

গত বছর জানুয়ারিতে অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন হয়। তার ১৫ দিন আগে থেকেই গোটা অযোধ্যাকে সাজিয়ে ফেলা হয়েছিল। রাস্তা পরিস্কার, দেওয়াল রং করা ও তাতে নানা ছবি আঁকা, ফুলের মালা, লাইট লাগানো - এই সমস্ত কাজ করেছিলেন ঠিকেদাররা। সমস্ত খরচ করেছিল যোগী সরকার। এবার এই সাজানো নিয়েই কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খবর প্রকাশ্যে এল। উত্তরপ্রদেশ সরকারের অডিট রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০০ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে এই সাজগোজের অনুষ্ঠানে।
এই দুর্নীতি সামনে এনেছেন উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টি (এসপি) নেতা তেজ নারায়ণ পাণ্ডে, যিনি পবন পাণ্ডে নামেও পরিচিত। সম্প্রতি সাংবাদিক বৈঠক করে তিনি দাবি করেন, তাঁর হাতে রাজ্য সরকারের নিরীক্ষা (অডিট) রিপোর্ট রয়েছে, যেখানে অযোধ্যা পুরনিগমের একাধিক অনিয়মের বিস্তারিত উল্লেখ আছে।
পবন পাণ্ডের অভিযোগ, যোগী সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই অযোধ্যায় দুর্নীতি বেড়েছে। তাঁর বক্তব্য, প্রশাসন ও বিজেপি নেতা মিলে শহরের সাধারণ বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তাঁদের টাকা লুঠ করছে বেআইনিভাবে। তিনি সরাসরি অভিযুক্ত করেছেন পুরনিগমের কমিশনার বিশাল সিং এবং মেয়র মহন্ত গিরিশ পতি তিওয়ারিকে। তাঁর দাবি, এই দুই কর্মকর্তা ও তাঁদের ঘনিষ্ঠরা টেন্ডার বণ্টনের ক্ষেত্রে নিয়মভঙ্গ করে বিপুল আর্থিক অনিয়ম করেছেন। তিনি কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (CAG) দ্বারা পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের আহ্বান জানিয়েছেন।
পবন পাণ্ডে বলেন, “সরকার রামের নামে রাজনীতি করে, সেই সরকারই অযোধ্যার মানুষকে লুঠ করছে। রামের নামে ব্যবসা করছে ওরা, ভক্তিকে পুঁজির উৎস করছে।” তাঁর অভিযোগ, এক ব্যক্তি ইতিমধ্যেই ৬০ লক্ষ টাকার দুর্নীতির মামলায় জেলে গেলেও মেয়র এখনও নীরব। প্রাক্তন মন্ত্রী কিছুটা ব্যঙ্গের সুরে বলেছেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতি সপ্তাহেই অযোধ্যায় যান, কিন্তু তাঁর চোখের সামনেই এই লুঠ চলছে।"
পবন পাণ্ডে যে রিপোর্টটি প্রকাশ্যে এনেছেন, তাতে একাধিক আর্থিক অনিয়মের ইঙ্গিত মিলেছে।
রাস্তা পরিষ্কারের ভুয়ো বিল: মন্দির উদ্বোধনের সময় তিন মাসের জন্য ২৮ কিলোমিটার রাস্তা পরিষ্কারের বরাদ্দ হয়েছিল। কিন্তু পরদিনই নির্দেশ আসে, ১৫.৫ কিলোমিটার পর্যন্তই পরিষ্কার করা সম্ভব, কারণ বাকি ১২.৫ কিমিতে নির্মাণকাজ চলছিল। তবুও ২৮ কিমিরই সম্পূর্ণ বিল মিটিয়ে দেওয়া হয়।
সাজসজ্জার নামে অতিরিক্ত বিল: শহরের ২২টি মোড়ে বিশেষ সাজসজ্জার জন্য চুক্তি হয়। কিন্তু নিরীক্ষক সংস্থা পরে জানায়, ১৯টি মোড়ে কাজ হয়েছে। প্রতিটি মোড়ের জন্য বরাদ্দ ছিল প্রায় এক কোটি টাকা, অথচ টাকা দেওয়া হয়েছে ২২টির হিসাবেই।
অকার্যকর সৌরপ্যানেল: কানহা গোশালায় এক কোটি টাকার বেশি মূল্যের সৌর বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণ হয়নি, তার আগেই পুরো টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।
পবন পাণ্ডে জানান, তথ্য অধিকার আইনে (RTI) বহু আবেদন করলেও প্রশাসন মাত্র ১০২টির উত্তর দিয়েছে। বাকিগুলি গায়েব হয়ে যায়। তিনি বলেন, “আমরা সত্য জানতে চাইলে ফাইল উধাও হয়ে গেল। কোটি কোটি টাকার টেন্ডার দেওয়া হলো নিয়ম না মেনেই, ঈশ্বরের নামেও খেল হলো!”
এরপরেই সরকারকে কটাক্ষ করে পবন পাণ্ডে বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী প্রতি মাসে অযোধ্যায় যান, কিন্তু তাঁর অফিসাররা শহর লুঠ করে, আর তিনি শুধু লাড্ডু খান!” তিনি আরও দাবি করেন, পুরনিগমের সঙ্গে যুক্ত ‘এবি এন্টারপ্রাইজেস’ নামের একটি সংস্থা নিয়ম ভঙ্গ করে বারবার টেন্ডার পাচ্ছে, নতুন করে টেন্ডার ডাকা হয়নি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আসন্ন অযোধ্যা সফরের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আসার আগে দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন, না হলে এই ঘটনা ‘রামরাজ্যের’ নামে কলঙ্ক হয়ে থাকবে।”
অযোধ্যা পুরনিগমের অতিরিক্ত কমিশনার ড. নাগেন্দ্র নাথ জানিয়েছেন, “অডিট সব বিভাগেই নিয়মিত প্রক্রিয়া। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের নিরীক্ষাতে আপত্তি এসেছে, যা যাচাই করে উত্তর পাঠানো হবে। সম্ভবত কিছু টেকনিক্যাল ত্রুটি থেকে এই আপত্তিগুলি উঠেছে। তিন মাসের মধ্যে বিষয়টি নিষ্পত্তি হবে।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন