পরিকাঠামোই নেই অথচ বন্দে ভারত বানাচ্ছে সরকার! নয়াদিল্লী স্টেশনে তড়িদাহত হয়ে মৃত যুবতীর বাবার ক্ষোভ

রাজধানী নয়াদিল্লির রেলওয়ে স্টেশনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩৫ বছর বয়সী সাক্ষী আহুজার মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে।
ইনসেটে নিহত যুবতী সাক্ষী আহুজা
ইনসেটে নিহত যুবতী সাক্ষী আহুজা

পরিকাঠামোর অভাব? গুরুতর প্রশ্নের মুখে ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ। রবিবার খোদ রাজধানী নয়াদিল্লির রেলওয়ে স্টেশনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৩৫ বছর বয়সী সাক্ষী আহুজার মৃত্যু ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। মৃত সাক্ষীর বাবা লোকেশ কুমার চোপড়া এ নিয়ে সরাসরি ভারতের রেলমন্ত্রকের দিকে আঙুল তুলেছেন।

রবিবার নয়াদিল্লির রেল স্টেশনের পার্কিং এলাকা থেকে দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রেন ধরার জন্য প্ল্যাটফর্মের দিকে হেঁটে যাওয়ার সময় জমা জলে পা পড়ার ফলে তড়িদাহত হন সাক্ষী, এমনটাই জানা গিয়েছে পরিবার সূত্রে। ঘটনাস্থলে পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, চিকিৎসকের মতো কোনওরকম জরুরী পরিষেবা ছিল না বলে জানিয়েছেন সাক্ষীর বাবা লোকেশ। এমনকি তড়িদাহত হওয়ার পর প্রায় ২০ মিনিট ধরে কেউ সাহায্যের জন্যও এগিয়ে আসেনি বলে দাবি তাঁর। অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে সাক্ষীর দুই শিশু সন্তান।

ঠিক কিভাবে ঘটল এই মর্মান্তিক ঘটনা? পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, পূর্ব দিল্লির প্রীত বিহারের বাসিন্দা পেশায় শিক্ষিকা সাক্ষী আহুজা তাঁর দুই শিশু সন্তান-সহ পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটাতে চণ্ডীগড় যাচ্ছিলেন। নয়াদিল্লির রেলওয়ে স্টেশনের পার্কিং এলাকা থেকে বাবা লোকেশের নির্দেশ মতো ব্যাগ-পত্তর ও দুই সন্তানকে নিয়ে প্ল্যাটফর্মের দিকে রওনা দিয়েছিলেন সাক্ষী। সেই পথের ধারেই একটি গর্তে বৃষ্টির জমা জলে পা পড়ে যায় তাঁর। হড়কে পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচার জন্য জমা জল লাগোয়া একটি ল্যাম্পপোস্টের সাহায্য নেন তিনি। সেখানেই জলের মধ্যে অগোছালোভাবে ছড়িয়ে পড়ে থাকা ৪৪০ ভোল্টের হাই-টেনশন তারের থেকে তড়িদাহত হন সাক্ষী। বাবা পার্কিং এলাকায় গাড়ি রেখে ফিরে এসে মেয়েকে অচৈতন্য অবস্থায় ওই জলের মধ্যে পড়ে থাকতে দেখেন। একটুর জন্য বেঁচে যায় সাক্ষীর ৯ বছর বয়সী ছেলে ও ৭ বছর বয়সী মেয়ে।

সর্বভারতীয় এক সংবাদমাধ্যমকে লোকেশ কুমার চোপড়া জানিয়েছেন, “আমার মেয়ে প্রায় ২০ মিনিট ধরে তড়িদাহত অবস্থায় ওখানে পড়ে ছিল। কোনও পুলিশ কিংবা চিকিৎসক ওখানে ছিলেন না। এমনকি স্টেশন চত্বরে কোনও অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা ছিল না। আড়াই কিলোমিটার দূরে হাসপাতালে পৌঁছতে পৌঁছতেই আমাদের প্রায় ১ ঘণ্টা লেগে যায়। স্টেশন চত্বর থেকে বেরোতেই লেগে গিয়েছিল প্রায় ৩০-৪০ মিনিট কারণ, প্রচুর গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকায় স্টেশন থেকে বেরনোর জায়গাটি প্রায় বদ্ধ হয়েছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম আমার মেয়ে আর নেই কারণ ওঁর শ্বাস-প্রশ্বাস চলছিল না। কিন্তু আমি কোনওরকম রিঅ্যাক্ট করিনি কারণ ওঁর ছোট ছোট বাচ্চারাও আমার সঙ্গে ছিল।”

তিনি আরও জানিয়েছেন, “ওখানকার স্থানীয় কর্মীরা জানালেন, এই ঘটনা নাকি এই প্রথম নয়। আগেও এরকম ঘটনা ঘটেছে। তারা এ নিয়ে অভিযোগও জানিয়েছিলেন, কিন্তু কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।” তাঁর আরও বক্তব্য, “রেলওয়ে আধিকারিকরা আমাদের জানিয়েছিলেন যে তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেরকম তো কিছুই দেখছি না। আমাদের সিস্টেমের আসলে কোনও উন্নতিই হয়নি। আমরা অত্যাধুনিক বন্দে ভারত ট্রেন বানাচ্ছি, কিন্তু স্টেশনে উন্নতমানের পরিকাঠামো তৈরি করতে পারছি না। সাধারণ মানুষের জন্য না আছে কোনও সুযোগ-সুবিধা, না আছে কোনও জরুরী পরিষেবা।”

মেয়ের মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ বাবা প্রশ্ন তুলেছেন, “আমাদের এই সিস্টেমে কেন কোনও উন্নতি হচ্ছে না? কেন বিপজ্জনকভাবে খোলা তার যেখানে-সেখানে পড়ে থাকবে? কেন শুধুমাত্র সংবাদমাধ্যমে কোনও সমস্যা দেখালেই সেটা নিয়ে কাজ হয়?” তিনি আরও জানিয়েছেন, “প্রতিদিন প্রায় ৫ লক্ষ মানুষ ওই স্টেশনে যাতায়াত করেন। কেন সেখানে কোনও অ্যাম্বুলেন্স পরিষেবা থাকবে না? রেল কর্তৃপক্ষ নিজেদের প্রশ্ন করুন তো, ওই ৫ লক্ষ মানুষকে আপনারা কী পরিষেবা দিচ্ছেন? আমরা কোনও ক্ষতিপূরণ চাই না, এই জঘন্য পরিষেবার জন্য যারা দায়ী তাদের শাস্তি দেওয়া হোক। আমাদের পরিবার সমস্ত আইনি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত আছে।”

এই ঘটনার পর উত্তর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র দীপক কুমার জানিয়েছেন, “এই ঘটনার তদন্তের জন্য ইতিমধ্যেই একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কীভাবে ওই ঘটনা ঘটল এই কমিটি খতিয়ে দেখবে। রেলের তরফ থেকে সমস্ত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে এবং এই ঘটনায় যারা দায়ী তাদের শাস্তি হবেই।” এই ঘটনায় মৃত সাক্ষীর পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় রেল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত গাফিলতির অভিযোগ জানানো হয়েছে এবং সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই দায়ের হয়েছে মামলা।  

GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in