'গণতন্ত্রের হত্যা!' জন সূরজের তিন প্রার্থীর মনোনয়ন প্রত্যাহারের পরেই BJP-কে দুষলেন সুপ্রিমো পিকে

People's Reporter: জন সূরজের তিন প্রার্থী - দানাপুরের মুতুর শাহ, ব্রহ্মপুরের সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি এবং গোপালগঞ্জের শশী শেখর সিনহা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন।
প্রশান্ত কিশোর
প্রশান্ত কিশোরছবি - সংগৃহীত
Published on

ক্রমশ রাজনৈতিক পারদ চড়ছে ভোটের বিহারে। প্রশান্ত কিশোরের দল জন সুরাজ পার্টির তিন প্রার্থী মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রশান্ত কিশোর ওরফে পিকের দাবি, বিজেপির চাপ এবং ভয় দেখানোর জন্যই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন তাঁরা। পিকের কথায়, “জন সূরজের নেতা পালাচ্ছেন না, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে।" এমনকি এবিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হবেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

জন সূরজের তিন প্রার্থী - দানাপুরের মুতুর শাহ, ব্রহ্মপুরের সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি এবং গোপালগঞ্জের শশী শেখর সিনহা মনোনয়ন প্রত্যাহার করেছেন। প্রশান্ত কিশোরের অভিযোগ, বিজেপির হুমকি ও প্রলোভনের মুখে মনোনয়ন তুলে নিতে বাধ্য হয়েছেন তাঁরা।

সম্প্রতি এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে পিকে অভিযোগ করেন, “গত কয়েক বছরে বিজেপি এমন ভাবমূর্তি তৈরি করেছে যে, যেই জিতুক, সরকার গঠন করবে বিজেপি-ই। এখন তারাই ভয় পেয়েছে। জন সূরজকে ‘ভোট কাটার দল’ বলে যারা উপহাস করেছিল, আজ সেই দলের ত্রাসে রয়েছে এনডিএ।”

এখানেই শেষ নয়। তিনি আরও বলেন, “বছরের পর বছর মানুষ বিজেপি-লালু-নিতীশের ভয় দেখানো রাজনীতির ফাঁদে বন্দি ছিল। কেউ লালুর ‘জঙ্গল রাজ’-এর ভয় দেখিয়ে ভোট নেয়, কেউ আবার বিজেপির নামে ভয় দেখায়। কিন্তু এবার মানুষ নতুন বিকল্প পেয়েছে 'জন সূরজ'। এই বিকল্পই মুক্তি দেবে বিগত ৩০ বছরের দাসত্ব থেকে।”

এরপরেই দানাপুর প্রসঙ্গে পিকে বলেন, “মহাগঠবন্ধনের প্রার্থী সেখানে এক ‘বাহুবলি’। বিজেপি মানুষকে ভয় দেখিয়ে বলে, 'আমাদের ভোট না দিলে তোমাদের জীবন দুর্বিষহ করে দেবে ওরা।' কিন্তু এ বার দানাপুরের মানুষ ভয় না পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে ভোট দিতে চেয়েছিল।” তাঁর দাবি, মুতুর শাহ জন সূরজের প্রতীক হাতে নিলেও মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি।

অন্যদিকে বিজেপির দাবি, মুতুর শাহকে আরজেডি প্রার্থী ঋতলাল যাদবের অনুগামীরা অপহরণ করেছে। কিন্তু পিকের পাল্টা দাবি, “মুতুর শাহ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের সঙ্গে রয়েছেন! এটাই প্রমাণ করে তাঁর কাছে কী বিকল্প রয়েছে।”

ব্রহ্মপুরের ঘটনাও কম বিতর্কিত নয়। পিকের দাবি, “সত্যপ্রকাশ তিওয়ারি তিন দিন প্রচার চালিয়ে হঠাৎ মনোনয়ন প্রত্যাহার করলেন। কারণ? বিজেপির চাপে। লজপা(রামবিলাস)-এর প্রার্থী হুলাস পান্ডে যে কতটা শক্তিশালী, তা সবাই জানে।” তাঁর কথায়, “জন সূরজের নেতা পালাচ্ছেন না, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হচ্ছে। প্রার্থীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হচ্ছে।”

গোপালগঞ্জের ঘটনাও প্রায় একই। এনিয়ে পিকে বলেন, “শশী শেখর সিনহা নিয়মিত পার্টি মিটিংয়ে অংশ নিতেন। রাত ৮টা পর্যন্ত প্রচার চালিয়েছিলেন। কিন্তু রাত ১১টার পর বিজেপির এক বিধায়ক এবং কয়েক জন নেতা গিয়ে তাঁকে মনোনয়ন তুলতে বাধ্য করেন।”

এরপরেই পিকে বলেন, "জন সূরজের ২৪০ জন যোদ্ধা এখনও লড়াইয়ের ময়দানে আছেন। এনডিএ যতই ভয় দেখাক বা প্রার্থী কিনে নিক, আমরা পিছপা হব না। ১৪ নভেম্বর সব স্পষ্ট হয়ে যাবে।"

প্রশান্ত কিশোর বলেন, “বিহারের জনগণ জানুন, এটা প্রার্থীদের পালানো নয়, ভয় দেখিয়ে তাদের সরিয়ে দেওয়া। বিজেপি চাইছে ভালো, নির্ভীক মানুষ রাজনীতিতে না আসুক। তারা ‘বাহুবলি’ বা ‘বালি মাফিয়া’দের ভয় পায় না, ভয় পায় ডাক্তার, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সমাজকর্মীদের।”

এরপরেই সলমান খানের জনপ্রিয় ছবি 'দাবাং'য়ের একটি জনপ্রিয় সংলাপ উদ্ধৃত করে পিকে বলেন, "ওরা থাপ্পড়ের ভয় পায় না, ভালো মানুষের ভয় পায়। এটাই জন সূরজের ভয়। আমরা রাজনীতির বাইরে থাকা সৎ মানুষদের প্রার্থী করেছি। এখন তাঁদের পরিবারকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে।" তাঁর প্রশ্ন, “যদি প্রার্থীরাই নিরাপদ না থাকেন, তাহলে ভোটাররা কতটা নিরাপদ?”

কটাক্ষের সুরে তিনি বলেন, “দেশের গৃহমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রী যদি প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীকে ফোন করে মনোনয়ন তুলতে বলেন, তাহলে তা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জার। নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ জানাব, কিন্তু ওরা সরকারের কথাই শুনবে! সেটাও আমরা জানি।”

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in