
সেদিন দূরে নয়, যেদিন দেশের মানচিত্র থেকে অচিরেই মুছে যাবে হিমাচল প্রদেশ। হিমালয় অঞ্চলের এই রাজ্য নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ এবং আশঙ্কা প্রকাশ করে এমনটাই জানাল সুপ্রিম কোর্ট। পাশাপাশি রাজ্যের পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতার বিষয়টি তুলে ধরে সতর্ক করেছে দেশের শীর্ষ আদালত। সুপ্রিম কোর্টের মন্তব্য, এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে গোটা রাজ্য একদিন 'হাওয়ায় মিলিয়ে' যাবে।
বিচারপতি জেবি পারদিওয়ালা এবং আর মাধবনের ডিভিশন বেঞ্চে হিমাচল নিয়ে একটি মামলার শুনানি ছিল। শুনানিতে আদালতের পর্যবেক্ষণ, পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। আবহাওয়া পরিবর্তনের যে প্রভাব হিমাচলের উপর পড়ছে, তা স্পষ্ট এবং বেশ উদ্বেগজনক। ডিভিশন বেঞ্চ বলে, "রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রকে আমরা এটাই বোঝাতে চাইছি যে, শুধু রাজস্ব আয়ই সব কিছু নয়। পরিবেশ এবং বাস্তুতন্ত্রের বিনিময়ে রাজস্ব আয় করা ঠিক নয়। যদি এই পরিস্থিতি আগামী দিনেও চলতে থাকে, তা হলে অচিরেই দেশের মানচিত্র থেকে হিমাচল মুছে যেতে পারে। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি, তেমনটা যেন না হয়"।
জুন মাসে হিমাচল প্রদেশ হাইকোর্টের একটি নির্দেশের বিরুদ্ধে ২৮ জুলাই শীর্ষ আদালত নিজের পর্যবেক্ষণ শুনিয়েছে। যদিও উচ্চ আদালতের নির্দেশে কোনও হস্তক্ষেপ করা হবে না বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। এরপরেই বেঞ্চ বলেছে, "হিমাচল প্রদেশের পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। তীব্র পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা এবং অন্যান্য পরিবেশগত পরিস্থিতির কারণে কয়েক বছর ধরে মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিয়েছে"। হিমাচল প্রদেশের চলমান কার্যকলাপে 'রুষ্ট' য়েছে প্রকৃতি।
তবে হিমাচলের এই পরিস্থিতির জন্য শুধুমাত্র প্রকৃতিকে দোষ দেওয়া িক নয়। এর জন্য দায়ী মানুষ। হিমালয়ের কোলে এই রাজ্যে কোনও উন্নয়নমূলক কাজের আগে ভূতত্ত্ববিদ, পরিবেশ বিশেষজ্ঞ এবং স্থানীয়দের মতামত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু গত কয়েক বছরে হিমাচলে যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং পর্যটনকে আরও মসৃণ করতে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ দ্রুত গতিতে বেড়েছে। আদালতের পর্যবেক্ষণ, পরিবেশের নিয়ম এড়িয়ে চার লেনের হাইওয়ে, রোপওয়ে, সুড়ঙ্গ, বসতিবিস্তারের মতো অনেক কাজ হয়েছে। পর্যটন আয়ের মূল উৎস হলেও, অনিয়ন্ত্রিত ভাবে পর্যটনের বৃদ্ধি রাজ্যের পরিবেশের ক্ষতি করছে বলে পর্যবেক্ষণ আদালতের।
আদালত জানিয়েছে, একখই যদি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে পর্যটনের চাপ রাজ্যের পরিবেশগত এবং সামাজিক কাঠামোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। হিমালয় অঞ্চলের বিশেষত্বের কথা উল্লেখ করে বেঞ্চ বলেছে, রাজ্যকে বাঁচাতে দ্রুত পদক্ষেপ করতে হবে। বেঞ্চ বলেছে, রাজ্যের পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা যাতে আরও বিঘ্নিত না হয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটে তা দেখারও কেন্দ্রের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
শীর্ষ আদালত জানিয়েছে, "আমরা আশা করি রাজ্য আমাদের আলোচনা করা বিষয়গুলি মোকাবেলা করার জন্য তাদের কোনও কর্ম পরিকল্পনা আছে কিনা এবং ভবিষ্যতে তারা কী করার প্রস্তাব করছে তা ব্যাখ্যা করে একটি উপযুক্ত উত্তর দাখিল করবে"। আগামী ২৫ আগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন