• আদালতের নির্দেশে কর্ণাটকে বন্ধ হয়ে গেল বাইক ট্যাক্সির চলাচল।
• কাজ হারালেন প্রায় ১ লক্ষ গিগ শ্রমিক।
• বাইক ট্যাক্সি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়ে যাত্রীদের ক্ষোভ।
কর্ণাটক হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে কর্ণাটক জুড়ে বন্ধ হয়ে গেল বাইক ট্যাক্সির চলাচল। গতকাল ১৫ জুন বাইক ট্যাক্সি চলার শেষ দিন ছিল। সোমবার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে এই পরিষেবা। যদিও নাম বদল করে এই পরিষেবা চালানোর চেষ্টা সোমবারে হলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
চলতি বছরের এপ্রিল মাসে হাইকোর্টের এক সিঙ্গল বেঞ্চের রাজ্যে বাইক ট্যাক্সি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ফলে সমস্যায় পড়ে র্যাপিডো, ওলা, উবেরের মত সংস্থা। এই বিষয়ে বাইক ট্যাক্সি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলি আদালতের দ্বারস্থ হলেও এখনও পর্যন্ত তার মীমাংসা হয়নি। এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ২৪ জুন। যদিও কর্ণাটক সরকার বাইক ট্যাক্সির বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও নির্দেশিকা তৈরিতে রাজি না হওয়ায় আপাতত এই সমস্যা মেটার সম্ভাবনা কম।
হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে বাইক ট্যাক্সি চলাচল বন্ধ হলেও সোমবার র্যাপিডো তাদের পরিষেবার নাম দেয় ‘বাইক পার্সেল’ এবং উবের তাদের পরিষেবার নাম দেয় ‘মোটো ক্যুরিয়র’। যদিও ব্যাপক পুলিশি ধরপাকড়ের কারণে দুই কোম্পানির এই প্রচেষ্টা ফলপ্রসূ হয়নি। সোমবার র্যাপিডো বিকেল ৩ টের সময় এবং উবের বিকেল ৫টার সময় এই পরিষেবা বন্ধ করে দেয়।
অন্যদিকে রাজ্য জুড়ে বাইক ট্যাক্সি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। তথ্য অনুসারে কর্ণাটক জুড়ে ১ লক্ষের বেশি মানুষ এই বাইক ট্যাক্সি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। হাইকোর্টের নির্দেশ এবং সরকারের সিদ্ধান্তের পর তাঁরা সকলেই সমস্যায় পড়বেন। এই সিদ্ধান্তের ফলে অসুবিধে হবে যাত্রীদেরও। কারণ যাদের বাড়ি কিছুটা ভেতরের দিকে তাদের কাছে পরিবহনের মাধ্যম হিসেবে বাইক ট্যাক্সি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।
কর্ণাটকের পরিবহন মন্ত্রী রামালিঙ্গা রেড্ডি এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, যেভাবে র্যাপিডো এবং উবের তাদের পরিষেবার নাম বদল করে বাইক চালানোর চেষ্টা করেছে তা সরাসরি হাইকোর্টের নির্দেশ লঙ্ঘন। আমরা আদালতকে জানিয়েছি, ব্যক্তিগত টু হুইলার গণ পরিবহনের কাজে ব্যবহার করা বেআইনি। এক্ষেত্রে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট।
তিনি রাজ্যে বাইক ট্যাক্সির জন্য আলাদা কোনও নিয়ম তৈরির সম্ভাবনার কথা উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর মতে, এভাবে বাইককে গণ পরিবহন হিসেবে চলতে দিলে রাজ্যের ১ লক্ষ ৭৫ হাজার অটোচালক সমস্যায় পড়বেন। কারণ তাঁরা আইন মেনে পারমিট নিয়ে ব্যবসা করেন।
গত বছরের ৬ মার্চ, কর্ণাটক পরিবহন দপ্তর রাজ্যে ইলেক্ট্রিক বাইক ট্যাক্সি স্কিম ২০২১ বাতিল করে। সরকার জানায়, ব্যক্তিগত পেট্রোলচালিত বাইক গণ পরিবহনের কাজে ইলেকট্রিক বাইক ট্যাক্সি হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
যাত্রীদের মতে বাইক ট্যাক্সিতে খরচ অনেক কম লাগে। বিশেষ করে অটো রিকশর তুলনায় প্রায় অর্ধেক খরচে বাইক ট্যাক্সিতে করে গন্তব্যে পৌঁছানো যায়। সরকার এর আগে কার পুলিং অ্যাপ বন্ধ করে দিয়েছে, এবার বাইক ট্যাক্সিও বন্ধ করে দেওয়া হল। সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষোভ উগরে দিয়ে কেউ কেউ জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার অটো ইউনিয়নের কাছে নতি স্বীকার করল।
অবিলম্বে রাজ্যে বাইক ট্যাক্সি চালু করার দাবি জানিয়ে কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধীকে চিঠি দিয়েছেন কিছু যাত্রী। একইভাবে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়াকেও চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
কর্ণাটক বাইক ট্যাক্সি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মহম্মদ সেলিম জানিয়েছেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে কর্ণাটক জুড়ে প্রায় ১ লক্ষ গিগ শ্রমিক কাজ হারালেন। তিনি বলেন, বাইক ট্যাক্সি চালকদের অনেকেই ছাত্র, দিনমজুরি করেন বা ছোটোখাটো কাজ করেন। এই বাইক ট্যাক্সি চালিয়ে তাঁরা অতিরিক্ত কিছু রোজগার করতেন। কোভিডের পরে যখন অনেকেই কাজ হারিয়েছিলেন তখন থেকে এই কাজই তাদের রুটি রুজি হয়ে গেছিল। এঁদের অনেকেই পরিবার প্রতিপালনের জন্য সপ্তাহে সাত দিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা কাজ করেন। এখন তাঁরা কীভাবে বেঁচে থাকবেন?
Keywords: Karnataka, bike taxi ban, court order, gig workers