

ফের শিরোনামে মধ্যপ্রদেশ। দলিত নির্যাতনের পর এবার বিজেপি শাসিত রাজ্য সাক্ষী থাকল ১১ বছরের এক নাবালিকার নৃশংস গণধর্ষণের ঘটনার। রাজ্যের সাতনা জেলার মন্দির-নগরী মাইহারে ঘটা বৃহস্পতিবার রাতের এই ন্যক্কারজনক ঘটনায় শিউড়ে উঠেছে গোটা দেশ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনায় অভিযুক্ত দুই ব্যক্তিকেই শুক্রবার সকালে গ্রেফতার করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই ঘটনায় পুলিশের উদ্দেশে দোষীদের কঠিন সাজার নিদান দিয়েছেন। অন্যদিকে, নির্যাতিতা নাবালিকা এই মুহূর্তে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, অবস্থা আশঙ্কাজনক।
মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাতনা প্রদেশের মাইহারের বাসিন্দা ওই নাবালিকাকে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যে থেকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতের দিকেও সে বাড়ি না ফিরলে তাঁর পরিবারের তরফে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়ে একটি ডায়েরি করা হয়। তারপরেই শুরু হয় খোঁজ।
শুক্রবার ভোরের দিকেই বাড়ি থেকে প্রায় ১ কিলোমিটার দূরে একটি মন্দিরের কাছে জঙ্গলের মধ্যে থেকে উদ্ধার করা হয় ওই নাবালিকাকে। রক্তাক্ত অবস্থায় ওই নাবালিকাকে উদ্ধার করে মাইহারে প্রাথমিক শুশ্রূষার পর তাকে রেওয়া শহরের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। জঙ্গল থেকে উদ্ধার করার সময় ওই নাবালিকার সারা দেহে কামড় ও বিভিন্নধরণের ক্ষতচিহ্ন ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
শুক্রবারই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। পুলিশ সূত্রে আরও খবর, দুই অভিযুক্তই ঘটনাস্থলের কাছের মা সারদা দেবী মন্দিরের কর্মচারী। বৃহস্পতিবার রাতে ওই নাবালিকাকে টেনে হিঁচড়ে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে গিয়ে তার উপরে অকথ্য যৌন নির্যাতন চালায় তারা। নাবালিকার সারা শরীরে কামড় ও ক্ষতের দাগ থেকেই তা স্পষ্ট। তারপর ১১ বছরের ওই কিশোরীকে গণধর্ষণ করা হয়। তবে পুলিশের এই ধারণা প্রাথমিক তদন্তের পর উঠে এসেছে, এখনও ওই কিশোরীর মেডিক্যাল রিপোর্ট আসা বাকি।
সাতনা পুলিশের এসপি আশুতোষ গুপ্তা জানিয়েছেন, “শুক্রবার সকালেই দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে। দুজনের পরিচয় যথাক্রমে রবীন্দ্র কুমার রবি ও অতুল ভাদোলিয়া, দুজনেরই বয়স ৩০। শুক্রবার তাদের স্থানীয় আদালতে পেশ করা হয়েছে। সেখানে আদালতের তরফে দুজনকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দন্ডবিধির ধারা ৩৭৬ (ধর্ষণের শাস্তি) অধীনে মামলা করা হয়েছে। এছাড়াও ৩৭৬ ডিবি (১২ বছরের কম বয়সী নাবালিকার উপর গণধর্ষণের শাস্তি), ৩৬৬ এ (অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে আটক করা), ৩২৩ (স্বেচ্ছায় আঘাত করা), ৩২৪ (স্বেচ্ছায় বিপজ্জনক অস্ত্রদ্বারা বা অস্ত্র ছাড়া আঘাত করা), ৩৪ (সাধারণ উদ্দেশ্য) এবং যৌন অপরাধ থেকে শিশুদের সুরক্ষা (POCSO) আইনের প্রাসঙ্গিক বিধি অনুসারে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। নির্যাতিতা নাবালিকা এখনও হাসপাতালে ভর্তি এবং তাঁর অবস্থা এখনও আশঙ্কাজনক বলেই হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে খবর।
মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান এই ঘটনার কড়া নিন্দা করে পুলিশকে দুই অভিযুক্তের কঠিন সাজা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি নির্যাতিতা যাতে সেরা চিকিৎসা পরিষেবা পায়, সেই দিকও নিশ্চিত করেছেন। তবে এই ঘটনা নিয়ে শিবরাজ সরকারের তীব্র নিন্দা করেছেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস প্রধান তথা রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ।
২০১২ সালের নির্ভয়া ধর্ষণকাণ্ডের স্মৃতি উসকে দিয়ে তিনি মধ্যপ্রদেশে শিশু ও মহিলাদের উপর হওয়া অত্যাচারের কথা তুলে টুইটারে সরব হয়েছেন। পাশাপাশি, এই পাশবিক ঘটনায় শিউরে উঠে ইতিমধ্যেই সমাজমাধ্যমে প্রতিবাদ ও নিন্দার ঝড় তুলেছেন গোটা দেশের নাগরিক সমাজ।
- with IANS inputs
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন