
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু এবং আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের ঘটনায় তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের বিরুদ্ধে রুল জারি করল হাইকোর্ট। কুণাল ছাড়াও রুল জারি করা হয়েছে উচ্চ প্রাথমিকের বিক্ষোভকারী সাতজন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে।
সুপার নিউমেরারি পোস্ট সংক্রান্ত মামলার শুনানি কেন দ্রুত হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে হেনস্থার অভিযোগ ওঠে চাকরিপ্রার্থীদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসুর বিরুদ্ধেও আপত্তিকর মন্তব্য এবং স্লোগান দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন হাই কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের কয়েক জন আইনজীবী। বিচারপতি বসুর বিরুদ্ধে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন, এই অভিযোগে কুণালের বিরুদ্ধেও আদালত অবমাননার মামলা দায়ের হয়। অভিযোগ জানানো মাত্রই প্রধান বিচারপতি স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে মামলা গ্রহণ করেন। পরে মামলাটি বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজে বেঞ্চে পাঠান তিনি।
এর আগের শুনানিতে তিন বিচারপতির বেঞ্চ অভিযুক্তদের কাছে কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে রিপোর্ট তলব করেছিল। কিন্তু কোনও পক্ষের তরফ থেকেই রিপোর্ট পেশ করা হয়নি। যার ফলে ক্ষুব্ধ হয়েছেন বিচারপতি। কুণাল-সহ বাকি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে রুল জারি করেছে আদালত। সোমবার মামলার শুনানিতে উপস্থিত ছিলেন কুণাল ঘোষ। এদিন ওই ঘটনায় পুলিশ কমিশনার আদালতে রিপোর্ট পেশ করেন। শুনানিতে কুণালের আইনজীবী জানান, ঘটনার দিন তাঁর মক্কেল রাজারহাটে একটি সাক্ষাৎকার দিচ্ছিলেন।
আদালতের পর্যবেক্ষণ, ‘‘গত ২ মে আমরা প্রাথমিক ভাবে বলেছিলাম, এটা অপরাধমূলক কাজ। আদালত অবমাননার নোটিস পেলে ১৫ দিনের মধ্যে জবাব দিতে হবে। তার পরেও কেউ হলফনামা জমা দেননি"। এরপরেই বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্তব্য, ‘‘কেন দেরি হল, তা আর জানতে চাইছি না। আমরা সবার বিরুদ্ধে রুল জারি করছি। কাউকে জেলে পাঠাচ্ছি না। রুলের উত্তর দিন"।
উল্লেখ্য, কোনও ব্যাক্তির বিরুদ্ধে রুল জারি করার অর্থ হল, সেই ব্যাক্তিকে সশরীরে আদালতে হাজিরা দিয়ে জানাতে হবে, কেন আদালত তাঁর বিরুদ্ধে কড়া কোনও পদক্ষেপ করবে না।
এদিন শুনানির শেষ মুহুর্তে কুণাল বিচারপতিদের কাছে ২-৩ মিনিট সময়ের আবেদন জানান। তবে তাঁর আবেদনে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আদালত থেকে বেরিয়ে কুণাল জানান, ‘‘বিচারপতিদের শ্রদ্ধা করি। যাঁরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে আমার নাম মামলায় গুঁজে দিয়েছেন, তাঁদের করুণা প্রদর্শন করছি। আমি আস্থা রাখছি, তিন বিচারপতির বেঞ্চ বুঝতে পারবেন"। আগামী ১৬ জুন এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
আদালতের এই নির্দেশ প্রসঙ্গে নিজের ফেসবুক পোষ্টে কুণাল ঘোষ জানিয়েছেন, "বিতর্কিত ঘটনায় আমি ছিলাম না। ওইদিন ওই সময়ে রাজারহাটে নিউজ 18-এর অনুষ্ঠানের শ্যুটিংএ ছিলাম। আদালত নিয়ে আপত্তিকর কাজ সমর্থনও করি না। আদালতের উপর পূর্ণ আস্থা আছে। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নাম জড়ানো হয়েছে। কোর্টে বুঝে নেব।"
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন