"কৃষক, পরিযায়ী শ্রমিকদের অস্বীকার করা চলবে না" - কেন্দ্র ও রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা শীর্ষ আদালতের

"শুধুমাত্র সেনসাস হয়নি বলে গরীব জনগণ রেশন পাবেন না? আপনারা (কেন্দ্র) ২০১১ সালের পরিসংখ্যান নিয়ে চলছেন। এভাবে চললে গরীব মানুষদের সঙ্গে অবিচার করা হবে।" - সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট
সুপ্রিম কোর্ট ফাইল ছবি সংগৃহীত
Published on

দেশের কৃষক এবং পরিযায়ী শ্রমিকরা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং একটি কল্যাণমূলক সমাজে তাদের উপেক্ষা করা অনুচিত। বৃহস্পতিবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে এমনটাই জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট।

পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা সংক্রান্ত এক মামলার শুনানিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে কড়া ভাষায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, "মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশে জনগণের দুটি অংশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক কৃষক, দুই পরিযায়ী শ্রমিক। দেশের ভিত তৈরীতে পরিযায়ী শ্রমিকদের গুরুত্ব অপরিসীম। তাঁদের অধিকার কোনওভাবে অস্বীকার করা চলবে না।"

শীর্ষ আদালত কেন্দ্রকে নির্দেশ দিয়েছে, রেশন এবং নগদ অর্থ সহ কেন্দ্রের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুযোগ সুবিধা পরিযায়ী শ্রমিকদের দিতে হবে। এ প্রসঙ্গে দেশের বাস্তব পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিচারপতি এম আর শাহ এবং বি ভি নাগরত্ন জানিয়েছেন, "যতই উন্নয়ন হোক না কেন, দেশে না খেতে পেয়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। একজন নাগরিকেরও যেন অনাহারে মৃত্যু না হয়, তা-ই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত। চোখ বন্ধ করে তো বসে থাকা যাবে না। সমাধানের রাস্তা আপনাদেরকেই (কেন্দ্র) বের করতে হবে।"

২০২০ সালে ভারতের বুকে করোনা ভাইরাস থাবা বসানোর সাথে সাথেই মাত্র চার ঘণ্টার নোটিশে দেশ জুড়ে লকডাউন ঘোষণা করেছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকার। যার জেরে ভয়ঙ্কর বিপাকে পড়েছিল সাধারণ মানুষ। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন পরিযায়ী শ্রমিকরা। লকডাউনের কড়া বিধিনিষেধ থাকার ফলে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আটকে পড়েছিলেন তাঁরা। সরকার থেকে কোনওরকম সহায়তা না পাওয়ায় বাধ্য হয়েই তাঁরা এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্য পায়ে হেঁটে ঘরে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাঁদের থাকা-খাওয়া-সুরক্ষার দিকে নজর দেয়নি কেন্দ্র।

প্রায় ২০০-র বেশি পরিযায়ী শ্রমিক পায়ে হেঁটে ঘরে ফেরার সময় প্রাণ হারিয়েছেন। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে রেললাইনে ঘুমিয়ে পড়লে ট্রেনে পিষেও মারা গেছেন বহু পরিযায়ী শ্রমিক। এই বীভৎসতার সাক্ষী থেকেছে গোটা দেশ। সেই বছর মে মাসে সুপ্রিম কোর্ট এ বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে মামলা রুজু করে একাধিক নির্দেশ দিয়েছিল। সেই মামলার শুনানি বাকি রয়েছে। তারই মধ্যে নতুন করে আবেদন করেছেন সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ, হর্ষ মান্দার এবং জগদীপ চোকার। খাদ্য নিরাপত্তা, নগদ অর্থ প্রদান সহ, করোনাকালে দুর্দশাগ্রস্ত শ্রমিকদের জন্য কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি যাতে অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্প রূপায়ণ করে সেই জন্য আদালতে আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা। বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানি ছিল।

শুনানিতে সমাজকর্মীদের পক্ষের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানিয়েছেন, কেন্দ্র রাজ্যগুলিকে বাজার দরে রেশন কিনতে বলেছে। বেশিরভাগ শ্রমিকই ই-শ্রম পোর্টালে নাম লেখানোর পরেও রেশন পান না, কারণ তাঁদের রেশন কার্ড নেই।

এরপরেই বিচারপতিরা ক্ষুব্ধ হয়ে বলেছেন, "শুধুমাত্র সেনসাস হয়নি বলে গরীব জনগণ রেশন পাবেন না? আপনারা (কেন্দ্র) ২০১১ সালের পরিসংখ্যান নিয়ে চলছেন। এভাবে চললে গরীব মানুষদের সঙ্গে অবিচার করা হবে। আপনাদের অবশ্যই তাঁদের ভাই-বোন ভাবা উচিত। যাদের রেশন কার্ড আছে, আপনারা তাঁদের রেশন দিচ্ছেন। অথচ যাদের নাম রয়েছে অথচ রেশন কার্ড নেই, তাঁদের কী হবে?"

পাশাপাশি কার্ড ছাড়াও যাতে পরিযায়ী শ্রমিকরা পর্যাপ্ত খাদ্যশস্য পান, সে বিষয়ে কেন্দ্রকে বিশেষ পদ্ধতির দিকে নজর দিতে বলেছে সুপ্রিম কোর্ট। দু'সপ্তাহ পর ফের এই মামলার শুনানি হবে।

সুপ্রিম কোর্ট
Covid 19: দেশে একদিনে সংক্রমণ প্রায় ২২ হাজার! তবে কি দুয়ারে এবার থাবা বসাচ্ছে চতুর্থ ঢেউ?

স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন

Related Stories

No stories found.
logo
People's Reporter
www.peoplesreporter.in