মধ্যপ্রদেশের রেওয়া জেলায় আধ্যাত্মিক নেতা রামবিলাস বেদান্তি বা বেদান্তি মহারাজের এক সপ্তাহব্যাপী কথাবচন অনুষ্ঠান বাতিল করা হল। সম্প্রতি তাঁর নাতি ও সহ-শিষ্য মহন্ত সীতারাম দাসের বিরুদ্ধে একই শহরে এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত হওয়ার পরে এই আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
আগামী ১ এপ্রিল থেকে রেওয়ার মানস ভবনে বেদান্তি মহারাজের কথাবচন অনুষ্ঠান হবার কথা ছিলো এবং তাঁর নাতি সমর্থ ত্রিপাহী, ওরফে মহন্ত সীতারাম দাস, এই অনুষ্ঠানের প্রস্তুতির তদারকি করতে গত দুই সপ্তাহ ধরে শহরে ছিলেন। এক বেসরকারি সংস্থার শপিংমল উদ্বোধন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত রেওয়া শহরের বিভিন্ন স্থানে কর্মসূচির পোস্টার ও হোর্ডিং দেখা গেছে। তবে ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ্যে আসার পর সমস্ত পোষ্টার সরিয়ে নেওয়া হয়।
বেসরকারি সংস্থার এক প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, "একটি বাণিজ্যিক কমপ্লেক্স এবং গ্রুপের একটি হোটেলের উদ্বোধন উপলক্ষে ১ থেকে ৯ এপ্রিল হনুমান কথা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। বেদান্তি মহারাজজীর ৩১ মার্চ আসার কথা ছিল। তবে, ধর্ষণের ঘটনার পর অনুষ্ঠানটি বাতিল করে দেওয়া হয়।"
২৮ মার্চ গভীর রাতে রেওয়ার রাজ নিবাসে (সার্কিট হাউস) ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। ২৯ মার্চ নির্যাতিতা স্থানীয় থানায় এফআইআর দায়ের করার পরে এই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে। নির্যাতিতাকে রাজ নিবাসে নিয়ে আসেন বিনোদ পান্ডে নামের এক ব্যক্তি। পুলিশের মতে, তিনি এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত এবং তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ সূত্র অনুসারে, নির্যাতিতা নাবালিকা রেওয়াতে এক সরকারি কলেজে প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন, তিনি নিশ্চিত ছিলেন যে 'বাবাজি' তাকে পরীক্ষায় ভাল নম্বর পেতে সাহায্য করবেন এবং তাঁর সমস্ত ঝামেলার অবসান ঘটাবেন। ওই ছাত্রী আরও জানিয়েছেন, তিনি যখন রাজ নিবাসে পৌঁছান, সেখানে পাঁচ-ছয়জন পুরুষ মদ্যপান করছিলেন। তাঁকেও মদ্যপান করতে বাধ্য করা হয় এবং তিনি মদ্যপান করতে অস্বীকার করলে তাঁকে মারধর করা হয়।
অভিযোগ অনুসারে: "মদ্যপান করতে অস্বীকার করায় তাঁকে মারধর করা হয়েছিল এবং যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল। ঘটনাটি প্রকাশ করলে তাকে ভয়ঙ্কর পরিণতির হুমকি দেওয়া হয়েছিল। এরপর একটি জিপসিতে করে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা টার দিকে তাঁকে কলেজ স্কয়ারে ফেলে যাওয়া হয়।"
রেওয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) শিব কুমার ভার্মা আইএএনএস-এর সাথে কথা বলার সময় জানিয়েছেন: "বিনোদ পান্ডেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং সীতারাম দাস সহ অন্যান্য অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের জন্য অনুসন্ধান চলছে।"
পুলিশ আরও জানিয়েছে, বিনোদ পান্ডে এই মামলার প্রধান অভিযুক্ত, তবে নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করেছে যে সার্কিট হাউসের ৪ নম্বর কক্ষে বসবাসকারী সীতারাম দাস মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল।
নির্যাতিতার এক বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে আইএএনএস-কে জানিয়েছেন, "নির্যাতিতাকে সার্কিট হাউসে উপস্থিত এক আধ্যাত্মিক গুরু সীতারাম দাসের সাথে দেখা করার জন্য সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। তবে, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এফআইআর-এ তাঁর নাম উল্লেখ না করতে তাঁকে বাধ্য করা হয়েছিল।"
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার পর সীতারাম দাস ও তাঁর চালক পলাতক। নির্যাতিতার পরিবারের অভিযোগ, স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক সীতারাম দাসকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
GOOGLE NEWS-এ Telegram-এ আমাদের ফলো করুন। YouTube -এ আমাদের চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন।