মহারাষ্ট্রে তরুণী চিকিৎসকের আত্মঘাতীতে গ্রেফতার এক! এখনও পলাতক মূল অভিযুক্ত এসআই

People's Reporter: বাঁ হাতের তালুতে লেখা ছিল, ‘‘ও আমাকে চার বার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ও আমাকে ধর্ষণ, মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করেছে।’’
মহারাষ্ট্রে তরুণী চিকিৎসকের আত্মঘাতীতে গ্রেফতার এক! এখনও পলাতক মূল অভিযুক্ত এসআই
ছবি - প্রতীকী
Published on

মহারাষ্ট্রের তরুণী চিকিৎসকের আত্মঘাতীর ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ফলটনের একটি হোটেল কক্ষ থেকে উদ্ধার হয়েছে ওই চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। মৃত্যুর আগে তিনি নিজের বাঁ হাতের তালুতে লিখে গিয়েছেন দুই অভিযুক্তের নাম। অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে এক পুলিশ আধিকারিকের যৌন নিগ্রহ ও মানসিক নির্যাতনের শিকার ছিলেন তিনি। এই ঘটনায় একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই তরুণীর বাড়িওয়ালার পুত্র প্রশান্ত বঙ্করকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে শনিবার সকালে জানিয়েছে সাতারার পুলিশ সুপার তুষার দোশি।

সাতরার ফলটনের উপ-জেলা হাসপাতালের মেডিক্যাল অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন ওই মহিলা চিকিৎসক। গত বৃহস্পতিবাত রাতে ফলটনের একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয় তরুণী চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ। বাঁ হাতের তালুতে লিখে রেখে গিয়েছিলেন অভিযুক্ত দু'জনের নাম। যার মধ্যে প্রথম জন পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টর। লেখা ছিল, ‘‘পুলিশ ইনস্পেক্টর গোপাল বাদনেই আমার মৃত্যুর কারণ। ও আমাকে চার বার ধর্ষণ করেছে। পাঁচ মাসেরও বেশি সময় ধরে ও আমাকে ধর্ষণ, মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতন করেছে।’’ এছাড়া, ফলটনের যে বাড়িতে তরুণী ভাড়া থাকতেন তাঁর মালিকের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ আনা হয়েছে।

এমনকি চিকিৎসকের পরিবারের তরফে অভিযোগ তোলা হয়েছে, গত ১৯ জুন ফলটনের গ্রামীণ পুলিশের দু’জনের বিরুদ্ধে হেনস্থার অভিযোগ করে পুলিশ আধিকারিককে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। জানা গেছে, সেই সময় গ্রামীণ পুলিশের তিন পুলিশকর্তার বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। তরুণী চিকিৎসকের আবেওদন ছিল, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যেন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু পুলিশের তরফে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

এই অভিযোগ সামনে আসার পরেই অভিযুক্ত ওই এসআইকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তিনি এখনও পলাতক। তরুণীর দেহ পাঠান হয়েছে ময়নাতদন্তের জন্য।

অন্যদিকে, তরুণীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরেই পরিবারের পক্ষ থেকে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ তোলা হয়েছে। পরিবারের দাবি, চাপ দিয়ে অনৈতিক কাজ করানো হত তাঁকে। এমনকি ভুয়ো মেডিক্যাল রিপোর্ট বানানোর অভিযোগও তুলেছে তাঁর পরিবার। কোনও রকম শারীরিক পরীক্ষা ছাড়া ওই সমস্ত রিপোর্ট লিখতে বাধ্য করা হত তাঁকে। দেওয়া হত হুমকিও। হাসপাতালের আধিকারিকদের চিঠি লিখেও কোনও লাভ হয়নি।

এমনকি চার পাতার একটি চিঠি উদ্ধার হয়েছে মৃত চিকিৎসকের ঘর থেকে। যেখানে উঠে এসেছে একজন সাংসদের নাম। যদিও তাঁর নাম উল্লেখ করা হয়নি। তবে এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ভুয়ো রিপোর্ট লেখার জন্য চিকিৎসককে চাপ দেওয়া হত। এই কাজ করতে না চাইলে মূল অভিযুক্ত সাব-ইনস্পেক্টর এবং অন্যরা তাঁকে হুমকি দিতেন। এমনকি সাংসদকে ফোন করে চিকিৎসককে হুমকি দেওয়া হত বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অন্যদিকে, এই ঘটনায় রাজনৈতিক উত্তেজনা বেড়েছে। মহারাষ্ট্রের সরকারের তরফে ইতিমধ্যেই ওই পুলিশ আধিকারিককে বরখাস্ত করা হয়েছে। পাশাপাশি, গোটা ঘটনার দৃঢ় পদক্ষেপ করার আশ্বাস দিয়েছে। তারা জানিয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছেন। এমন ভয়ঙ্কর এবং স্পর্শকাতর ঘটনায় জড়িত কোনও দোষী ছাড় পাবেন না। আইনত কঠোর শাস্তি হবে তাঁদের।

যদিও বিরোধীদের দাবি, এই পদক্ষেপ যথেষ্ট নয়। মহারাষ্ট্রের কংগ্রেস নেতা বিজয় নামদেবরাও ওয়াদেত্তিওয়ার সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, ‘‘রক্ষকই ভক্ষক হয়ে ওঠেন! পুলিশের কর্তব্য হল নাগরিককে রক্ষা করা। কিন্তু তারা নিজেরাই যদি একজন মহিলা চিকিৎসককে শোষণ করে, তা হলে ন্যায়বিচার কী ভাবে প্রতিষ্ঠিত হবে? এই মেয়েটি আগে অভিযোগ দায়ের করার পরেও কেন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি? মহাযুতি জোট সরকার বারবার পুলিশকে রক্ষা করছে। যার ফলে রাজ্যে পুলিশি অত্যাচার বৃদ্ধি পেয়েছে।’’ তিনি আরও লেখেন, ‘‘এই মামলায় শুধুমাত্র তদন্তের নির্দেশ দেওয়াই যথেষ্ট নয়। ওই পুলিশ আধিকারিকদের অবিলম্বে চাকরি থেকে সরানো উচিত। অন্যথায় তাঁরা তদন্তপ্রক্রিয়া প্রভাবিত করবেন।’’

SUPPORT PEOPLE'S REPORTER

ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in