বুধবার ৩১ ডিসেম্বর সকাল থেকে দেশজুড়ে শুরু হয়েছে গিগ শ্রমিকদের ধর্মঘট। যে গিগ শ্রমিকদের নেটওয়ার্কের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন সংস্থা তাদের পরিষেবা দিয়ে থাকে আজ সকাল থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মঘটের কারণে সেই পরিষেবায় প্রভাব পড়েছে। এই ধর্মঘটে যোগ দিয়েছেন জোম্যাটো, সুইগি, ব্লিনকিট, আমাজন, ফ্লিপকার্ট, জেপ্টো প্রভৃতি সংস্থার গিগ শ্রমিকরা। মূলত অসুরক্ষিত কাজের শর্তঁ, শোষণমূলক ব্যবহারের প্রতিবাদে এবং ন্যায্য বেতনের দাবি সহ ৬ দফা দাবিতে দেশ জুড়ে এই ধর্মঘট। যার মধ্যে অন্যতম প্রধান দাবি, অসুরক্ষিত দশ মিনিটের ডেলিভারি শিডিউল বাতিল করা।
তাৎপর্যপূর্ণভাবে গিগ শ্রমিকদের এই ধর্মঘটে ব্যাপক সাড়া মিলেছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ধর্মঘটে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি সংহতি জানিয়েছেন নেটিজেনদের একাংশও। সকলেই প্রাক নববর্ষে একদিনের জন্য এই অ্যাপ বয়কটের আহ্বান জানিয়েছেন। গিগ শ্রমিকদের ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছেন ধ্রুব রাঠি, কুণাল কামরার মতন প্রখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সাররাও।
গিগ শ্রমিকদের ধর্মঘট নিয়ে কী জানাচ্ছে সমাজমাধ্যম?
নিজের এক্স হ্যান্ডেলে (পূর্বতন ট্যুইটার) ধ্রুব রাঠি গিগ শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রসঙ্গে লিখেছেন, “সবাই জানে কী চরম পরিস্থিতিতে তাঁরা কাজ করে এবং অ্যালগরিদম তাদের বেতন নির্ধারণ করে। তাদের দশ মিনিটের মধ্যে ডেলিভারি দেওয়ার জন্য চাপের মধ্যে থাকতে হয় এবং অ্যালগরিদম এলোমেলোভাবে ওঠানামা করে। আমি আপনাদের সকলকে অনুরোধ করছি ৩১ ডিসেম্বর এই সমস্ত অ্যাপ বয়কট করুন এবং কোনও কিছু অর্ডার করবেন না যাতে আমরা এই অ্যাপগুলির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারি এবং গিগ কর্মীদের তাদের অধিকার দিতে পারি।”
দেশে গিগ শ্রমিক কত?
তথ্য অনুসারে আগামী ২০২৯-৩০ সালের মধ্যে দেশে গিগ শ্রমিকদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে হতে পারে ২ কোটি ৩৫ লক্ষ। নীতি আয়োগের এক সমীক্ষা রিপোর্ট অনুসারে ২০২০-২১-এ দেশে গিগ শ্রমিকের সংখ্যা ছিল ৭৭ লক্ষ। ওই সমীক্ষা জানাচ্ছে বর্তমানে দেশের মোট গিগ শ্রমিকদের মধ্যে ৩১ শতাংশ স্বল্প দক্ষ, ৪৭ শতাংশ মাঝারি দক্ষ এবং ২২ শতাংশ উচ্চ দক্ষ।
কাদের ডাকে ধর্মঘট?
লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিদিনই গিগ শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়লেও তাঁরা এখনও অসুরক্ষিত এবং কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে বাধ্য হন। যা নিয়ে বারবার দাবি জানালেও সমস্যা মেটেনি। তাই বাধ্য হয়েই ধর্মঘটের পথে নামতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইন্ডিয়ান ফেডারেশন অফ অ্যাপ-বেসড ট্রান্সপোর্ট ওয়ার্কার্স (Indian Federation of App Based Transport Workers - IAFT)। এই ধর্মঘটে সমর্থন জানিয়েছে মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, দিল্লি-এনসিআর, পশ্চিমবঙ্গ, তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ুর কিছু অংশে কর্মরত একাধিক আঞ্চলিক সংগঠন।
কেন এই ধর্মঘট?
ইউনিয়নের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ইউনিয়নগুলোর মতে, ডেলিভারি পার্টনারদের দীর্ঘ সময় ধরে কাজ করতে বাধ্য করা হলেও অর্ডার পিছু পারিশ্রমিক ক্রমাগত কমিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কর্মীদের বীমা সুরক্ষার অভাব, নিরাপত্তাহীন কাজের পরিবেশ, অ্যালগরিদম দ্বারা আরোপিত বিনা কারণে জরিমানা এবং চাকরির নিরাপত্তার অভাব নিয়েও ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউনিয়নের মতে কোম্পানিগুলো গিগ শ্রমিকদের ‘অংশীদার’ হিসেবে বললেও এবং ভারতের ডিজিটাল বাণিজ্যের মেরুদণ্ড হিসেবে বর্ণনা করলেও, গিগ কর্মীদের ব্যবহারযোগ্য শ্রমিক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।
ধর্মঘট প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মান্ডব্যকে লেখা এক চিঁটিতে আইএফএটি জানিয়েছে, এর আগে গত ২৫ ডিসেম্বরও তারা ধর্মঘটে নেমেছিলেন এবং তাতে দেশজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার কর্মী ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিলেন এবং ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পরিষেবা ব্যাহত হয়েছিল। ইউনিয়ন জানিয়েছে, এই ধর্মঘটের উদ্দেশ্য, নিরাপত্তাহীন ডেলিভারি মডেল, আয় কমে যাওয়া, যথেচ্ছভাবে আইডি ব্লক করা এবং সামাজিক নিরাপত্তার অভাবের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করা।
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন