RS Election: রাজস্থানে ক্রস ভোটিং-এর জের - সাসপেন্ড বিজেপি বিধায়ক শোভারানী, পাল্টা প্রতিক্রিয়া

শনিবার শোভারানীকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে বিজেপি। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এরপরেই ফেসবুকে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন বিজেপি বিধায়ক শোভারানী কুশওয়াহা।
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে শোভারানী কুশওয়াহা
বিজেপি সভাপতি জে পি নাড্ডার সঙ্গে শোভারানী কুশওয়াহাফাইল ছবি, শোভারানী কুশওয়াহার ফেসবুক পেজ থেকে সংগৃহীত
Published on

দলীয় নির্দেশ অমান্য করে শুক্রবার রাজ্যসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থীকে 'ভোট' দিয়েছিলেন ঢোলপুরের বিজেপি বিধায়ক শোভারানী কুশওয়াহা। তার জেরে শনিবার তাঁকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে বিজেপি। এক সপ্তাহের মধ্যে তাঁকে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত পাঁচ বছর আগে বিজেপি বিধায়ক শোভারানীর স্বামী বি এল কুশওয়াহার বিধায়ক পদ বাতিল হয়েছিল এবং বর্তমানে তিনি জেলে বন্দী রয়েছেন। তারপরে আবার 'ক্রস ভোটিং'-য়ের মতো ঝুঁকি নিয়েছেন শোভারানী। যা ঘিরে রাজস্থানের রাজ্য রাজনীতিতে জোর চর্চা শুরু হয়েছে। জানা যাচ্ছে, শোভারানীর এই 'ক্রস ভোটিং'-এর সঙ্গে তাঁর স্বামীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের একটি যোগসূত্র আছে।

ঘটনা আসলে কি? ২০১২ সালে একটি 'অনার কিলিং' মামলায় শোভারানীর স্বামী বি এল কুশওয়াহাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় সেশন আদালত। ২০১৬ সালে ডিসেম্বরে একই রায় বহাল রাখে অতিরিক্ত দায়রা আদালত। বিচারপতি সেলিম বদর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ (হত্যা) এবং ১২০-বি (ষড়যন্ত্র) ধারায় তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করেন। এ সময় বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) ঢোলপুরের বিধায়ক ছিলেন বি এল কুশওয়াহা।

এরপর ২০১৬ সালের ৮ ডিসেম্বর বি এল কুশওয়াহার বিধায়ক পদ বাতিল হয়। ভারতীয় সংবিধানের ১৯১ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধি আইনের ৮ নম্বর ধারায় বি এল কুশওয়াহ'র বিধায়ক পদ বাতিল করেন রাজস্থান বিধানসভার স্পিকার কৈলাশ মেঘওয়াল। ফলে ঢোলপুর বিধানসভা আসন খালি হয়। তবে পরিস্থিতি বুঝে এসময় তাঁর স্ত্রী শোভারানীকে এই কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে বিজেপি এবং তিনি জিতে যান।

২০১৮ সালে বিধানসভা নির্বাচনে আবার বিজেপির টিকিটে জেতেন শোভারানী। কিন্তু, সদ্য সমাপ্ত রাজ্যসভা নির্বাচনে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে কংগ্রেস প্রার্থীকে ভোট দিয়েছেন তিনি।

কেন এই সিদ্ধান্ত ? কি জানিয়েছেন বিজেপি বিধায়ক শোভারানী কুশওয়াহা?

শনিবার, নিজের ফেসবুক পেজে শোভারানী লিখেছেন, '২০১৭ সালে ঢোলপুর উপনির্বাচনে আমি এবং আমার কুশওয়াহা সম্প্রদায় বিজেপিতে যাইনি। তবে আমার পরিবারকে ধ্বংস করার পরে যখন তাঁরা অনুভব করেছিল যে, ঢোলপুর জেলার পাশাপাশি পুরো রাজস্থানের কুশওয়াহা সমাজ বিজেপির হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, তখন বিজেপি সভাপতি নিজেই আমাদের কাছে এসেছিলেন।'

তিনি অভিযোগ করেছেন, 'বিজেপি সভাপতি নিজে এসে আমাদের সমাজের ২০ জন প্রবীণ ও যুবকের সামনে যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তার একটিও পূরণ হয়নি। তাই যে মহান ব্যক্তি আমাদেরকে বিজেপিতে নিয়ে গিয়েছিলেন, তাঁকে বিজেপি হাইকমান্ডের জিজ্ঞাসা করা উচিত, কেন আমাদের সঙ্গে এমন করা হল।'

একইসঙ্গে, নিজ দলের বিরুদ্ধে আরও বেশ কয়েকটি অভিযোগ তুলেছেন বিজেপির শোভারানী।

তিনি লিখেছেন, ঢোলপুর নগর পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচনে আমার সমর্থক এবং আগরওয়াল সমাজের রাজ্য সভাপতি শ্রী গিরিশ গর্গজী'র পুত্রবধূকে বিজেপি থেকে সিটি কাউন্সিলের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী করা হয়েছিল। জয়ের জন্য আমাদের যথেষ্ট সংখ্যা ছিল। কিন্তু, রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতারা আমাদের বিজয়ী কাউন্সিলরদের কংগ্রেসে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের চেয়ারম্যান বানিয়েছে। বিষয়টি কেন্দ্রকে জানানোর পরেও কোনও রাজ্য নেতাদের কাউকেই সাসপেন্ড করা হয়নি, নোটিশ ধরানো হয়নি।

শুধু তাই নয়, সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত সমিতি নির্বাচনে, আমি লোধা সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তি নভল লোধাকে বিজেপির প্রধান প্রার্থী করেছিলাম ঢোলপুর পঞ্চায়েত সমিতি থেকে, কিন্তু বিজেপির জাতীয় নেতারা ইচ্ছাকৃতভাবে নিজেদের কর্মীদের দিয়ে তাকে পরাজিত করেছে। এখন বলুন, এই পরিস্থিতিতে কোন কর্মী বা নেতা কাজ করতে চাইবেন ?

এরপরেই তিনি যোগ করেছেন, এবারের রাজ্যসভা নির্বাচনে বিজেপির একমাত্র প্রার্থী ছিলন ঘনশ্যাম তিওয়ারিজী। কিন্তু, আমাদের বিশ্বাস না রেখে বলা হয়েছিল যে - 'নির্দল প্রার্থী'কে ভোট দিতে হবে, তাও সেই ব্যাক্তিকে যিনি ২০১৪ সালে সারা দেশে আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।

একইসঙ্গে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিজেপি বিধায়ক শোভারানী লিখেছেন, 'আমাকে ছেড়ে ২০২৩ সালের জন্য বিজেপি এমন একজন কুশওয়াহা দাস খুঁজুক, যাকে তাঁরা তাদের হ্যাঁ-তে হ্যাঁ মেলানোয় রাজী করাতে পারবে।'

শেষে তিনি যোগ করেছেন, 'আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ, তবে দলের বিরুদ্ধে কাজ করা অন্য বড় নেতাদের ক্ষেত্রেও একই সততা দেখালে সাধারণ কর্মীরা খুশি হবেন।'

প্রসঙ্গত, গতকাল বিজেপির রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়া (Satish Poonia) জানিয়েছেন, বিধায়ক শোভারানী কুশওয়াহা ভুল করেছেন। ক্রস ভোটিংয়ের জন্য শোভা রানীর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে? এই প্রশ্নের উত্তরে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সতীশ পুনিয়া জানিয়েছিলেন, 'বিধায়কদের সঙ্গে কথা বলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন বিরোধী দলনেতা।' তারপরেই শোভারানীকে দল থেকে সাসপেন্ড করেছে বিজেপি।

আর সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফেসবুকে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন সাসপেন্ডেড বিজেপি বিধায়ক।

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in