
পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হামলার প্রত্যাঘাতে মঙ্গলবার মধ্যরাতে পাকিস্তান অধিকৃত কাশ্মীরে হামলা চালায় ভারতীয় সেনা। ২৫ মিনিটের ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনা। বুধবার সকালে সেই স্ট্রাইকের বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন বিদেশ সচিব বিক্রম মিস্রি। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় সেনাবাহিনীর দুই অফিসার কর্নেল সোফিয়া কুরেশি এবং উইং কমান্ডার ব্যোমিকা সিং।
এর আগে এই ধরণের অভিযানে মহিলা অফিসারদের দিয়ে প্রেস বিফ্রিং করা হয়েছে কিনা মনে করতে পারছেন না অনেকেই। এই ঐতিহাসিক অভিযানে খুশি কর্নেল কুরেশির পরিবার। আগের রাতে কথা হলেও এই অভিযান সম্পর্কে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি তাঁর পরিবার। সকালে সাংবাদিক সম্মেলন দেখেই এই অভিযানের কথা জানতে পেরেছেন তাঁরা। মেয়ের এই অভিযানে উচ্ছ্বসিত পরিবার।
গুজরাটের ভাদোদরার বাসিন্দা কর্নেল সোফিয়া কুরেশি। এই অভিযানের পর সকলের মুখে মুখে ঘুরছে সিনিয়র এই অফিসারের নাম। মেয়ের সাফল্যে খুশি সোফিয়ার মা হালিমা। তিনি জানিয়েছেন, “মেয়ে দেশের জন্য যা করেছে আমরা তাতে দারুণ খুশি। আমার আশা, এটা দেখে দেশের বাকি মেয়ের বাবা-মায়েরাও অনুপ্রাণিত হবেন। তাঁরা তাঁদের কন্যাদের এমন শিক্ষায় শিক্ষিত করবেন, যাতে তাঁরা দেশের সেবা করতে পারেন”।
অন্যদিকে, মেয়ের এই এমন কাজে আবেগপ্রবণ কুরেশির বাবা তথা প্রাক্তন আর্মি অফিসার মহম্মদ কুরেশি। তাঁর কথায়, “দেশের জন্য ও কিছু করেছে। এটাই আমার কাছে দারুণ গর্বের”।
ভাই মহম্মদ সঞ্জয় কুরেশিও নিজের খুশি ধরে রাখতে পারছেন না। বোন সোফিয়া প্রসঙ্গে বলেন, “আমাদের বংশধারাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে ও। আমার দাদু ভারতীয় সেনায় ছিলেন। বাবাও সেনায় কাজ করেছেন। এ বার সোফিয়া এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে আমাদের লিগ্যাসিকে”।
অন্যদিকে, বোনের সাফল্যে খুশি তাঁর যমজ বোন সাইনা সানসারার। তিনি বলেন, “আগের দিনই ওঁর সঙ্গে কথা হলো। তখন বুঝতেই দেয়নি পরের দিন সকালে কী হতে চলেছে। এটা খুব গর্বের দিন। ওঁর ছোট থেকেই সেনায় যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। আসলে ওঁর প্রথমে DRDO-তে যোগ দিয়ে ডঃ আবদুল কালামের সঙ্গে কাজ করার স্বপ্ন ছিল। পরে ও সেনাতেই যায়। ও ওঁর স্বপ্নকে বাস্তব করেছে। আমিও সেনাতে যেতে চেয়েছিলাম। NCC করা সত্ত্বেও সেনার পরীক্ষায় পাশ করতে পারিনি। ওঁকে সেনার পোশাকে দেখে গর্ব হয়”।
ছোট থেকেই ভারতীয় সেনায় যোগদানের লক্ষ্য ছিল কুরেশির। ১৯৯৯ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দেন তিনি। বর্তমানে ভারতীয় সেনার সামরিক যোগাযোগ ও ইলেকট্রনিক্স অভিযান সহায়ক শাখা সিগন্যাল কর্পসের অন্যতম শীর্ষ আধিকারিক সোফিয়া। ২০১৬ সালে প্রথম মহিলা হিসেবে ১৮টি দেশের সামনে ভারতের সামরিক মহড়ায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সোফিয়া। এর আগে ২০০৬ সালে কঙ্গোয় রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষা অভিযানে সামরিক পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন