
'অযোগ্য' চাকরিপ্রাপকদের ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি, তাঁদের আবেদনও খারিজ করেছে উচ্চ আদালত। হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, হস্তক্ষেপের জন্য এটা উপযুক্ত মামলা নয়। প্রশ্ন তুলেছে, এতদিন কোথায় ছিলেন এঁরা? আদালত স্পষ্ট জানিয়েছে, পরীক্ষায় বসতে পারবেন না অযোগ্যরা।
গত ২৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছিল, নির্ধারিত সময়েই অর্থাৎ ৭ এবং ১৪ সেপ্টেম্বর হবে এসএসসি-র নতুন নিয়োগ পরীক্ষা। পাশপাশি, আগামী সাতদিনের মধ্যে জনসমক্ষে অযোগ্যদের তালিকা প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সেই মতো শনিবার ১,৮০৪ জন অযোগ্যের নামের তালিকা প্রকাশ করে এসএসসি। রবিবার তালিকায় আরও দু'জনের নাম যুক্ত করা হয়। ফলে তালিকায় বর্তমানে ১,৮০৬ জনের নাম রয়েছে।
সোমবার তাঁদেরই একাংশ কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। তাঁদের বক্তব্য, তাঁরা যে অযোগ্য, এটা ঠিক করে দিল কে? কীসের ভিত্তিতে এটা বলা হচ্ছে? কলকাতা হাইকোর্ট যোগ্য ও অযোগ্য - দুয়েরই তালিকা প্রকাশ করার নির্দেশ দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট সেই নির্দেশে হস্তক্ষেপ করেনি। তাহলে যোগ্যদের তালিকা কোথায়?
মঙ্গলবার বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের বেঞ্চে ছিল এই মামলার শুনানি। এদিন ভর্ৎসনা করে মামলাকারীদের কাছে তিনি জানতে চান, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে তাঁরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্কুলে গিয়েছিলেন কি না। যদি তাঁরা স্কুলে গিয়ে থাকেন, তবে তাঁরা আগে আদালতে আসেননি কেন? বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, “গত ১৭ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের পরে আপনারা স্কুলে যেতে পারেননি। এখন কেন আবেদন করেছেন? এত দিন কোথায় ছিলেন? যেই তালিকা প্রকাশ হল, আদালতে চলে এলেন?”
এদিন মামলাকারীদের তরফে আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী অনিন্দ্য লাহিড়ী এবং আইনজীবী শাক্য সেন। তাঁরা আদালতে জানান, অযোগ্যদের জন্য হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ যে শর্ত দিয়েছিল, তা মামলাকারীদের জন্য প্রযোজ্য নয়। সাদা খাতা জমা দিয়ে চাকরি পেলে, প্যানেল বহির্ভূত ভাবে যাঁরা চাকরি পেলে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ প্যানেল থেকে চাকরি পেলে— এই তিনটি ক্ষেত্রকে ডিভিশন বেঞ্চ অযোগ্য হিসাবে বলেছিল। তাঁদের মক্কেলরা সাদা খাতা জমা দেননি। একটি হলেও প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। তাই তাদের নতুন নিয়োগ পরীক্ষায় বসতে দেওয়া উচিত।
অন্যদিকে, কমিশনের তরফে এদিন আদালতে সওয়াল করেন আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “এটা নিয়ে তর্ক করে লাভ নেই। এই সব প্রার্থীর বিরুদ্ধে ওএমআর শিট কারচুপির অভিযোগ রয়েছে। সিবিআই যে তালিকা উদ্ধার করেছিল, তার সঙ্গে এসএসসি মিলিয়ে দেখেছে। ওএমআর শিট কারচুপি করে চাকরি পেয়েছেন। এই প্রার্থীরা র্যাঙ্ক জাম্প করে চাকরি পেয়েছেন।”
এরপর ফের বিচারপতি মামলাকারীদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেন, “৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপনাদের কেন স্কুলে যেতে দেওয়া হয়নি, সেই প্রশ্নের উত্তর দিন। তখন আপনারা কী করছিলেন? কেন এসএসসির কাছে গিয়ে বলেননি?”
মামলাকারীদের আইনজীবী তখন জানান, তাঁর মক্কেলদের কেন ‘অযোগ্য’ হিসাবে ধরা হল? ‘যোগ্য’ বা ‘অযোগ্য’ সমস্ত তালিকা কোথায়? সব তালিকা কেন প্রকাশ হল না? যদি ‘অযোগ্য’ বলা হয় তবে কেন পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অ্যাডমিট কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী। মামলকারীদের আইনজীবী বলেন, “অ্যাডমিট কার্ড দিয়েও কেন বাতিল করা হল? ওই সিদ্ধান্তকেও আমরা চ্যালেঞ্জ করছি।”
যদিও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “সিবিআই বলছে ওএমআর শিট কারচুপি করা হয়েছে। তারা আমাদের দিয়েছে, আমরা গ্রহণ করেছি। সেই হিসাবে তাঁরা অযোগ্য। কারচুপি হয়েছে। ফলে কোন প্রার্থীকে, কত নম্বর দেওয়া হয়েছে সেটা ধরে লাভ নেই।”
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন