আইনের অপব্যবহার হচ্ছে, স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা নয় - নির্দেশ শীর্ষ আদালতের

People's Reporter: ৯ ডিসেম্বর ভোরে নিজের বাড়িতেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ৩৪ বছর বয়সী অতুল। আত্মহত্যার আগে অতুল স্ত্রী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।
আইনের অপব্যবহার হচ্ছে, স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা নয় - নির্দেশ শীর্ষ আদালতের
ছবি - সংগৃহীত
Published on

বিবাহ সংক্রান্ত মামলায় আইন অপব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি সম্পর্কে কড়া বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ, স্বামী এবং শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে আইনের ধারা ৪৯৮(এ)-কে ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা যায় না। এই ধরণের মামলায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বেঙ্গালুরুর অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর শীর্ষ আদালতের এই রায় তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগারত্না এবং বিচারপতি এন কোটেশ্বর সিং-এর বেঞ্চ বিবাহ সংক্রান্ত তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের একটি রায় খারিজ করে দেয়। দুই বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৯৮(এ) ধারা বা ভারতীয় ন্যায় সংহিতার (BNS) ৮৬ ধারা স্ত্রীদের উপর স্বামী বা তাঁর আত্মীয়দের কোনও রকম নিষ্ঠুরতা বা অত্যাচারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, এই ধারার ক্রমাগত অপব্যবহার হচ্ছে। যা বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে অশান্তি আরও বাড়াচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টের বেঞ্চ বলে, ‘স্রেফ নাম উল্লেখ করে অভিযোগ করা হলে এবং সেসব অভিযোগের সপক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ না থাকলে, সেটি শাস্তিমূলক মামলার ভিত্তি হতে পারে না’। শীর্ষ আদালত আরও জানায়, ‘বিবাহ বিচ্ছেদের সংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই আইনের অপব্যবহারও বেড়েছে। কখনও কখনও স্ত্রীর পক্ষ থেকে অতিরিক্ত দাবিদাওয়া মেটানোর জন্য স্বামী ও তাঁর পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টির হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে এই ধারা’।

আদালত জানায়, অস্পষ্ট ও সাধারণ অভিযোগ করার মাধ্যমে আইনের অপব্যবহার হয় এবং এর ফলে স্বামীর পক্ষকে আইন-বহির্ভূতভাবে চরম চাপের মুখে পড়তে হয়। বেঞ্চ সতর্ক করেছে, স্পষ্ট প্রমাণ ছাড়া শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে মামলা চালানো উচিত নয়। তেলেঙ্গানা হাইকোর্ট থেকে এমনই এক মামলা সুপ্রিম কোর্টে ওঠায় শীর্ষ আদালত তা খারিজ করে জানায়, মামলাটি মূলত স্ত্রীর পক্ষ থেকে ব্যক্তিগত প্রতিশোধ চরিতার্থ করার জন্যই করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট এটিকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে উল্লেখ করে।

বেঙ্গালুরুর যুবক অতুল সুভাষের আত্মহত্যার ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সুপ্রিম কোর্টের এই রায় অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর ভোরে নিজের বাড়িতেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন ৩৪ বছর বয়সী অতুল। তিনি বেঙ্গালুরুতে কর্মরত ছিএ, পেশায় ইঞ্জিনিয়র। আত্মহত্যার আগে অতুল তাঁর স্ত্রী এবং স্ত্রীর পরিবারের বিরুদ্ধে মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলেছেন।

আত্মহত্যার আগে ৯০ মিনিটের একটি ভিডিও করেন অতুল। পাশাপাশি, ২৪ পাতার একটি সুইসাইড নোটও লেখেন তিনি। ভিডিও এবং সুইসাইড নোটের তথ্য অনুযায়ী, আদালতে ডিভোর্সের মামলা চলাকালীন অতুলের স্ত্রী নিকিতা সিঙ্ঘানিয়া তাঁকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছিলেন।

মৃতের ভাই বিকাশ কুমার জানান, ৮ মাস আগে অতুল ও স্ত্রী আলাদা থাকতে শুরু করেন ৷ অতুলের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টা থেকে টাকা পয়সার জন্য হেনস্থা, গার্হস্থ্য হিংসা, পণ চাওয়ার মতো মোট ৯টি মিথ্যা মামলা করা হয়। এমনকি অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য ৩ কোটি টাকা দাবি করেন তাঁর স্ত্রী৷ বিকাশের অভিযোগ, সেই ঘটনার পর মানসিক ও শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হয়ে পড়েন তাঁর দাদা। জানা যাচ্ছে ইতিমধ্যে অতুলের স্ত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।

জানা যাচ্ছে, ২০১৯ সালে অতুল এবং নিকিতা বিয়ে করেন। বিবাহের এক বছরের মাথায় তাঁদের একটি পুত্র সন্তান হয়। তবে ২০২১ সাল থেকে ছেলে নিয়ে অতুলের থেকে আলাদা থাকতে শুরু করেন নিকিতা।

(এখানে আত্মহত্যা প্রতিরোধ হেল্পলাইন নম্বর দেওয়া আছে। আপনি বা আপনার পরিচিত কারোর সহায়তার প্রয়োজন হলে অনুগ্রহ করে যোগাযোগ করুন। সর্বভারতীয় হেল্পলাইন নম্বর - ০২২-২৭৫৪৬৬৬৯)

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in