লাদাখে অশান্তির জেরে গ্রেফতার সোনম ওয়াংচুক! 'র‌্যাঞ্চো'র বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে অভিযোগ

People's Reporter: ওয়াংচুককে গ্রেফতারের নেতৃত্ব দেন লাদাখ পুলিশের ডিজি এসডি সিংহ জামওয়াল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।
সোনম ওয়াংচুক
সোনম ওয়াংচুকফাইল ছবি
Published on

পূর্ণ রাজ্য করার দাবি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি লাদাখে। এই আবহে এবার বিশিষ্ট প্রকৌশলী, শিক্ষাবিদ ও সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচুককে গ্রেফতার করল পুলিশ। শুক্রবার দুপুর আড়াইটে নাগাদ লেহ-তে বাস্তবের র‌্যাঞ্চোকে তাঁর নিজের বাসভবন থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারি অভিযানে নেতৃত্ব দেন লাদাখ পুলিশের ডিজি এসডি সিংহ জামওয়াল। কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের প্রশাসন জানিয়েছে, তাঁর বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা আইন (এনএসএ) অনুযায়ী মামলা রুজু করা হয়েছে।

ওয়াংচুকের নেতৃত্বে চলা সংগঠন স্টুডেন্টস এডুকেশনাল অ্যান্ড কালচারাল মুভমেন্ট অফ লাদাখ (সেকমল)-এর এফসিআরএ লাইসেন্স সম্প্রতি বাতিল করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। অভিযোগ, বিদেশি অনুদান গ্রহণের ক্ষেত্রে নিয়ম লঙ্ঘন করেছে সংস্থাটি। তাঁর অপর সংগঠন হিমালয়ান ইনস্টিটিউট অফ অল্টারনেটিভস লাদাখ (এইচআইএএল) এবং সেকমল-এর আর্থিক কার্যক্রম নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। গত সপ্তাহেই তদন্তকারীরা সরকারি নির্দেশনা নিয়ে ওয়াংচুকের দফতরে যান।

বর্তমানে পৃথক রাজ্যের দাবিতে অশান্তি ছড়িয়েছে লাদাখের লেহ শহরে। পুলিশের গুলিতে পাঁচ বিক্ষোভকারীর মৃত্যু হয়েছে। ইঞ্জিনিয়র, গবেষক তথা সমাজকর্মী ওয়াংচুক লাদাখকে পূর্ণ রাজ্য হিসেবে ঘোষণা করা এবং এই অঞ্চলকে সংবিধানের ষষ্ঠ তফশিলের অন্তর্ভুক্ত করার দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চালাচ্ছেন। বুধবারের সহিংসতার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক গোটা ঘটনার জন্য ওয়াংচুককে দায়ী করেছে। এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "অনেক নেতা ওয়াংচুককে অনশন প্রত্যাহারের জন্য অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি তা না করে বিক্ষোভে উস্কানি দিয়েছেন। নেপালে জেন-জি বিক্ষোভের উল্লেখ করে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়ে গেছেন"।

ওয়াংচুক ও ‘লেহ অ্যাপেক্স বডি’-র কয়েকজন সদস্য এর আগেই ৩৫ দিনের অনশন শুরু করেছিলেন (১০ সেপ্টেম্বর থেকে)। তাঁদের মূল উদ্দেশ্য ছিল—লাদাখের মানুষদের সাংবিধানিক সুরক্ষা দেওয়া, পরিবেশ রক্ষা ও রাজনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করা। আন্দোলন যত জোরদার হচ্ছিল, প্রশাসনের চাপও তত বাড়ছিল বলে অভিযোগ। অনশন শেষ না হতেই বিদেশি অনুদান মামলায় তাঁর সংস্থাকে নিশানা করা হয়, আর বিক্ষোভে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পরই তাঁকে আটক করা হল।

বলিউডের জনপ্রিয় ছবি থ্রি ইডিয়টস-এর আমির খানের চরিত্র ‘র‍্যাঞ্চো’-র অনুপ্রেরণা ছিলেন এই সোনম ওয়াংচুক। বাস্তব জীবনে তিনি বিকল্প শিক্ষা ব্যবস্থা, টেকসই উন্নয়ন, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং লাদাখের তরুণ প্রজন্মকে বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনের দিকে টেনে আনার জন্য আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত। তবে বর্তমানে তাঁর পরিচয় ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক—‘শিক্ষক ও উদ্ভাবক’ থেকে সরে গিয়ে তিনি এখন সরকারের চোখে ‘অভিযুক্ত ও উস্কানিদাতা’।

প্রশাসনের বক্তব্য—জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনও ছাড় দেওয়া যাবে না। অপরদিকে, ওয়াংচুকের সমর্থকরা দাবি করছেন, তাঁকে পরিকল্পিতভাবে টার্গেট করা হচ্ছে যাতে লাদাখের সাংবিধানিক দাবির আন্দোলন স্তব্ধ হয়ে যায়। অনেকে মনে করছেন, দীর্ঘদিন ধরে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়া এক সমাজকর্মীর বিরুদ্ধে এনএসএ প্রয়োগ করা রাজনৈতিক বার্তাই বহন করছে।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in