আলিপুর জু'র ৫১টি 'গায়েব' প্রাণী আম্বানিদের ব্যক্তিগত চিড়িয়াখানায়! থানায় অভিযোগ দায়ের

People's Reporter: চিড়িয়াখানায় চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, ২৩০০ কিলোমিটার দূরে এই প্রাণীগুলিকে পাঠানো হচ্ছে কেন, তার উপযুক্ত উত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে।
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবিছবি - সংগৃহীত
Published on

রহস্যজনকভাবে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে উধাও হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি। যা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন তুলেছে সেভ ওয়াইন্ড অ্যানিম্যালস অব আলিপুর জু ম্যান্ড আওয়ার নেচার (স্বজন)। এই আবহে জানা গেছে, আলিপুর চিড়িয়াখানার ৫১টি প্রাণী গুজরাটের জামনগরের বনতারায় আম্বানিদের ব্যাক্তিগত 'চিড়িয়াখানা'য় স্থানান্তর করা হয়েছে। এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই আলিপুর থানায় মামলা দায়ের করেছেন এক আন্দোলনকর্মী।

অন্যদিকে, এই ব্যাপক অসঙ্গতি খতিয়ে দেখতে এবং চিড়িয়াখানার প্রাণীদের নিরীক্ষা করার জন্য কলকাতায় এসেছিল কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (CZA) -এর তিন সদস্যের একটি দল। গত বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত চিড়িয়াখানায় থেকে গোটা ঘটনার তদন্ত করেন তাঁরা।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, ভারতে বন্যপ্রাণী বিক্রি বেআইনি। দেশের সমস্ত প্রাণী উদ্যান, চিড়িয়াখানা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণের জন্য ভারত সরকারের 'সেন্ট্রাল জু অথরিটি' ও চিড়িয়াখানা সংক্রান্ত নিয়মাবলী রয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানারও সেই আইন মেনে চলার কথা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের স্বার্থ রক্ষা না করে আলিপুর চিড়িয়াখানার জমি বেআইনিভাবে বেসরকারি নির্মাণের জন্য বিক্রি করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। এই উদ্যোগেরই একটি ধাপ, গত কয়েক বছরে আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে বিপুল সংখ্যক বন্যপ্রাণীর উধাও হয়ে যাওয়া।

এই নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হয়েছে। আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বেআইনি কার্যকলাপে এই চিড়িয়াখানার অবনমন ঘটতে ঘটতে উঠে যেতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন মামলাকারী। রবিবার আন্দোলনকারীদের মধ্যে অন্যতম মহালয়া চ্যাটার্জি আলিপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

তিনি দাবি করেছেন, ২০২৩ সালের ২ এপ্রিল ৫১টি প্রাণী বনতারায় স্থানান্তর করার ঘটনা বিস্ময়কর। চিড়িয়াখানায় প্রাণী সংরক্ষণ এবং চিকিৎসার উন্নত ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও, পশ্চিমবঙ্গেই সরকারের আরও অনেকগুলি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও চিকিৎসা কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও ২৩০০ কিলোমিটার দূরে এই প্রাণীগুলিকে পাঠানো হচ্ছে কেন, তার উপযুক্ত উত্তর নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। তাই তদন্তের দাবি করেছেন তিনি।

সূত্র মারফত জানা গেছে, আলিপুর চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের বার্ষিক রিপোর্ট অনুসারে ২০২২ সালের ৩১ মার্চ তারিখের ক্লোজিং স্টকে চিড়িয়াখানায় বিরল প্রজাতির প্রাণী ছিল ১৯০টি। ১ এপ্রিল ২০২২ তারিখের ওপেনিং স্টকে বিরল প্রজাতির প্রাণী হয়ে গিয়েছে ১৩১টি। অর্থাৎ এক দিনে ৫৯টি বিরল প্রজাতির প্রাণী তালিকা থেকে উধাও হয়ে গিয়েছে। অন্যদিকে, সেন্ট্রাল জু অথরিটির ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত আলিপুর চিড়িয়াখানায় মোট প্রাণী ছিল ৬৭২টি, আর ঠিক তার পরদিন ১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখের ওপেনিং স্টকে মোট প্রাণী সংখ্যা হয়ে গিয়েছে মাত্র ৩৫১টি। অর্থাৎ ৩২১টি প্রাণী উধাও হয়ে গিয়েছে!

এদিকে, আলিপুর চিড়িয়াখানায় প্রাণী উধাওয়ের এই অসঙ্গতি তদন্ত করতে বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ (CZA) -এর তিন সদস্যের একটি দল এসেছিল কলকাতায়। সমস্ত কিছু খতিয়ে দেখেছে তারা। শুধুমাত্র সাম্প্রতিক বছরের নয়, অতীতের তালিকাও খতিয়ে দেখেছে তারা।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in