
ভারী বর্ষণে ফের বিপর্যস্ত উত্তরাখণ্ড ও হিমাচল প্রদেশ। পাহাড়ি দুই রাজ্যে প্রবল বৃষ্টিতে নষ্ট হয়েছে সড়ক, সেতু, ঘরবাড়ি। উল্টে গিয়েছে গাড়ি, ভেসে গিয়েছে বাস। উত্তরাখণ্ডে মৃত্যু হয়েছে অন্তত ১৫ জনের, হিমাচলের মান্ডি জেলায় ভূমিধসে প্রাণ হারিয়েছেন ৩ জন।
দেরাদুনে সোমবার রাত থেকেই চলছে টানা মুষলধারার বৃষ্টি। তপবন, সহস্রধারা ও আইটি পার্ক এলাকা সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত। ইতিমধ্যে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, নিখোঁজ অন্তত ১৬ জন। প্রায় ৯০০ মানুষ আটকে পড়েছেন। সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি ঘটেছে দেরাদুনেই - ১৩ জন। নৈনিতালে একজন ও উদম সিং নগরে আরও একজন মারা গিয়েছেন।
প্রেম নগর এলাকার উত্তরাঞ্চল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে হঠাৎ আসা বানে একটি সেতু ভেঙে পড়েছে। ফলে ওই অঞ্চলের হস্টেল অংশের সঙ্গে যোগাযোগ পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়ায় বিদ্যুৎ ও টেলিফোন পরিষেবাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। জরুরি ভিত্তিতে কাজ শুরু হয়েছে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ পরিষেবা পুনরুদ্ধারের।
ভারত আবহাওয়া দফতরের দেরাদুন কেন্দ্রের প্রধান ড. চন্দর সিং তোমর জানিয়েছেন, পূর্বা-বায়ু ও পশ্চিমা-বায়ুর সংঘর্ষের ফলেই এই প্রবল বর্ষণ। তিনি একে ‘স্বাভাবিক’ আবহাওয়াজনিত প্রক্রিয়া বলেছেন। ইতিমধ্যেই রাজ্যে কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে, যা ১৭ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত বহাল থাকবে। এই সময়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত উত্তরাখণ্ডে গড়ের চেয়ে ২৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি (১৩৭৫.৯ মিমি) হয়েছে।
এদিকে, হিমাচল প্রদেশে সোমবার রাতের প্রবল বৃষ্টিতে বহু জায়গায় বন্যা ও ধস নেমেছে। মান্ডিতে এক পরিবারের তিন সদস্য ধসে চাপা পড়ে মারা গিয়েছেন। রাজ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে (২০ জুন থেকে) এখনও পর্যন্ত প্রাণহানি হয়েছে ৪১৭ জনের, নিখোঁজ রয়েছেন অন্তত ৪৫ জন। আহত হয়েছেন প্রায় ৪৭৭ জন। সেপ্টেম্বরের প্রথমার্ধে রাজ্যে ৪৬ শতাংশ অতিরিক্ত বৃষ্টি হয়েছে।
রাজধানী শিমলার পন্থাঘাটি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কায় খালি করে দেওয়া হয়েছে একটি পাঁচতলা ভবন। একই দিনে আরও একটি ধসে শিমলা-সংলগ্ন এলাকায় একাধিক গাড়ি চাপা পড়েছে। এ কারণে পাঞ্জাবের ফিরোজপুর থেকে চিন সীমান্তের শিপকি লা পর্যন্ত যোগাযোগ রক্ষাকারী জাতীয় সড়ক ৫ বন্ধ হয়ে গেছে।
মান্ডির ধরমপুর বাসস্ট্যান্ডও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বহু বাস ভেসে গিয়েছে বন্যার জলে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ বছর এখনও পর্যন্ত হিমাচলে ৪৬টি মেঘভাঙা, ৯৭টি আকস্মিক বন্যা ও ১৪০টি ভূমিধসের ঘটনা ঘটেছে। বর্তমানে ৬৫৫টি সড়ক, যার মধ্যে তিনটি জাতীয় সড়ক রয়েছে, যান চলাচলের অযোগ্য। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১,২৫০ বিদ্যুৎ ট্রান্সফর্মার ও ১৬০টি জল সরবরাহ প্রকল্প।
উত্তরাখণ্ডে কমলা সতর্কতা এবং হিমাচলে হলুদ সতর্কতা জারি আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় কিছু এলাকায় আবারও ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন