
খিদিরপুর বাজার বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জমি হাঙরদের কাছে যেন চলে না যায়! এই নিয়ে স্থানীয়দের সতর্ক করলেন সিপিআইএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পাশাপাশি, এই ঐতিহ্যপূর্ণ বাজারকে বাঁচাতে সবাইকে একজোট হয়ে থাকার আবেদন করেন তিনি। সেলিমের অভিযোগ, মুখ্যমন্ত্রী এবং প্রশাসনের আচরণ যথেষ্ট সন্দেহজনক।
সোমবার সন্ধ্যায় খিদিরপুর অরফ্যানগঞ্জ অগ্নিদগ্ধ মার্কেট পরিদর্শনে যান মহম্মদ সেলিম। তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিআইএমের রাজ্য কমিটির সদস্য ফৈয়াজ আহমেদ খান-সহ দলের স্থানীয় নেতৃত্ববৃন্দ। সেখানে গিয়ে এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সরকার ও কলকাতা পুরসভার মনোভাব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন সেলিম।
সেলিম বলেন, "ঘর পোড়া গরু, তাই ওঁদের মনোভাব নিয়ে সন্দেহ হওয়াটাই স্বাভাবিক। বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রী দোকান সরানোর যে ইঙ্গিত দিয়েছেন, তা উদ্বেগজনক। এই মূল্যবান এলাকার জমি যাতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে জমি হাঙরদের দখলে না চলে যায় তা দেখতে হবে"।
ব্রিটিশ আমলে খিদিরপুর বাজারের ঐতিহ্যের কথা উল্লেখ করে সেলিম বলেন, "এখন এই এলাকার জমিতে টাকার কুমির বড় বড় সংস্থার নজর পড়তে পারে। খিদিরপুর মেট্রো স্টেশন হলে এখানকার জমি আরও দামি হয়ে উঠবে। অতীতের অভিজ্ঞতা ভালো নয়, আলিপুরের জমি, বিজি প্রেসের জমি, ধর্মতলার ট্রাম বন্ধ করে ট্রাম গুমটির জমি - সবই এই সরকার আর পুরসভা মিলে বড় বাণিজ্যিক সংস্থাকে তুলে দিতে চাইছে"।
এখানেই শেষ নয়। সেলিমের অভিযোগ, "কলকাতার অনেক বস্তি ও বাজারের জমির দখল এভাবে তুলে দিতে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। তাই খিদিরপুরের ঘটনা নিয়েও সন্দেহ স্বাভাবিক। বিজেপি যেভাবে অন্য রাজ্যে প্রাইম ল্যান্ডকে মানিটাইজ করতে কর্পোরেটের হাতে তুলে দিচ্ছে এবং সেই লক্ষ্যেই ওয়াকফ আইন এনেছে, এরাজ্যেও তৃণমূল সরকার জঙ্গলের জমি, চরের জমি, পাট্টা জমি, সরকারি জমি, জলাভূমি, সবই জমি হাঙরদের লুটের বন্দোবস্ত করে দিচ্ছে"।
রবিবার গভীর রাত ১টা নাগাদ খিদিরপুরের অরফ্যানগঞ্জ মার্কেটে ভয়াবহ আগুন লাগে। ঘিঞ্জি এলাকা হওয়ায় আগুন ছড়িয়ে পড়ে হু হু করে। অল্প সময়ের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যায় একের পর দোকান। স্থানীয়দের দাবি, ওই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের জেরে ১৩০০ বেশি দোকান, স্টল, গুদাম ইত্যাদি পুড়ে গেছে। লোকসান হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। অভিযোগ, ঠিক সময় দমকল এলে এবং আগুন নেভাতে তৎপর হলে ক্ষতি কিছুটা আটকানো যেত। যদিও দমকল মন্ত্রী সুজিত বসুর দাবি, রাতের আগুনে ৪০০টি দোকান ভস্মীভূত হয়েছে।
সোমবার সকালেই দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সরকারের তরফ থেকে নতুন বাজার তৈরি করে দেওয়ার কথা জানান। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আপাতত অস্থায়ীভাবে দোকানদাররা বসবেন। এরপর নতুন বাজার তৈরি হলে তাঁদের পুরানো জায়গায় ফিরিয়ে আনা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের আশ্বস্ত করে মমতা বলেন, নতুন বাজার তৈরি করতে দোকানদারদের কোনও টাকা খরচ করতে হবে না। পুরো কাজটাই করবে সরকার।
পাশাপাশি, যাঁদের দোকান পুরোপুরি ভস্মীভূত হয়েছে তাঁদের ১ লক্ষ টাকা এবং আংশিকদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন তিনি। তবে অস্থায়ী জায়গায় দোকান সরানো হলেই এই টাকা পাবেন বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু কোটি কোটি টাকার ওপরে যেখানে লোকসান হয়েছে, তার বদলে ১ লক্ষ টাকা! কী করে সপরিবারে তিন মাস চালানো যাবে তা নিয়ে সংশয়ে ব্যবসায়ীরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন