'দুর্ভাগ্যজনক' - আমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় পাইলটদের দিকে আঙুল তোলায় মন্তব্য সুপ্রিম কোর্টের

People's Reporter: বিমান সুরক্ষা এনজিও সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন অভিযোগ তুলেছে যে রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করা হয়েছে। সেই কারণেই এনজিওটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে।
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমান
দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানফাইল ছবি
Published on

আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট এআই–১৭১ বিধ্বস্ত হয়ে ২৬৫ জনের মৃত্যু ঘটার পর তদন্ত নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। সোমবার সুপ্রিম কোর্ট এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) এবং এয়ারক্রাফট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরোর (এএআইবি) কাছে জবাব তলব করেছে। পাশাপাশি দুর্ঘটনার পর 'পাইলটের ভুল'-এর বর্ণনাকে 'দুর্ভাগ্যজনক' বলে অভিহিত করে।

গত জুলাইয়ে প্রকাশিত এএআইবি-র প্রাথমিক রিপোর্টে ককপিট ভয়েস রেকর্ডারের 'ব্ল্যাক বক্স'-এর একটি কথোপকথন উদ্ধৃত হয়। প্রতিবেদনে ক্যাপ্টেন সুমিত সাভারওয়াল এবং ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডারের মধ্যে কথোপকথনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে একজন পাইলট জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "আপনি কেন কেটে দিলেন?" এবং অন্যজন উত্তর দিয়েছিলেন, "আমি করিনি"। সেই থেকেই জল্পনা ছড়িয়েছে যে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়াই দুর্ঘটনার কারণ, এবং তা সম্ভবত মানবিক ত্রুটি।

কিন্তু বিমান সুরক্ষা এনজিও সেফটি ম্যাটার্স ফাউন্ডেশন অভিযোগ তুলেছে যে রিপোর্টে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করা হয়েছে। তাদের দাবি, ফুয়েল-সুইচ ত্রুটি ও বৈদ্যুতিক গোলযোগের মতো সিস্টেমগত সমস্যার উল্লেখ নেই। তদন্তকারীরা দ্রুত দায় চাপাচ্ছেন পাইলটদের ওপর। পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটির তিনজনই ডিজিসিএ-র কর্মী, ফলে নিরপেক্ষতা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সেই কারণেই এনজিওটি জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছে।

মামলাকারীর পক্ষের আইনজীবী সিনিয়র অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ আদালতে বলেন, “১০০ দিনেরও বেশি সময় কেটে গেছে। অথচ এখনও কেবল একটি প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যাতে কোনো সতর্কতা বা ভবিষ্যৎ করণীয় উল্লেখ নেই। এতে প্রতিদিন যাত্রীরা ঝুঁকির মুখে থাকছেন।”

তিনি অভিযোগ করেন, রিপোর্ট প্রকাশের আগেই বিদেশি সংবাদমাধ্যমে খবর ফাঁস হয় যে পাইলটদের দোষারোপ করা হবে। তাঁর বক্তব্য, “এটি অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন প্রচার।”

বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি এন. কোটিশ্বর সিংয়ের বেঞ্চ মন্তব্য করেছে, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি যৌক্তিক হলেও সব তথ্য প্রকাশ্যে আনা তদন্তে প্রভাব ফেলতে পারে। বিচারপতি কান্ত বলেন, “ধরা যাক রিপোর্টে বলা হল পাইলট দায়ী। সেই পরিবারের ওপর ভয়ঙ্কর মানসিক চাপ তৈরি হবে।”

তিনি আরও বলেন, “পাইলটের ভুল নিয়ে দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য ও তথ্য ফাঁস করা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।”

গত ১২ জুন আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড়ার কয়েক সেকেন্ড পরেই মাটিতে ভেঙে পড়ে এআই–১৭১। বোয়িং এই বিমানটিতে ছিলেন ২৩০ যাত্রী ও ১২ জন ক্রু। প্রাণ হারান ২২৯ যাত্রী ও সকল ক্রু সদস্য। এছাড়া দুর্ঘটনাস্থলের কাছে থাকা একটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের ১৯ জনও নিহত হন। কেবলমাত্র একজন যাত্রী বেঁচে যান।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in