Wild Elephants: ভারতের বন্য হাতির সংখ্যা কমেছে ১৮ শতাংশ! প্রথম ডিএনএ-ভিত্তিক গণনা প্রকাশ্যে

People's Reporter: কর্নাটকে সবচেয়ে বেশি হাতি (৬,০১৩), এরপর অসম (৪,১৫৯), তামিলনাড়ু (৩,১৩৬), কেরালা (২,৭৮৫) ও উত্তরাখণ্ড (১,৭৯২)।
ছবি প্রতীকী
ছবি প্রতীকী ফাইল ছবি নিউজ অন এয়ারের সৌজন্যে
Published on

দেশের প্রথম ডিএনএ-ভিত্তিক হাতি গণনায় চমকপ্রদ তথ্য উঠে এসেছে। পরিবেশ মন্ত্রকের প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে অনুযায়ী, ভারতের বন্য হাতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে গড়ে ২২,৪৪৬, ২০১৭ সালে যে সংখ্যাটা ছিল ২৭,৩১২। যা এখন প্রায় ১৮ শতাংশ কম। তবে আধিকারিকদের দাবি, এই দুটি পরিসংখ্যান সরাসরি তুলনা করা যাবে না। কারণ এবার গণনার পদ্ধতিতে এসেছে বড় পরিবর্তন।

পরিবেশ মন্ত্রক, প্রজেক্ট এলিফ্যান্ট এবং ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত অল ইন্ডিয়া সিনক্রোনাস এলিফ্যান্ট এস্টিমেশন (SAIEE) ২০২৫ সালে ভারতের হাতির সংখ্যা ১৮,২৫৫ থেকে ২৬,৬৪৫-এর মধ্যে ধরা হয়েছে। প্রায় চার বছর পর এই প্রকল্পের রিপোর্ট প্রকাশিত হয় মঙ্গলবার। কারণ ২০২১ সালে শুরু হওয়া এই বিশাল সমীক্ষার তথ্য যাচাই ও জেনেটিক বিশ্লেষণ ছিল অত্যন্ত জটিল।

অধিকর্তারা জানিয়েছেন, “এই প্রথমবার হাতির মলের ডিএনএ বিশ্লেষণের মাধ্যমে পৃথক হাতির পরিচয় নির্ধারণ করা হয়েছে। ফলে এটি ভবিষ্যতের জন্য একেবারে নতুন এক বৈজ্ঞানিক ভিত্তি স্থাপন করবে। আগামীতে এই পদ্ধতি আরও উন্নত করার পরিকল্পনা চলছে এবং রাজ্য বন্যপ্রাণ অধিকর্তাদের মতামতও চাওয়া হয়েছে।”

সারা দেশ জুড়ে মোট ২১,০৫৬টি মল নমুনা সংগ্রহ করা হয়। যা থেকে ৪,০৬৫টি স্বতন্ত্র হাতির ডিএনএ শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। বিজ্ঞানীরা ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্টিং ব্যবহার করে মোট জনসংখ্যার হিসাব নির্ধারণ করেন। সমীক্ষার অংশ হিসেবে প্রায় ৬.৭ লক্ষ কিমি বনাঞ্চল পথ পেরিয়ে, ৩.১ লক্ষেরও বেশি মল প্লট বিশ্লেষণ করা হয়।

অঞ্চলভিত্তিকভাবে, পশ্চিমঘাট ভারতের হাতির সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল হিসেবে রয়েছে (১১,৯৩৪টি হাতি)। এরপর উত্তর-পূর্ব পাহাড় ও ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা (৬,৫৫৯), শিবালিক ও গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল (২,০৬২), এবং মধ্য ভারত ও পূর্বঘাট মিলিয়ে (১,৮৯১) হাতির সংখ্যা রয়েছে।

কর্নাটকে সবচেয়ে বেশি হাতি (৬,০১৩), এরপর অসম (৪,১৫৯), তামিলনাড়ু (৩,১৩৬), কেরালা (২,৭৮৫) ও উত্তরাখণ্ড (১,৭৯২)। অন্যদিকে ওড়িশায় ৯১২টি হাতি পাওয়া গেছে, আর ছত্তিশগড় ও ঝাড়খণ্ড মিলিয়ে রয়েছে প্রায় ৬৫০টি। অরুণাচল প্রদেশ (৬১৭), মেঘালয় (৬৭৭), নাগাল্যান্ড (২৫২) ও ত্রিপুরা (১৫৩)-তেও ছোট ছোট জনসংখ্যা রয়েছে। মধ্যপ্রদেশ (৯৭) ও মহারাষ্ট্র (৬৩)-এ ক্ষুদ্র, বিচ্ছিন্ন দল লক্ষ্য করা গেছে।

তিন ধাপে পরিচালিত এই সমীক্ষা প্রথমে বনকর্মীরা এম-স্ট্রাইপস (M-Stripes) অ্যাপ ব্যবহার করে মাটিতে হাতির উপস্থিতি নথিভুক্ত করেন। দ্বিতীয় ধাপে স্যাটেলাইট চিত্রের মাধ্যমে আবাসস্থল মান ও মানবীয় প্রভাব বিশ্লেষণ করা হয়। শেষ ধাপে মল নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করে হাতির পরিচয় শনাক্ত করা হয়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের অবশিষ্ট এশীয় হাতির প্রায় ৬০ শতাংশই ভারতের বনাঞ্চলে বাস করে। কিন্তু অব্যাহত আবাসভূমি সংকোচন, অবকাঠামো প্রকল্প ও মানুষ-হাতি সংঘাতের কারণে এই মহামূল্যবান প্রজাতি আজ মারাত্মক চাপে রয়েছে।

এই নতুন ডিএনএ-ভিত্তিক গণনা কেবল সংখ্যার হিসাব নয়—এটি ভবিষ্যতের হাতি সংরক্ষণ পরিকল্পনার জন্য এক নতুন বৈজ্ঞানিক দিকনির্দেশ স্থাপন করেছে।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in