক থেকে লাইসেন্স বাতিলের সতর্কতা পেয়েছিল তাঁর নিউজ চ্যানেল। সম্প্রতি খুন হওয়া ছাত্রনেতা আনিস খানের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিনিধি হিসেবে টাকা এবং চাকরির প্রস্তাব নিয়ে গিয়েও বিতর্কে জড়িয়েছেন কৌস্তভ রায়।
এরকম একজনকে সরকারী কমিটির মাথায় বসানোয় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের রাজনৈতিক মহলে। এই প্রসঙ্গে সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন - বর্তমান শাসক দলের আমলে সরকারী ব্যবস্থা ক্রমশ কলুষিত হচ্ছে। সরকারের উন্নয়নমূলক প্রকল্প দেখার জন্য আইএএস অফিসারেরা আছেন। এ বার এই আইএএস অফিসারদের আর্থিক দুর্নীতিতে অভিযুক্ত একজন জেল-খাটা লোকের কথা শুনতে হবে! সরকারি আধিকারিদের কাছে এর চেয়ে লজ্জার আর কী থাকতে পারে?
কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নানের কথায়, জনমানসে লাগাতার কোণঠাসা হওয়ার কারণে, মুখ্যমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করে টিকে থাকতে চাইছেন। সংবাদমাধ্যমের কর্ণধারকে সরকারি কমিটির মাথায় বসালে সংবাদমাধ্যমকে হাতে রাখতে সুবিধা হয়।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন