রাজস্থানে রাজ্যসভা নির্বাচনের চতুর্থ আসনের জন্য হাই প্রোফাইল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ঘোড়া কেনাবেচা আটকাতে কংগ্রেস এবং বিজেপি তাদের বিধায়কদের উদয়পুর এবং জয়পুরে নিয়ে যাবে। সূত্র অনুসারে, লড়াইয়ের ময়দানে নির্দল প্রার্থী হিসেবে বিজেপি মনোভাবাপন্ন মিডিয়া ব্যারন সুভাষ চন্দ্রের প্রবেশের পর নির্বাচন আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। কংগ্রেসের প্রমোদ তিওয়ারির বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সুভাষ চন্দ্র।
সরকারী সূত্র অনুসারে, দুই দলই তাদের বিধায়কদের নিয়ে নিজেদের ঘেরাটোপে রাখার প্রস্তুতি শুরু করেছে। কংগ্রেস তার দুই দিনের কর্মশালা (১ ও ২ জুন) শেষ হওয়ার পর ৩ জুন থেকে তার বিধায়কদের উদয়পুরে নিয়ে যাবে। বিজেপি ৫ জুন তার বিধায়কদের নিয়ে সভা করবে এবং তারপরে তার বিধায়কদের জয়পুর হোটেলে নিয়ে যাবে।
জানা গেছে দিন কয়েক আগে উদয়পুরে যে হোটেলে কংগ্রেসের চিন্তন শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিলো কংগ্রেস বিধায়কদের সেখানেই নিয়ে যাওয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলট জানিয়েছেন, বিধায়কদের শিবিরে নিয়ে যাওয়া হবে, কারণ তাঁরা নিজেরাই জানিয়েছেন তাঁদের প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। তিনি বলেন, কংগ্রেস হোক বা বিজেপি, বিধায়কদের একসঙ্গে রাখা জরুরি।
প্রসঙ্গত, সুভাষ চন্দ্র মনোনয়ন জমা দেবার পর উঠে আসছে একাধিক রাজনৈতিক সমীকরণ। প্রাথমিকভাবে, বিজেপি সুভাষ চন্দ্রকে দলীয় প্রার্থী হিসাবে ঘোষণা করেছিল। যদিও এর কিছু পরেই, তিনি নির্দল প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার কথা ঘোষণা করেন।
সূত্র অনুসারে, রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টি (আরএলপি) শুধুমাত্র নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করবে কিন্তু বিজেপিকে নয়। তাই চন্দ্রকে বিজেপি-পন্থী নির্দল প্রার্থী হিসাবে প্রার্থী করা হয়েছে।
রাজস্থান বিধানসভায় আরএলপির তিনটি আসন রয়েছে। বিধানসভায় বিজেপির আসন ৭১টি। যার মধ্যে ৪১ ভোট নিয়ে বিজেপির প্রথম প্রার্থী ঘনশ্যাম তিওয়ারীর জয় নিশ্চিত। অবশিষ্ট ৩০ সদস্যের সাথে, ৩ আরএলপি সদস্য সমর্থন করলে এটি ৩৩ হতে পারে। যদিও তাতে চন্দ্রের জয় নিশ্চিত হবে না। কারণ চন্দ্রের জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ৪১ ম্যাজিক ফিগার ছুঁতে প্রয়োজন আরও ৮টি ভোট।
রমিলা খাদিয়া এবং বলজিৎ যাদব সহ কয়েকজন নির্দল কংগ্রেসের প্রতি বিরক্ত হওয়ায় বিজেপি সুভাষ চন্দ্রের জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। অন্যদিকে, নির্দল বিধায়ক ওমপ্রকাশ হুডকার সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বসুন্ধরা রাজের ভাল সম্পর্ক রয়েছে। সুভাষ চন্দ্র এখানে আসার পর রাজের সাথে দেখা করেছিলেন, তাই হুডকার সমর্থন চন্দ্রের দিকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বর্তমানে ভারতীয় ট্রাইবাল পার্টি (বিটিপি) বিধায়কদের সঙ্গেও কংগ্রেসের সম্পর্ক খারাপ। যে কারণে কয়েকজন বিএসপি বিধায়ক কংগ্রেসকে সমর্থন করেছিলেন। অন্যদিকে কংগ্রেসের ৩ প্রার্থীর জয় নিশ্চিত করতে ১২৩ ভোটের প্রয়োজন। যেখানে কংগ্রেস পিছিয়ে রয়েছে ১৪ ভোটে।
৬জন বিএসপি সদস্য যারা কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন তাঁরা এবং ১০৮ জন কংগ্রেস বিধায়ক এবং একজন আরএলডি প্রার্থী এই জোটকে সমর্থন করছেন। এছাড়া ১৩জন নির্দল, ২ জন বিটিপি, ২জন সিপিএম বিধায়ক আছেন। যাদের দুই দলই বাজিয়ে দেখতে চাইছে। একদিকে কংগ্রেসের সামগ্রিকভাবে তার তৃতীয় প্রার্থীর জন্য ১৪টি ভোট দরকার এবং বিজেপি তার দ্বিতীয় প্রার্থীর জন্য ৮টি ভোটের প্রয়োজন।
মুখ্যমন্ত্রীর উপদেষ্টা স্যানিয়াম লোধা এবং কংগ্রেস বিধায়ক ভারত সিং ইতিমধ্যেই রাজ্যসভা নির্বাচনে বহিরাগতদের প্রার্থী করার বিরুদ্ধে তাঁদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
রাজস্থানে রাজ্যসভা নির্বাচনের আগে তৈরি হওয়া এই জটিল পরিস্থিতিতে কংগ্রেস তার বিধায়কদের নিয়ে চিন্তিত। কারণ এর আগে শচীন পাইলট গোষ্ঠীর বিদ্রোহের সময় যে ১৯ জন কংগ্রেস বিধায়ক তাঁর সঙ্গে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁরা বিদ্রোহ মিটে যাবার পরেও এখনও পুরো শান্ত হয়ে গেছেন এমনটা নয়। আসন্ন রাজ্যসভা নির্বাচনে তাঁদের ভূমিকা ঠিক কী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট চিন্তিত কংগ্রেসের রাজ্য নেতৃত্ব।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।