
কেরালার এর্নাকুলামের এলুরের কাছে মুপ্পাথাদমে একটি টালির বাড়ি কার্যত এখন দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। কারণ সেখানে বসবাস করেন ধারাক্ষা পারভীন। ১২ বছর আগে যিনি বিহার থেকে কেরালায় আসেন উন্নত জীবনযাপনের আশায়। সম্প্রতি সেই পরিযায়ী মেয়ের জীবনকাহিনী কেরালার স্কুলের পাঠ্যপুস্তকে যোগ করা হয়েছে। এরপরে তাঁকে অভিনন্দন জানাতে যাচ্ছেন বহু মানুষ।
১২ বছর আগে উন্নত জীবন যাপনের জন্য পরিবারের সাথে কেরালায় আসেন ধারাক্ষা। এক বন্ধুকে লেখা তাঁর শৈশবের স্মৃতিকথা সম্প্রতি কেরালার ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে যোগ করা হয়েছে। যেখানে উল্লেখ আছে, বিহারে তাঁর শৈশব জীবন কেমন কেটেছে এবং কেরালায় চলে আসার পর তাঁর জীবন কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছিল।
মালায়ালম ভাষায় লেখা তাঁর স্মৃতিকথা, থোঝিলিন্টে রুচি, ভাষায়ুদেয়ুম (যার অর্থ "শ্রম ও ভাষার স্বাদ")-তে তিনি উল্লেখ করেছেন, দারভাঙ্গায় তাদের আদি গ্রামে জীবিকা অর্জনের কোনও নির্দিষ্ট পন্থা ছিল না। কোনও উপযুক্ত শিক্ষাগত পরিকাঠামোও ছিল না। তাঁর দরিদ্র পরিবার কীভাবে কেরালায় এসে তাঁদের জীবন পুনর্নির্মাণ করেছিল তার বর্ণনা রয়েছে তাঁর স্মৃতিকথায়।
কেরালা সরকারের পরিযায়ী শিশুদের জন্য তৈরি বিশেষ কর্মসূচি 'রোশনি' কীভাবে তাঁর স্বপ্নপূরণে সহায়তা করেছিল - সে সমস্ত কিছু উল্লেখ করেছেন ধারাক্ষা।
এক সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় ধারাক্ষা জানান, "তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত আমি বিহারে পড়াশোনা করেছি। স্কুলে বেঞ্চ, ডেস্ক যথেষ্ট পরিমাণে ছিল না। এমনকি পর্যাপ্ত শিক্ষকও ছিল না। কেরালায় এসে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হই। আমাদের যা যা প্রয়োজন ছিল - ভালো পরিকাঠামো, বই, শিক্ষক - সমস্ত কিছু পেয়েছি। আমার ভাইবোনেরাও এখানের স্কুলে ভর্তি হয়"।
ধারাক্ষার কথায়, তিনি খুব দ্রুতই মালায়ালাম ভাষা শিখে যান। এমনকি রোশনী কর্মসূচির অধীনে সরকারি স্কুলে পড়াতেন তিনি। তাঁর কথায়, "এখানে স্কুলে ভাষা নিয়ে সমস্যা ছিল। তাই আমি হিন্দি, ওড়িয়া এবং বাংলা ভাষার মাধ্যমে অন্যান্যদের সাহায্য করেছি"।
ধারাক্ষার বাবা মুহাম্মদ সমীর এর্নাকুলামের একটি জুতো তৈরির কোম্পানিতে কাজ করেন। ছোট থেকেই ধারাক্ষার লক্ষ্য ছিল নিজে উপার্জন করে পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর। তাঁর স্বপ্ন ছিল ফ্যাশন ডিজাইনার হওয়ার। তিনি বলেন, "আমি ফ্যাশন ডিজাইন পড়তে চেয়েছিলাম কারণ আমি সবসময় পোশাক তৈরির প্রতি আগ্রহী ছিলাম। এখন আমি সেটা নিয়েই কাজ করছি। ইন্দিরা গান্ধী ন্যাশনাল ওপেন ইউনিভার্সিটি থেকে হিন্দি ভাষায় ডিগ্রি অর্জন করেছি"।
তাঁর মা রাজিয়া গৃহবধূ। দুই ভাই - মোহাম্মদ সমীর, মারাম্পিলির এমইএস কলেজে পড়েন এবং মোহাম্মদ আদিল, জিএইচএসএস মুপ্পাথাদমে প্লাস টু-এর ছাত্র।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের সামনে রাজ্যের সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা কীভাবে তাঁকে সুশিক্ষিত করে তুলতে সাহায্য করেছে, সে নিয়ে কথা বলেন। এমনকি রোশনি প্রকল্প সম্প্রসারণের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করেন।
ধারাক্ষের গল্প শোনার পর, পালাক্কাদের একজন শিক্ষিকা তাকে তার অভিজ্ঞতা লিখতে উৎসাহিত করেছিলেন। এরপর রাজ্য সরকারের পাঠ্যপুস্তক কমিটি তাঁর লেখাটি ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ে অন্তর্ভুক্ত করে।
এনিয়ে রাজ্যের ডিরেক্টর জেনারেল অফ এডুকেশন শানাভাস এস আইএএস সংবাদমাধ্যমে জানান, ধারাক্ষার স্মৃতিকথা ছিল পরিযায়ীদের সন্তানদের মূলধারায় নিয়ে আসার জন্য রাজ্য শিক্ষা বিভাগের প্রচেষ্টার সর্বোত্তম প্রতিনিধিত্ব। তিনি জানিয়েছেন, "আমরা রাজ্য শিক্ষা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ পরিষদ (এসসিইআরটি) এর পাঠ্যক্রম কমিটির কাছে ধারাক্ষের লেখার সুপারিশ করেছিলাম। তারা স্বীকার করেছে যে মালায়ালাম ভাষায় মেয়েটির লেখা উচ্চমানের এবং রোশনি প্রকল্পের সুবিধাগুলির প্রকৃত বিবরণ ছিল। সেকারণেই তারা এই শিক্ষাবর্ষ থেকে ষষ্ঠ শ্রেণীর পাঠ্যক্রমের মধ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে"।
তিনি আরও বলেন, মেয়েটির অনুরোধের ভিত্তিতে, সরকার সমস্ত সরকারি স্কুলেও রোশনি প্রকল্প সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নিয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন