
ন্যায় বিচার চেয়ে আন্দোলন করার 'অপরাধে' গত রবিবার, দিল্লি পুলিশের হাতে হেনস্থার শিকার হন পদকজয়ী কুস্তিগীররা! তারই প্রতিবাদে আজ সন্ধ্যা ৬টায় হরিদ্বারের গঙ্গায় 'পদক বিসর্জনের' ঘোষণা দিয়েছেন প্রতিবাদী কুস্তিগীররা।
মঙ্গলবার, টুইটারে চিঠি পোষ্ট করে কুস্তিগীর সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাটেরা যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছেন, 'আজ সন্ধ্যা ৬ টায় হরিদ্বারের গঙ্গায় আমরা আমাদের পদক ভাসিয়ে দেব'।
কেন এই পদক্ষেপ?
চিঠিতে কুস্তিগীররা লিখেছেন, '...মনে হচ্ছে, আমাদের গলায় সাজানো এই পদকগুলির আর কোনো অর্থ নেই। এগুলি ফিরিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেই আমরা মারা যাচ্ছিলাম। কিন্তু, আত্মসম্মানের সাথে আপস করে এই জীবন রাখার মানে হয় না।'
কোন পরিপেক্ষিতে এই পদক্ষেপ?
কুস্তিগীররা জানিয়েছেন, 'আপনারা সবাই দেখেছেন ২৮ মে কী হয়েছিল, পুলিশ আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছে? কত নির্মমভাবে আমাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছিলাম। আমাদের আন্দোলনের জায়গাটাও পুলিশ ভাংচুর করে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেয় এবং পরদিন আমাদের বিরুদ্ধে গুরুতর মামলায় এফআইআর দায়ের করা হয়। পুলিশ ও প্রশাসন আমাদের সঙ্গে অপরাধীর মতো আচরণ করছে। যেখানে অভিযুক্তরা প্রকাশ্য সভা-সমাবেশে আমাদের গালাগাল করছে। টিভিতে মহিলা কুস্তিগীরদের অস্বস্তিকর করে তোলে এমন ঘটনা স্বীকার করে সেগুলিকে হাসি-মজাতে পরিণত করা হচ্ছে।'
রাষ্ট্রপতি বা প্রধানমন্ত্রীকে কেন পদক ফেরত দিতে চাইছেন না কুস্তিগীররা?
চিঠিতে কুস্তিগীররা লিখেছেন, 'এর প্রতিবাদে কাকে আমরা পদক ফিরিয়ে দেব? রাষ্ট্রপতি, যিনি নিজে একজন মহিলা। মন বলল না, কারণ তিনি শুধু দেখছেন, আমাদের থেকে মাত্র ২ কিমি দূরে বসে আছেন। সবকিছু দেখেছেন কিন্তু, কোনও পদক্ষেপ নেননি। কিছুই বলেননি। নিশ্চুপ রয়েছেন।'
নাকি আমাদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে, যিনি আমাদেরকে বাড়ির মেয়ে বলে ডেকেছেন? এক্ষেত্রেও মন কিছুতেই রাজি হল না, কারণ একবারের জন্যও তিনি (মোদী) তাঁর বাড়ির মেয়েদের যত্ন নেননি। বরং, আমাদের নিপীড়ককে (পড়ুন- BJP সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিং-কে) নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং তিনি উজ্জ্বল সাদা পোশাকে ছবি তুলেছিলেন। এর অহংকার আমাদের দংশন করেছে। যেন বলছে, আমিই সিস্টেম।'
'এই চোখ ধাঁধানো সিস্টেমে আমাদের স্থান কোথায়? ভারতের মেয়েদের স্থান কোথায়? আমরা কি শুধুই স্লোগানে পরিণত হয়েছি, নাকি ক্ষমতায় আসার এজেন্ডা মাত্র?' সেই প্রশ্নও তুলেছেন সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাটেরা।
তাঁরা খোলা চিঠিতে জানিয়েছেন, 'আমাদের এই পদকগুলির আর প্রয়োজন নেই। কারণ, এই সিস্টেমটি আমাদের গলায় ঝুলিয়ে এবং আমাদের উপর একটি মুখোশ লাগিয়ে নিজের প্রচার করতে চায়। তারপর আমাদের শোষণ করে। আর, আমরা প্রতিবাদ করলে আমাদের জেলে পুরে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।'
একইসঙ্গে, তাঁরা লিখেছেন, 'পদক আমাদের জীবন, আমাদের আত্মা। গঙ্গায় ভেসে গেলে আমাদের বেঁচে থাকার কোনো মানে হবে না। তাই আমরা ইন্ডিয়া গেটে আমরণ অনশনে বসব। ইন্ডিয়া গেট আমাদের শহিদদের স্থান যারা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমরা তাদের মতো পবিত্র নই, কিন্তু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খেলার সময় আমাদের আত্মাও ছিল সেই সৈনিকদের মতো।'
কুস্তিগীরদের আরও বক্তব্য, 'অপবিত্র ব্যবস্থা কাজ করছে আর আমরা আমাদের কাজ করছি, এখন জনগণকে ভাবতে হবে - তারা তাদের এই মেয়েদের পাশে দাঁড়াবেন নাকি সেই সাদা ধোলাই ব্যবস্থার সঙ্গে দাঁড়াবেন, যারা এই মেয়েদের হেনস্থা করছে।'
'আজ সন্ধ্যা ৬টায় হরিদ্বারের গঙ্গায় আমাদের পদক ভাসিয়ে দেব।'
'আমরা এই মহান দেশের কাছে সর্বদা কৃতজ্ঞ থাকব।'
প্রসঙ্গত, গত ২৮ মে, যৌন হেনস্থার অভিযুক্ত ভারতীয় কুস্তি ফেডারেশনের সভাপতি তথা বিজেপি সাংসদ ব্রিজভূষণ শরণ সিংয়ের গ্রেফতারির দাবীতে রাস্তায় নামেন বজরং পুনিয়া, সাক্ষী মালিক, ভিনেশ ফোগাটের মতো আন্তর্জাতিক পদকজয়ী কুস্তিগীররা। নতুন সংসদ ভবনের উদ্দেশ্যে মিছিল করেছিলেন তাঁরা। এইসময় কুস্তিগীরদের ওপর আক্রমণ চালায় দিল্লি পুলিশ। আটক করা হয় আন্দোলনরত কুস্তিগীরদের।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন