আমাদের রাজ্য লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে ইনসাফ চাই, বিচার চাই বলে লড়াই করলো। আর রাজ্য সরকার কী করল? সেই আন্দোলন ভেঙে দেবার জন্য সবরকম চেষ্টা চালালো। রবিবার ব্রিগেডে একথা বলেন মহম্মদ সেলিম।
তিনি বলেন, কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ কারোর মুরোদ হবে না লাল ঝান্ডার লড়াই আটকানোর। খেটে খাওয়া মানুষ যখন এককাট্টা হয় তখন কারোর সেই শক্তি আটকানোর ক্ষমতা থাকে না।
সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, বিজেপি আর তৃণমূল একে অপরকে দেখে নেবার কথা বলছে। আসলে এরা মেহনতী মানুষের ঐক্য ভাঙার চেষ্টা করছে। আসলে বিজেপি আর তৃণমূলের নেতারা ছল করছে। আমরা বুক চিতিয়ে বলতে পারি এ রাজ্যে যারা দাঙ্গা করতে আসবে মেরে তাঁদের মাথা ভেঙে দেব। জ্যোতি বসু অনেকদিন আগে বলেছিলেন - সরকার চাইলে দাঙ্গা হয়, না চাইলে দাঙ্গা হয়না।
তিনি বলেন, কদিন আগে এসেছিলেন মোহন ভাগবত। তিনি বলে গিয়েছেন ২০২৬ এর নির্বাচনে কী করতে হবে। এর আগে মাওবাদীদের নিয়ে এসে, সিদ্দিকুল্লাদের নিয়ে এসে লালঝান্ডার মানুষকে খুন করেছিল। এরা এব একজোট হয়ে বলেছিল লাল হাটাও, দেশ বাঁচাও। লাল হটেছে, কিন্তু দেশ বাঁচেনি। তাই আবার লালকে ফেরত আনতে হবে।
এদিন সেলিম বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বুকে সম্প্রীতি ভাঙার জন্য যারা যারা খেলছে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। আমরা বলছি, পুলিশকে মামলা করতে হবে।
সেলিম আরও বলেন, ইলেক্টোরাল বন্ডের টাকা, চিটফান্ডের টাকা দিয়ে এই লালঝান্ডা কেনা হয়নি। তাই এই লালঝান্ডাকে এত সহজে নামানো যাবেনা। মানুষ অনেক সংগ্রাম, আত্মত্যাগের বিনিময়ে এই ঝান্ডাকে লাল করেছে। শুভেন্দু বলেছিল, লাল ঝান্ডা দেখা যাবে না। আর এখন নিজেই দল বদল করে ফেলেছে।
ব্রিগেড সমাবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই প্রচন্ড রোদে লাখ লাখ মানুষ ব্রিগেড এসেছে। মানুষ লড়াই শুরু করতে এখানে এসেছে। আজ থেকে লড়াই শুরু। যারা আমাদের ঘরছাড়া করছে আমরা শপথ নিচ্ছি আমরা তাঁদের রাজ্যছাড়া করব।
তিনি বলেন, সব লড়াইকে মালা গাঁথার মত করে এক জায়গায় নিয়ে আসতে হবে। গণ আন্দোলনের জোয়ার তৈরি করতে হবে। আমরা সেই কাজই করছি। আমরা আছি। আমরা লাল ঝান্ডা আছি। আমাদের কর্মীরা ঘর ছাড়া হয়েও লাল ঝান্ডা ছাড়েনি। বিজেপি তৃণমূল আমাদের সব ভেঙে দিতে চাইছে। আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। আমরা লড়াইকে ভয় পাই না। মন্দির আর মসজিদের লড়াই নয়। ধর্মের নামে লড়াই নয়। লড়াই মানুষের রুটি রুজির। আমরা এই বাংলার সর্বনাশ হতে দেব না।
বন্যা টুডু তাঁর বক্তব্যে বলেন, আমরা শেষ দেখে ছাড়ব। ক্ষেতমজুর, খেটে খাওয়া মানুষদের লড়াই থামবে না। আমরা এই লড়াইয়ের পথ থেকে সরব না।
তিনি বলেন, অনেকেই বলে, ব্রিগেডে এত লোক, কিন্তু আমরা ভোট পাই না। আমাদের বুঝতে হবে মানুষের রুটিরুজির লড়াই আর ভোট এক নয়।
খেতমজুর নেত্রী আরও বলেন, আমরা মানুষের রুটি রুজির লড়াই করি। আমরা ১০০ দিনের কাজ ২০০ দিন করার দাবি করি। আমরা বলি হয় টাকা দাও নয় কাজ দাও। এ কথা বলার ধক সকলের থাকে না। আমরা আপনাদের জন্য লড়াই করছি।
তিনি আরও বলেন, যে রাজ্যে লক্ষ্মীদের সম্মান থাকে না, সে রাজ্যে তাদের ভান্ডারের অর্থ কী? মেয়েদের ধর্ষণ করে টাকা ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ওরা বলছে, খেলা হবে। আমরা বলছি, খেলা আমরাও খেলব। ছাব্বিশে আমরাও খেলে দেখিয়ে দেব।
আমাদের এই ব্রিগেড সভা দেখার পর মমতা ব্যানার্জি ঘুমোতে পারবেন কিনা সন্দেহ আছে। খেটে খাওয়া মানুষের ব্রিগেড, শ্রমজীবী মানুষের ব্রিগেড, কৃষকের ব্রিগেড, শ্রমিকের ব্রিগেড - মমতা ব্যানার্জি আর নরেন্দ্র মোদী সবথেকে বেশি ভয় করে এই অংশের মানুষকে।
বিধানসভায়, সংসদে এখন মানুষের সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয় না। আলোচনা হয় কীভাবে সাংসদ বিধায়কদের মাইনে বাড়ানো যায়। কাজের নিরাপত্তার জন্য আলোচনা হয় না কোথাও। ১০০ দিনের কাজ বন্ধ।
নিরাপদ সর্দার বলেন, এই সময় সবচেয়ে বেশি বেকারের জন্ম। যারা কল কারখানায় কাজ করতেন এই দুই সরকার তাঁদের জীবন অনিশ্চিত করে তুলেছে। পড়াশোনা করার পরেও ছাত্রযুবরা পরিযায়ী শ্রমিক হতে বাধ্য হচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, মমতা চুরি করেছেন বলে মোদী টাকা দিচ্ছেন না। আর আমরা বলছি, ১০০ নয়, ২০০ দিনের কাজ দিতে হবে। এর জন্য আইন আনতে হবে। আইন অনুযায়ী তিন মাসের বেশি ১০০ দিনের কাজ বন্ধ রাখা যায় না। মোদী সরকার তাই করেছে।
কৃষক সংগঠনের নেতা অমল হালদার বলেন, আমাদের দেশের, রাজ্যের কৃষকেরা বিপন্ন। তাঁরা গোপনে জমি বন্ধক দিতে বাধ্য হচ্ছে। ঘর ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ ফসলের দাম পাচ্ছে না।
রাজ্যের অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সারের দাম, বীজের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। ভয়ঙ্কর এক অবস্থার দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে রাজ্যকে। আমাদের সামনে ঐক্যবদ্ধ লড়াই ছাড়া কোনও পথ নেই।
তিনি বলেন, চড় চড় করে বেড়ে যাচ্ছে চালের দাম। চাষের জমি কমে যাচ্ছে। উৎপাদন কমে যাচ্ছে। অথচ এসব নিয়ে সরকারের কোনও পরিকল্পনা নেই। এরপর দুর্ভিক্ষের মতো অবস্থা তৈরি হবে।
তিনি আরও বলেন, রাজ্যে কৃষির অবস্থা খুব খারাপ। তার সঙ্গে ২৬ হাজার চাকরি চলে যাওয়ায় বহু মানুষ সমস্যায়। যোগ্যদের বলি দিয়ে অযোগ্যদের বাঁচাতে চাইলেন মমতা।
নিজের বক্তব্যে অনাদি সাহু বলেন, আজ কলকারখানায় অস্থায়ী শ্রমিক ক্রমশ বেড়ে যাচ্ছে। আর এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকার সাথ দিয়ে চলছে কর্পোরেটদের। ভারতের সংবিধান শ্রমিকদের যতটুকু অধিকার দিয়েছে আজকের বর্তমান কেন্দ্রীয় সরকার সেই অধিকার কেড়ে নিতে চাচ্ছে। নিয়ে এসেছে কালা শ্রমকোড। আমাদের একটাই দাবি - এই শ্রমকোড বাতিল করতে হবে। এই দাবিতেই আগামী ২০ মে ধর্মঘট। আমাদের সেই ধর্মঘট সফল করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আজ যদি শ্রমকোড লাগু হয় তাহলে ৮ ঘণ্টা কাজের অধিকার থাকবে না। ১২ ঘণ্টা, ১৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। স্থায়ী কাজ, স্থায়ী চাকরি বলে কিছু থাকবে না। মজুরির অধিকার বলে কিছু থাকবে না। সবাই শ্রম আইনের বাইরে চলে যাবে। এটা ভয়ংকর অবস্থা।
সিটু নেতা বলেন, আগামী দিনে এভাবেই ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকারের ওপরেও আক্রমণ নেমে আসছে। আগামী দিনে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা করার আইন আনার চেষ্টা হচ্ছে। যা হলে ভয়ংকর অবস্থা সৃষ্টি হবে।
তিনি বলেন, এই সবের বিরুদ্ধেই আগামী দিনে সারা দেশে সর্বাত্মক ধর্মঘট করতে হবে। আমাদের দেশের কৃষক, শ্রমিক, খেতমজুরদের রক্ষা করতে হবে। বেকারদের অধিকার রক্ষা করতে হবে। দুর্নীতির অভিযোগে আমাদের রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ ৩ বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে।
অনাদি সাহু বলেন, আমাদের রাজ্যে যে সব শ্রমজীবী মানুষ আছেন, তাঁদের সামাজিক সুরক্ষার দাবিতে আগামী দিনে আমাদের আরও বড়ো লড়াই করতে হবে।
অনাদি সাহু বলেন, আর অন্যদিকে আরএসএস বিজেপি রাজ্যে সাম্প্রদায়িক আগুন জ্বালানোর চেষ্টা করছে। আমাদের তা প্রতিরোধ করতে হবে। সর্বত্র আমাদের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। উচ্ছেদ করতে হবে বর্তমান দুর্নীতিগ্রস্ত বর্তমান রাজ্য সরকারকে। এই দুর্নীতিগ্রস্ত সরকারকে উচ্ছেদ করার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে। আগামী দিনে প্রতিটি মানুষের ইস্যু নিয়ে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।
শুরু হল চার বাম গণ সংগঠনের ব্রিগেড সমাবেশ। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন সিটু পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি সুভাষ মুখোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে বক্তব্য রাখছেন সিটু পশ্চিমবঙ্গ সম্পাদক অনাদি সাহু।
চার বাম গণ সংগঠনের ব্রিগেড সমাবেশের মূল পর্ব শুরু হতে আরও কিছু সময় বাকি। দীর্ঘ সময় ধরে সাংস্কৃতিক মঞ্চে গণসঙ্গীত পরিবেশন করছেন শিল্পীরা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলার পাশাপাশি ক্রমশ ভরে উঠছে মাঠ।
সময়ের হিসেবে 'খেটে খাওয়া মানুষের' ব্রিগেড সমাবেশ শুরু হতে আরও এক ঘণ্টা বাকি। যদিও ইতিমধ্যেই ব্রিগেডে ভিড় জমাতে শুরু করেছেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা শ্রমজীবী মানুষ। এখনও কোনও বড়ো মিছিল ব্রিগেডে প্রবেশ করেনি। সেই অর্থে জমায়েত এখনও পূর্ণ না হলেও এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বহু মানুষ। অপেক্ষায় সমাবেশ শুরুর।
এই মুহূর্তে মূল মঞ্চের নিচে চলছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সঙ্গীত পরিবেশন করছেন বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন