
বিজ্ঞাপনের ট্যাগ লাইন ‘সহি হ্যায়’। অথচ একদম শেষে ‘বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে। অর্থাৎ একই বিজ্ঞাপনে পরস্পর বিপরীতমুখী দুই লাইন। এই অভিযোগে সম্প্রতি মিউচুয়াল ফান্ডের বিরুদ্ধে জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল। ‘বিভ্রান্তিকর এবং প্রতরণামূলক’ প্রচার বন্ধ করার দাবি জানানো হয়েছে আবেদনে। মামলায় নাম জড়িয়েছে ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ’ বোর্ড অফ ইন্ডিয়া’ (সেবি) এবং মিউচুয়াল ফান্ডের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন অফ মিউচুয়াল ফান্ডস ইন ইন্ডিয়া’ (অ্যামফি) –এর।
গত ১৮ ডিসেম্বর বোম্বে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন এক ব্যক্তি। আবেদনকারীর প্রশ্ন, মিউচুয়াল ফান্ড সঠিক বিনিয়োগ হলে তা বাজারগত ঝুঁকিসাপেক্ষ কী করে হয়? তাঁর অভিযোগ, বেপরোয়া ভাবে প্রচার করছে অ্যামফি। বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষার কথা ভাবা হচ্ছে না। ফলে লগ্নিকারীদের আর্থিক দিক থেকে লোকসানের আশঙ্কা বাড়ছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া এবং সেবির বিজ্ঞাপনের তুলনা টেনেছেন মামলাকারী। তাঁর যুক্তি, সরকারি সংস্থা বা সরকারি সংস্থার সঙ্গে যুক্ত কোনও সংগঠন বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিজ্ঞাপন করে না। জনতাকে সতর্ক বা শিক্ষিত করে তোলাই কাজ। তাঁর অভিযোগ, অ্যামফির বিজ্ঞাপনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য রয়েছে।
মামলাকারীর দায়ের করা পিটিশনে বলা হয়েছে, ‘অ্যামফির বিজ্ঞাপনে বিনিয়োগকারীদের শিক্ষা বা সচেতনতামূলক কোনও উপাদান নেই। সেখানে মিউচুয়াল ফান্ডের বৈশিষ্ট্য বা সীমাবদ্ধতার কথা বলা হচ্ছে না। কোনও ভিত্তি ছাড়াই মিউচুয়াল ফান্ডকে ‘সহি হ্যায়’ বলে ট্যাগলাইন জুড়ে দেওয়া হচ্ছে। নৈতিক দিক থেকে এটি সম্পূর্ণ অনুচিত’। পিটিশনে আরও বলা হয়েছে, অ্যামফি হল মিউচুয়াল ফান্ডের একটি সংগঠন। ফলে শুধুমাত্র তার সদস্যদের কথা মাথায় রেখে বিজ্ঞাপন করছে এই সংস্থা। তাঁদের লাভের জন্যেই মিউচুয়াল ফান্ডকে ‘সহি হ্যায়’ বলা হচ্ছে।
জানা গেছে, মামলাকারী পেশায় একজন চার্টার্ড অ্যাকাউট্যান্ট (সিএ)। সূত্রের খবর, বিষয়টি শুনতে রাজি হয়েছে বোম্বে হাইকোর্ট। এমনকি অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করেছে আদালত। সেবি ও অ্যামফিকে নোটিশ জারিরও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।মিউচুয়াল ফান্ডের বিজ্ঞাপন করেন একাধিক জনপ্রিয় ব্যক্তি। সেই তালিকায় আছেন সচিন তেন্ডুলকার থেকে রোহিত শর্মাও। যদিও পিটিশনে তাঁদের নাম নেই বলেই জানা গেছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে বেড়েছে মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগের পরিমাণ। ২০১৯ সালে মোট বিনিয়োগের অঙ্ক ছিল ২৬ লক্ষ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি বছর মে মাসে তা বেড়ে হয়েছে ৬৭ লক্ষ ২৬ হাজার কোটি টাকা। এমনকি সম্প্রতি স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও একই তথ্য দেওয়া হয়েছে। এসবিআই-এর তথ্য বলছে, মুল্যবৃদ্ধির সঙ্গে লড়াইয়ের কথা জেনেও মিউচুয়াল ফাণ্ড এবং স্টকে লগ্নির দিকে ঝুঁকছেন বিনিয়োগকারীরা। যার ফলে কমছে ব্যাঙ্ক বা পোষ্ট অফিসে বিনিয়োগের অঙ্ক।
১৯৯৫ সালের ২২ অগস্ট আত্মপ্রকাশ করে মিউচুয়াল ফান্ডের সংগঠন অ্যামফি। বর্তমানে এর সদস্যসংখ্যা ৪৪। অ্যামফির প্রতিটি সদস্যের সেবির রেজিস্ট্রেশন রয়েছে। সংগঠনটির সিইও হলেন এন এস ভেঙ্কটেশ। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর থেকে ওই পদে রয়েছেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন