বিজেপি শাসিত রাজ্য মধ্যপ্রদেশের বিদিশায়, পূর্ত দফতরের (PWD) সামনে খুন হয়েছিলেন আরটিআই (RTI) কর্মী রঞ্জিত সোনি (Ranjeet Soni)। গত ২ জুন, বিকাল ৫ টা নাগাদ দিনের আলোয় এই মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ড রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ছড়ায়।
সম্প্রতি একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। তাতে জানা গেছে, সরকারি তথ্য পাওয়ার জন্য RTI আইনের বহুল ব্যবহার করেন রঞ্জিত সোনি। সরকারী তহবিলের অপব্যবহার বা দুর্নীতির নথি নিয়ে লোকায়ুক্ত (Lokayukta), পূর্ত দফতর (PWD) এবং মুখ্যমন্ত্রীর কার্যালয়সহ একাধিক জায়গায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন তিনি।
গত ১৯ জুন, একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম বিদিশায় গিয়ে রঞ্জিত সোনির খুনের তদন্ত চালায়। এই টিমে ছিলেন অঞ্জলি ভরদ্বাজ, রলি শিবহারে, অজয় দুবে, অমৃতা জোহরি এবং সন্তোষ মালব্য। তাঁরা খুন হওয়া জায়গা ছাড়াও সোনির বাসভবনে গিয়ে তাঁর স্ত্রী ও পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলেন। সেইসঙ্গে, ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম একজন আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেছে, যিনি সোনিকে আইনি পরামর্শ দিতেন। এছাড়া, সোনি খুন হওয়ার পর, সেই রিপোর্ট করেছিলেন এমন একজন স্থানীয় সাংবাদিকের বয়ানও নিয়েছে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং টিম।
আরটিআই কর্মী সোনির স্ত্রী জানিয়েছেন, প্রথমদিকে তাঁর স্বামী একজন ঠিকাদার (contractor) হিসাবে কাজ করতেন। তারপর, অন্যান্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যৌথভাবে সরকারী কাজ করতেন তিনি। এই তালিকায় যশবন্ত রঘুবংশী এবং এস. কুমার চৌবের নাম উঠে এসেছে। যাদের ইতিমধ্যে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সোনির স্ত্রী আরও জানিয়েছেন, কয়েক বছর আগে তাদের মধ্যে বিবাদের কারণে যৌথভাবে সরকারি ঠিকাদারির কাজ বন্ধ করে দিয়েছে তাঁরা।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘এটা স্পষ্ট যে, সরকারি দফতরের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার জন্য ‘তথ্যের অধিকার’ আইনের ব্যাপক ব্যবহার করছিলেন সোনি। স্থানীয় সাংবাদিকদের মতে, প্রায় ১৩০ টির বেশি RTIও অভিযোগ দায়ের করেছিলেন সোনি। যার মধ্যে অনেকগুলি PWD-তে দায়ের করা হয়েছিল। তাঁর দায়ের করা RTI আবেদনগুলি পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে তিনি এমনকিছু তথ্য চেয়েছিলেন, যে তথ্যগুলি RTI আইনের ৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট সরকারী কর্তৃপক্ষকেই সক্রিয়ভাবে প্রকাশ করার কথা ছিল।’
সোনির আইনজীবী জানিয়েছেন, RTI আবেদনগুলি প্রত্যাহার করার জন্য সোনিকে একাধিকবার হুমকি দেয় ঠিকাদারেরা, যাদের বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। এমনকি, এর আগেও PWD-এর অফিসে সোনিকে আক্রমণ করা হয়। এ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও দায়ের করেছিলেন তিনি।
গত ২ জুন, RTI কর্মী সোনিকে যেখানে খুন করা হয়েছে, তারপর থেকে তা সবসময় কড়া নিরাপত্তায় মোড়া থাকে। এই এলাকায় রয়েছে পিডব্লিউডি কার্যালয়, জেলা আদালত। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন বিভাগের অফিস রয়েছে এই এলাকায়।
জানা যাচ্ছে, মধ্যপ্রদেশে আরটিআই কর্মীদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে গোয়ালিয়র জেলায় এক দলিত আরটিআই কর্মীকে মারধর করে প্রস্রাব পান করতে বাধ্য করা হয়েছিল। ২০১৭ সালে গোয়ালিয়রের পাশেই মোরেনা জেলায় এক আরটিআই কর্মীকে অপহরণ করে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছিল।
- with inputs from NewsClick
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।