
সরকারি স্থানে, বিভিন্ন মন্দিরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ(RSS)-কে নিষিদ্ধ করার আলোচনা চলছে কর্ণাটকে। মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে এই প্রস্তাব দিয়েছেন রাজ্যের মন্ত্রী প্রিয়ঙ্ক খাড়গে।
সম্প্রতি শতবর্ষ উদযাপন করেছে আরএসএস। বর্তমানে কিছু রাজ্যে ও নির্দিষ্ট স্থানে এদের কার্যক্রমে ইতিমধ্যেই নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালে কেরালার ট্রাভাঙ্কোর দেবাস্বম বোর্ড মন্দির প্রাঙ্গণে আরএসএসের মহড়া ও বৈঠক নিষিদ্ধ করেছে।
সংবাদমাধ্যম ডেকান হেরাল্ডের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ৪ অক্টোবর কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকে চিঠি লেখেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গের ছেলে প্রিয়ঙ্ক খাড়গে। চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, “আরএসএস নামের একটি সংগঠন সরকারি ও অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল এবং সরকারি মাঠে নিজেদের শাখা পরিচালনা করে। স্লোগানের মাধ্যমে শিশু ও তরুণদের মনে সংবিধান ও দেশের ঐক্যের বিরুদ্ধে দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলছে। তাই আমি অনুরোধ করছি সরকারি ও অনুদানপ্রাপ্ত স্কুল, মাঠ, পার্ক, মন্দির, প্রত্নতত্ত্ব দফতরের স্থানসহ সব সরকারি জায়গায় আরএসএসের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার বা ‘বৈঠক’ কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হোক।”
মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া আশ্বাস দিয়েছেন, বিষয়টি নিয়ে “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা” নেওয়া হবে। এর আগে ১৯৪৮, ১৯৭৫ ও ১৯৯২ সালে মোট ৩ বার আরএসএস সর্বভারতীয় স্তরে নিষিদ্ধ হয়েছিল।
১৯৪৮: মহাত্মা গান্ধী হত্যার পর নাথুরাম গডসের আরএসএস যোগসূত্র সামনে আসায় সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল সংগঠনটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন।
১৯৭৫: ইন্দিরা গান্ধী ঘোষিত জরুরি অবস্থার সময় দ্বিতীয়বার সংঘের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, যা ১৯৭৭ সালে প্রত্যাহার করা হয়।
১৯৯২: অযোধ্যাতে বাবরি মসজিদ ভাঙার পর তৃতীয়বার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ১৯৯৩ সালে ট্রাইব্যুনালের সিদ্ধান্তে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হয়।
২০২৩ সালে, কেরালার ট্রাভাঙ্কোর দেবস্বম বোর্ড (টিডিবি) পরিচালিত মন্দিরগুলিতে আরএসএস-এর মহড়া, অস্ত্র প্রশিক্ষণের মতো যাবতীয় কার্যকলাপ নিষিদ্ধ করা হয়। এটি কার্যকর করার জন্য সার্কুলার জারি করে টিডিবি, যেখানে উল্লেখ ছিল, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখা এবং বিভেদ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে মন্দিরের সম্পত্তির ব্যবহার রোধ করার উদ্দেশ্যে এই নিষেধাজ্ঞা।
২০২৪ সালের জুলাইয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ৫৮ বছর পুরনো এক নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়, যা সরকারি কর্মচারীদের আরএসএস কার্যক্রমে অংশগ্রহণে বাধা দিত। এই নিষেধাজ্ঞা আরোপিত হয়েছিল ১৯৬৬ সালে। এর আগেই রাজস্থান, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ ও ছত্তিশগড়ে একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছিল।
যদি কর্ণাটক সরকার প্রস্তাবটি অনুমোদন করে, তবে সে রাজ্যে আরএসএস সরকারি স্কুল, পার্ক ও মন্দিরে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। যার আগামীদিনে কর্ণাটক তথা জাতীয় রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলেই অনুমান করা হচ্ছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন