
পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারকে স্পষ্ট করে একথা জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
২১ জুলাই, পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা ও দুর্দশা নিয়ে শুনানি ছিল শীর্ষ আদালতে। সেখানে বিচারপতি এম আর শাহ (M R Shah) এবং বি ভি নাগারথনা (B V Nagarathna)-র ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, 'শীঘ্রই আমরা এ নিয়ে যথাযথ নির্দেশনা দেব। তবে তার আগে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।'
আদালত আরও জানিয়েছে, 'ই-শ্রম পোর্টালের মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে হবে। এ নিয়েও আমরা নির্দেশনা দেব।'
কেন্দ্রের তরফে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল (ASG) ঐশ্বরিয়া ভাটি (Aishwarya Bhati) আদালতে জানিয়েছেন, 'পোর্টালে রেজিস্ট্রেশন চলছে। এর মাধ্যমে পরিযায়ী শ্রমিকরা নির্দিষ্ট স্কিমের সুবিধা পাবেন।' ASG আদালতে আরও জানিয়েছেন, রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়াকে উৎসাহিত করার জন্য, ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়েছে।
তবে, পরিযায়ী শ্রমিকদের রেজিস্ট্রেশন নিয়ে কেন্দ্রের বক্তব্যে হতাশা প্রকাশ করেছে আদালত। বেশ কয়েকটি রাজ্য এখনও ৫০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা ছুঁতে পারেনি বলে জানিয়েছে বেঞ্চ। বিচারপতি শাহ মন্তব্য করেছেন,'আমাদের দেশে জনগণের দুটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কৃষক, দুই পরিযায়ী শ্রমিক। দেশের ভিত্তি তৈরীতে পরিযায়ী শ্রমিকদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের অধিকার কোনওভাবে অস্বীকার করা চলবে না।'
আদালতের বক্তব্য, 'অভাবী মানুষ কূপের কাছে পৌঁছাতে না পারলে, কূপকে যেতে হয় অভাবী ও তৃষ্ণার্ত মানুষের কাছে। তাই, পরিযায়ীদের কাছে সুবিধা পৌঁছানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারগুলিকে।'
এরপরেই আদালত জানায়, 'আপনারা কেন সেখানে যাচ্ছেন না, যেখানে তাঁরা (পরিযায়ীরা) কাজ করছেন। পোর্টালে তাদের নাম রেজিস্ট্রেশন করতে সকল ঠিকাদারকে সার্কুলার জারি করুন। সকলের রেজিস্ট্রেশন না হলে আপনি দায়ী থাকবেন। সবাইকে চেষ্টা করতে হবে।'
আবেদনকারীদের পক্ষে থেকে আদালতে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ। জাতীয় খাদ্য সুরক্ষা আইনের অধীনে থাকা বিপুল সংখ্যক শ্রমিককে রেশন কার্ড দেওয়া হয়নি বলে আদালতে জানান তিনি।
আদালতে রিপোর্ট জমা দিয়ে এদিন আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ বলেন, 'অধিকাংশ পরিযায়ীর রেশন কার্ড নেই। বর্তমানে সরকার যে তথ্য তুলে ধরছে তা ২০১১ সালের জনগণনার উপর ভিত্তি করে। এটি ২০২১ সালের নয়। কিন্তু, কেন্দ্র সরকার বলছে ২০২১ সালে মহামারীর কারণে আমরা জনগননা করতে পারিনি।'
২০১১ সালের জনগননার রিপোর্টের উপর নির্ভরতার কারণে এই বঞ্চনা হয়েছে বলে আদালতে জানান প্রশান্ত ভূষণ। ডিভিশন বেঞ্চে তিনি জানান, তেলেঙ্গানার প্রায় ৭৫ শতাংশ পরিযায়ী শ্রমিকদের রেশন কার্ড নেই (৬০,৯৮০ জনের মধ্যে শুধুমাত্র ১৪,০০০ পরিযায়ী শ্রমিকের কাছে রেশন কার্ড রয়েছে)।
এরপরেই দেশের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিচারপতি এম আর শাহ এবং বি ভি নাগরত্ন জানিয়েছেন, 'যতই উন্নয়ন হোক না কেন, দেশে না খেতে পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। একজন নাগরিকেরও যেন অনাহারে মৃত্যু না হয়, তা-ই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। চোখ বন্ধ করে তো বসে থাকা যাবে না। সমাধানের রাস্তা আপনাদেরকেই (কেন্দ্র) বের করতে হবে।'
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন