
পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতি মামলায় (PNB Scam) বেলজিয়াম থেকে গ্রেফতার করা হয় পলাতক হীরে ব্যবসায়ী মেহুল চোকসিকে। বেলজিয়াম পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। চোকসি গ্রেফতার হওয়ার খবরে খুশি বেঙ্গালুরুর উদ্যোগপতি হরিপ্রসাদ এসভি। ন’বছর আগে তিনিই প্রথম চোকসির দুর্নীতি প্রকাশ্যে এনেছিলেন। এমনকি চিঠি লিখে বিষয়টি জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দফতরেও।
সোমবার সকালে চোকসির গ্রেফতারির খবর প্রকাশ্যে আসার পর সংবাদ সংস্থা এএনআইকে নিজের প্রতিক্রিয়ায় হরিপ্রসাদ বলেন, “এটা দারুণ খবর। শুধু ভারতের জন্য নয়, যাঁরা ওঁর দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন, তাঁদের সকলের জন্য। যত দ্রুত সম্ভব ওঁকে ভারতে নিয়ে আসা এবং বিচারের সম্মুখীন করা প্রয়োজন”।
চোকসির থেকে সমস্ত প্রতারণার টাকা উদ্ধার করার দাবিও তুলেছেন হরিপ্রসাদ। তিনি বলেন, “ওঁকে ভারতে নিয়ে আসার পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল টাকা উদ্ধার করা। যত টাকা চোকসী ভারত থেকে সরিয়েছেন, তা পৃথিবীর যে কোনও প্রান্তেই রাখুন না কেন, উদ্ধার করতে হবে। আশা করছি ভারত সরকার সফল হবে”।
যদিও গ্রেফতার করা হলেও তাঁকে ভারতে ফেরনো খুব সহজ হবে না বলেই মনে করছেন হরিপ্রসাদ। তাঁর কথায়, “ভারতে চোকসীকে ফিরিয়ে আনা সহজ নয়। কারণ, ওঁর পকেট ভর্তি। প্রত্যর্পণ এড়াতে তিনি ইউরোপের সেরা আইনজীবীদের নিয়োগ করবেন। ঠিক যেমনটা করছেন বিজয় মাল্য। আমার মনে হয় না ভারত সরকারের কাজটা অত সহজ হবে”।
প্রসঙ্গত, ২০১৫ সালে প্রথম চোকসি এবং তাঁর সংস্থা গীতাঞ্জলির জেমস দ্বারা প্রতারিত হন হরিপ্রসাদ। এরপর বেঙ্গালুরু পুলিশের কাছে চোকসির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি। ইডি, সিবিআই, সেবিকে চিঠি লিখে প্রতারণার কথা জানান তিনি। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রীর দফতর পিএমও-তেও চিঠি লিখেছিলেন হরিপ্রসাদ। একটি চিঠি দিয়েছিলেন কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রীকেও।
সেই সময় চিঠিতে হরিপ্রসাদের অভিযোগ ছিল, তাঁর সঙ্গে ১০ কোটি টাকার প্রতারণা করেছেন চোকসি। সেই সংক্রান্ত খোঁজখবর করতে গিয়েই আরও দুর্নীতি স্পষ্ট হয় তাঁর চোখের সামনে। গীতাঞ্জলি জেমসের সম্পত্তির পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ কোটি। কিন্তু তিনি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়েছিলেন প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার। পিএমও-তে তিনি সম্ভাব্য দুর্নীতির কথা জানিয়েছিলেন হরিপ্রসাদ। এমনকি তাঁর চিঠির প্রাপ্তি স্বীকার করেছিল পিএমও।
এরপরেই পিএনবি চোকসি ও তাঁর সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করে এবং তদন্ত শুরু করে। পিএনবি-র ১৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা তছরুপের অভিযোগ রয়েছে চোকসির বিরুদ্ধে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে পিএনবি কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পরই ভারত ছেড়ে পালিয়ে যান চোকসি। অ্যান্টিগা ও বারবুডার নাগরিকত্ব জোগাড় করে সেখানে থাকতে শুরু করেন। এরপর ২০২১ সালে সেখান থেকেও রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যান তিনি। পরে তাঁকে ডমিনিকায় পাওয়া যায়। এরপর বেলজিয়ান স্ত্রীর সাহায্যে ২০২৩ সাল থেকে বেলজিয়ামে থাকা শুরু করেন।
চোকসির পরিকল্পনা ছিল চিকিৎসার জন্য সুইজারল্যান্ডে যাওয়ার, তবে তার আগেই বেলজিয়াম পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। জানা গেছে, ইডি ও সিবিআই ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেলজিয়ামের কাছে চোকসিকে ফেরানোর আবেদন জানায়। যদিও চোকসির আইনজীবীরা তাঁর শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি ভ্রমণে সক্ষম নন বলে জানান। পাল্টা ভারতের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, মেহুল যদি অ্যান্টিগুয়া থেকে বেলজিয়াম যেতে পারেন তাহলে বেলজিয়াম থেকে ভারতেও আসতে পারবেন।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন