সিন্ধুর জল কীভাবে আটকাবে ভারত? কোনও পরিকল্পনা আছে আদৌ? চুক্তি বাতিলে আসবে কি আন্তর্জাতিক চাপ?

People's Reporter: ১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি।
সিন্ধু নদীর বাঁধ
সিন্ধু নদীর বাঁধছবি - সংগৃহীত
Published on

পহেলগাঁও কাণ্ডের পর পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। এই নিয়ে শুক্রবার কেন্দ্রীয় জলশক্তিমন্ত্রী সিআর পাটিল বৈঠক করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে। বৈঠকের পর পাটিল হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছেন, “এক বিন্দু জলও সিন্ধু থেকে পাকিস্তানে যাবে না, আমরা তা নিশ্চিত করব”। কিন্তু কীভাবে জল আটকাবে ভারত? এক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্কের দিক থেকে কোনও রকম চাপ এলে কীভাবে মোকাবিলা করবে? সিন্ধু চুক্তি বাতিল ঘোষণার পর একাধিক প্রশ্ন উঠে আসছে।

১৯৬০ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয় সিন্ধু জলবন্টন চুক্তি। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারতের নিয়ন্ত্রণে থাকবে সিন্ধুর পূর্বের তিন উপনদী - বিপাশা (বিয়াস), শতদ্রু (সাটলেজ়) এবং ইরাবতী (রাভি)-র জল। এবং সিন্ধু ও তার দুই উপনদী বিতস্তা (ঝিলম), চন্দ্রভাগার (চেনাব) জলের উপরে অধিকার থাকবে পাকিস্তানের। যার জল ভারতের দিক থেকে বয়ে যায় পাকিস্তানে।

তবে জল আটকাতে গেলে দিতে হবে বাঁধ। এনিয়ে শুক্রবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে আলোচনা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জানা যাচ্ছে, চুক্তি স্থগিত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য, ভারতের কাছে একাধিক পরিকল্পনা রয়েছে। শীঘ্রই তা কার্যকর করতে চলেছে ভারত। এবিষয়ে এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “একাধিক দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এখনও আলোচনার টেবিলে আছে। তবে আপাতত আমাদের এমন একটা পরিকল্পনা চাই, যা তাৎক্ষণিক এবং যার মাধ্যমে ভবিষ্যতের নকশা পাওয়া যাবে”।

সূত্রের খবর, জল আটকাতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে ভারত সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার উপরে বাঁধগুলি পলিমুক্ত করে জলাধারের ধারণক্ষমতা বৃদ্ধি করতে চায়। এর ফলে পাকিস্তানের দিকে জল যাওয়ার পরিমাণ অনেকটাই কমবে। অন্যদিকে, বিতস্তা নদীর উপনদী কিষেণগঙ্গা এবং চন্দ্রভাগার উপনদীর উপর নির্মীয়মাণ রাতলে জলবিদ্যুৎ প্রকল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই অভিযোগ জানিয়ে আসছে পাকিস্তান। তাদের দাবি, এর ফলে জল আটকে যাচ্ছে পাকিস্তানে। ২০১৬ সালে প্রথম আপত্তি জানায় পাকিস্তান। তবে সিন্ধু চুক্তি বাতিল হওয়ার পর এই আপত্তি উড়িয়ে দেওয়া আরও সহজ হবে নয়াদিল্লির।

এছাড়া জল আটকাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হিসাবে বাঁধের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারে ভারত। জলাধার তৈরি করে সিন্ধু, বিতস্তা এবং চন্দ্রভাগার জল আটকে দেওয়া যায়। যদিও এখনই এই পরিকল্পনা কার্যকর করা যাচ্ছে না। ভারত-পাকিস্তানের সম্পর্ক অবনতি হলে, সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে নয়াদিল্লি।

তবে সিন্ধু চুক্তি স্থগিত নিয়ে প্রথম থেকেই তীব্র বিরোধিতা করছে পাকিস্তান। সে দেশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ভারতের এই সিদ্ধান্ত তারা ‘যুদ্ধ’ হিসাবেই দেখবে। ভারত মাত্র ২০ শতাংশ এই জল পেলেও পাকিস্তান পায় ৮০ শতাংশ। এছাড়া পাকিস্তানের কৃষি ব্যবস্থা পুরোটাই নির্ভর করে এই জলের উপরে। সুতরাং চুক্তি বাতিল হলে সমস্যায় পড়বে তারা।

এদিকে চুক্তির শর্ত হিসাবে, ভারত বা পাকিস্তান নিজেদের প্রয়োজনে এই জল ব্যবহার করতে পারবে। তবে কোনও অবস্থাতেই জলপ্রবাহ আটকে রাখতে পারবে না। এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যস্থতায়। ফলে এই মুহুর্তে ভারত চুক্তি বাতিল করলে আন্তর্জাতিক সাহায্য চাইতে পারে পাকিস্তান। সেক্ষেত্রে বিশ্বব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও ক্ষেত্র থেকে ভারতের উপর চাপ আসতে পারে।

তবে এই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তৈরি থাকছে নয়াদিল্লি। আইনি ভাষায় কীভাবে জবাব দেওয়া যায়, তা এখন থেকেই প্রস্তুত রাখা হচ্ছে। এছাড়া পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কেন এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে সেই বার্তা পৌঁছে দেওয়ার কূটনৈতিক প্রচেষ্টাও চালাচ্ছে ভারত।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in