
ভারতে ম্যানুয়াল স্ক্যাভাঞ্জিং বা মানুষকে দিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক বা ভূগর্ভস্থ নর্দমা পরিষ্কার করানো আইন করে নিষিদ্ধ হয়েছে ১৯৯৩ সালে। কিন্তু, তারপরেও সারাদেশে চলছে এই নিষিদ্ধ কর্মকাণ্ড। প্রাণও হারাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।
সম্প্রতি, দেশে ম্যানুয়াল স্ক্যাভাঞ্জিং নিয়ে সংসদে একটি তথ্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিমন্ত্রী রামদাস আঠাওয়াল। যেখানে তিনি জানান, গত পাঁচ বছরে দেশে ম্যানহোল পরিস্কার করতে গিয়ে মারা গেছেন ৩৫২ জন।
এর মধ্যে সবথেকে বেশি মানুষ মারা গেছেন- বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশে। সেখানে মৃতের সংখ্যা ৫৭। তারপরে রয়েছে দক্ষিণের রাজ্য তামিলনাড়ু। ২০১৭ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এই রাজ্যে ম্যানহোল পরিস্কার করতে গিয়ে মারা গেছেন ৪৬ জন।
পরিসংখ্যানের বিচারে তৃতীয় স্থানে রয়েছে- দেশের রাজধানীর দিল্লি। যেখানে নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন।
গত বুধবার (২১ ডিসেম্বর) সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে দেশে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং নিয়ে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তোলেন রাজ্যসভার সাংসদ জয়ন্ত চৌধুরী। তাঁরই প্রশ্নের প্রশ্নের লিখিত উত্তরে এই তথ্য তুলে ধরেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রামদাস আঠাওয়াল।
কিন্তু কেন এই অবস্থা? এর জন্য কে দায়ী? টুইটারে সেই প্রশ্ন তুলেছেন সাংসদ জয়ন্ত চৌধুরী। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর লিখিত জবাব পোষ্ট করে লিখেছেন, 'গত পাঁচ বছরে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিংয়ের জন্য মারা গেছেন ৩৫২ জন; অথচ ২০১৩ সালে সংসদ কর্তৃক প্রণীত একটি আইন দ্বারা এটি (ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিংয়ের জন্য) নিষিদ্ধ! সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে উত্তরপ্রদেশে (৫৭)। এর জন্য দায়ী কে??'
২০১৯-২০ সালের বাজেট পেশের সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন জানিয়েছিলেন ম্যানুয়াল স্ক্যাভাঞ্জিং বন্ধ করতে যন্ত্রের ব্যবস্থা করা হবে। যদিও কোনো ব্যবস্থাই যে হয়নি তার প্রমাণ মিলছে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিমন্ত্রী রামদাস আঠাওয়ালের উত্তরে।
আইন আছে কিন্তু আইনের প্রয়োগ ভালোভাবে না হওয়ায়, গত পাঁচ বছর আগেই সকলকে সতর্ক করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। এক রায়ে '২০১৩ সালের ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং আইন' কার্যকর করার উপর জোর দিয়েছিল দেশের শীর্ষ আদালত। একইসঙ্গে, আদালত জানিয়েছিল, 'সারা দেশে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিং নিরীক্ষণ এবং যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের সাথে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জারদের পুনর্বাসন কার্যকর করতে হবে।
জানা যাচ্ছে, সারা দেশে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার বা সাফাই কর্মীদের সংখ্যা জানতে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে 'স্বচ্ছতা অভিযান' নামে একটি মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন চালু করেছিল কেন্দ্র। এর আগে, ২০১৮ সালেও একটি সমীক্ষা চালিয়েছিল কেন্দ্রীয় সামাজিক সুরক্ষা মন্ত্রক।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসের শেষে উঠে আসা তথ্য তুলে ধরে রামদাস আঠাওয়াল জানান, সারাদেশে সাফাই কর্মীদের সংখ্যার বিচারে শীর্ষে রয়েছে যোগী রাজ্য- উত্তরপ্রদশ। সেখানে সাফাই কর্মীর সংখ্যা ৩২ হাজার ৪৭২ জন। এরপরে রয়েছে মহারাষ্ট্র, যেখানে সাফাই কর্মীর সংখ্যা ৬ হাজার ৩২৫ জন।
পরবর্তী স্থানে রয়েছে- উত্তরাখণ্ড (৪ হাজার ৯৮৮ জন), আসাম (২ হাজার ৯২৭জন) এবং কর্ণাটক (২ হাজার ৬৭৩ জন)।
GOOGLE NEWS-এ আমাদের ফলো করুন