কসবার ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি, বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি অধীরের

কসবার ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য বিবৃতি ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান অধীর। অন্যদিকে উপনির্বাচন নিয়েও এদিন রাজ্যকে নিশানা করলেন বহরমপুরের সাংসদ।
অধীর রঞ্জন চৌধুরী
অধীর রঞ্জন চৌধুরীফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

বিজেপির টিকিটে জেতা মুকুল রায় তৃণমূলে যোগ দেবার পর এখন কোন দলে? গতকাল মুখ্যমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের পর পিএসি চেয়ারম্যান পদ নিয়ে সরগরম রাজ্য রাজনীতিতে এটাই লাখ টাকার প্রশ্ন। শাসক বিরোধী দুই পক্ষই চেয়ারম্যানের পদ ধরে রাখতে মরিয়া। এই রাজনৈতিক বিতণ্ডার মাঝেই শুক্রবার পিএসি নিয়ে তোপ দাগলেন কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

শুক্রবার তিনি বলেন, 'সরকারের দোষ ত্রুটি আড়াল করতেই পিএসি পদে নিজেদের লোক চায় তৃণমূল।' তবে ওই পদ বিরোধীদের হাতে তুলে দেওয়াটা প্রথা, কোনো আইন নয় বলেও তিনি জানান। পাশাপাশি কসবার ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রকাশ্য বিবৃতি ও বিচারবিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান অধীর। অন্যদিকে উপনির্বাচন নিয়েও এদিন রাজ্যকে নিশানা করলেন বহরমপুরের সাংসদ।

সূত্রের খবর, বিজেপির বিরোধিতা সত্ত্বেও পিএসির চেয়ারম্যানের দৌড়ে এগিয়ে মুকুল রায়। বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে গেলেও খাতায় কলমে এখনও তিনি বিজেপি বিধায়ক। প্রথা অনুসারে, বিরোধীদলের পিএসির চেয়ারম্যান হওয়ার কথা। কিন্তু মুকুল রায় যেহেতু বিজেপি ছেড়ে ইতিমধ্যেই তৃণমূল শিবিরে যোগদান করেছেন তাই পিএসির চেয়ারম্যান পদে তাকে বসানো নিয়ে তৃণমূল-বিজেপি সংঘাত তুঙ্গে। এদিন পিএসি প্রসঙ্গে তোপ দেগে অধীর বলেন, 'বিরোধী দলের হাতে যদি পিএসি -র দায়িত্ব চলে যায় তাহলে সরকারের ত্রুটি-বিচ্যুতি সামনে আসার ভয় থাকে। তাই মমতা সরকার নিজেদের দোষ ত্রুটি ঢাকতে নিজেদের দলের লোককেই এই পদে বসাতে চাইছেন।'

অধীরের মতে, পুরো বিষয়টাই নির্ভর করছে স্পিকারের ওপর। তাঁর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিরোধী দলকে দায়িত্ব দেওয়াটা কেবল একটি প্রথা, কোনো আইন নয়। স্পিকার যদি মনে করেন, তিনি বিরোধী দলকে নিতে বাধ্য নন তাহলেও তিনি সঠিক। কিন্তু দীর্ঘদিনের প্রথা মেনে বিরোধী দলকেই এই পদের দায়িত্ব দেওয়া উচিত।' অধীরের কথায়, ‘ইন্দিরা গান্ধী প্রথম সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পিএসি চেয়ারম্যান বিরোধী দলকে দেওয়া হবে। সেই থেকে এটি একটি প্রথা। তবে সংসদীয় ব্যবস্থা চলে সকলের মতামতের ভিত্তিতে।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কলকাতার কসবার ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্প প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রীর বিবৃতি এবং এর বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি জানান অধীর রঞ্জন চৌধুরী। তার মতে, ভুয়ো টিকাকরণ ক্যাম্পের কথা জানার পর থেকেই আতঙ্কে সাধারণ মানুষ। এই পরিস্থিতিতে মানুষ যাতে টিকা নিতে বিমুখ না হয় তাই প্রকাশ্যে বিবৃতি দেওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

এ বিষয়ে রাজ্যকে কাঠগড়ায় তুলে অধীর বলেন, 'ভুয়ো ভ্যাক্সিনেশন নিয়ে পুলিশ, পুরসভা, স্বাস্থ্য দফতর কেউই মুখ খুলতে চাইছেন না। নকল ভ্যাকসিন দিয়ে বাংলার মানুষকে কি গিনিপিগে রুপান্তরিত করা হচ্ছে? সরকারের নেতা-মন্ত্রীদের নাম সামনে এনে ভ্যাকসিন দেওয়ার জালিয়াতি সামনে এলেও কীভাবে এ ঘটনা ঘটেছে তার কোনো বিবৃতি নেই?'

অধীর আরো বলেন, ‘ঘটনায় বিভিন্ন ভাবে তথ্য ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিভিন্ন নেতা মন্ত্রীদের বয়ানে তা স্পষ্ট। ধামাচাপা দেওয়ার অর্থ মানবিকতাকে হত্যা করা। তাই এই ঘটনার তদন্তভার কোনো বিচারপতির অধীনে করা হোক। কারণ সিআইডি কিংবা সিবিআই কাউকেই ভরসা নেই।

করোনা পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকার সব পরীক্ষা বাতিল করলেও উপনির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় করছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন অধীর চৌধুরী। এ প্রসঙ্গে তিনি কটাক্ষ করে বলেন, 'কোভিড পরিস্থিতির জন্য রাজ্যে এ বছর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা বলছি, তা হলে ভোটও এখন না করা হোক। কিন্তু রাজ্য সরকার পরীক্ষা বন্ধ করলেও তড়িঘড়ি ভোট সেরে ফেলতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তা হলে পরীক্ষা হতে কী অসুবিধা ছিল? তবে উপনির্বাচন হলে তা যেন রাজ্যে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখে করা হয়।

বহু পুরসভার ভোট বাকি আছে রাজ্যে। কেন্দ্রীয় সরকার একটি নিয়ম আনুক। যাতে বিশেষ পরিস্থিতিতে ৬ মাসের পরিবর্তে ১ বছর পর উপনির্বাচন করা যায়। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হোক।’

অধীরের দাবি, ‘কংগ্রেস আমলে রাজ্যের জেলায় জেলায় উন্নয়ন হয়েছিল। কিন্তু এখন যে দিন টেন্ডার ডাকা হয়, সে দিনই কাটমানি দেওয়া-নেওয়া হয়। এখন মুর্শিদাবাদের জেলা পরিষদের যা অবস্থা, কখন কে থাকবে, কে থাকবে না, তা নিয়ে সব সময় টানাপোড়েন চলছে। ফলে জেলা পরিষদের কাজকর্ম বারোটা বেজে তেরোটা হয়ে গিয়েছে। মুর্শিদাবাদ জেলার মানুষ সরকারি পরিষেবা পাচ্ছেন না।'

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in