

ন্যাশনাল হেরাল্ড আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ৭৫১.৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডি। ইডি সূত্রে খবর, বাজেয়াপ্ত সম্পত্তির মধ্যে সংবাদপত্রটির প্রাক্তন মালিক সংস্থা এজেএল এবং বর্তমান পরিচালন তথা মালিক সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়া বা ওয়াইআই-এর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি রয়েছে। উল্লেখ্য, ইয়ং ইন্ডিয়া সংস্থার ৭৬ শতাংশ শেয়ারের মালিক কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও তাঁর ছেলে রাহুল গান্ধী।
মঙ্গলবার সংস্থা জানিয়েছে, দিল্লি, মুম্বইয়ে ন্যাশনাল হেরাল্ড হাউস ও লখনউয়ের নেহেরু ভবনে তল্লাশি চালিয়ে এই বিপুল সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
২০১৩ সালে কংগ্রেস জমানাতেই জহরলাল নেহেরু প্রতিষ্ঠিত এই ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্র নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। অভিযোগ ছিল, সংবাদপত্রটির মালিক সংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড বা এজেএল প্রায় ৯০ কোটি টাকার দেনার দায়ে ডুবেছিল, যার মধ্যে অধিকাংশই সরকারে থাকাকালীন কংগ্রেসের থেকে নেওয়া। এরপর ২০০৮ সালে যখন সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়, তখন ন্যাশনাল হেরাল্ড-এর দায়িত্ব নেয় শীর্ষস্থানীয় কংগ্রেস নেতাদের পরিচালিত বেসরকারি সংস্থা ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড বা ওয়াইআই।
মালিকানা হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রটির কয়েক হাজার টাকার সম্পত্তির পাশাপাশি ৯০ কোটির দেনাও ইয়ং ইন্ডিয়ান-এর ঘাড়ে চাপে। কিন্তু দেনার টাকা উদ্ধার অসম্ভব, এই অজুহাতে কংগ্রেসের তরফে ওই ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়। ২০১৪ সালে সরকারে এসে বিজেপির তরফে এই ঋণ মকুব নিয়েই আপত্তি তোলা হয়। বিজেপি নেতা সুব্রহ্মণ্যম স্বামী অভিযোগ করেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে কংগ্রেসকে কোনও কর দিতে হয় না। কিন্তু এমতাবস্থায় কোনও বাণিজ্যিক সংস্থাকেও তারা ঋণ দিতে পারে না।
কংগ্রেসের তরফে পাল্টা দাবি করা হয়, ইয়ং ইন্ডিয়া একটি অলাভজনক সংস্থা, তাই এই সংস্থা কোনও মালিককে মুনাফার ভাগ দিতে পারে না। আর সংবাদপত্রটির মালিকানা হস্তান্তরের সময় কোনোরকম আর্থিক লেনদেনও হয়নি। কিন্তু বিজেপির অভিযোগকে মান্যতা দিয়ে ওই মালিকানা হস্তান্তরে কোনও বেআইনি লেনদেন হয়েছিল কি না, সেই বিষয়ে ২০১৫ সালে ইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিল দিল্লির মেট্রোপলিটান আদালত। তবে প্রাথমিক তদন্তের পর কংগ্রেসের দাবির সত্যতা মেনে মামলাটি বন্ধ করতে চেয়েছিল ইডি। কিন্তু মোদী সরকার তখন তৎকালীন ইডি প্রধান রাজন কাটোচকে বরখাস্ত করে দেয়।
এদিন সেই মামলায় ৭৫১ কোটির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত একটি বিবৃতি পেশ করে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, “পিএমএলএ, ২০০২-এর আওতায় তদন্তনাধীন আর্থিক দুর্নীতি মামলায় ইডি সাময়িকভাবে ৭৫১.৯ কোটি টাকার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করেছে। তার মধ্যে অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড-এর দখলে থাকা ৬৬১.৬৯ কোটি টাকার ‘অপরাধের আয়ে অর্জিত’ সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে, ওই এজেএল সংস্থার ইক্যুইটি শেয়ারে বিনিয়োগের ফলে ইয়ং ইন্ডিয়া সংস্থাটির দখলে থাকা ৯০.২১ কোটির বেআইনি সম্পত্তিও উদ্ধার হয়েছে।”
ভারতের প্রয়োজন নিরপেক্ষ এবং প্রশ্নমুখী সাংবাদিকতা — যা আপনার সামনে সঠিক খবর পরিবেশন করে। পিপলস রিপোর্টার তার প্রতিবেদক, কলাম লেখক এবং সম্পাদকদের মাধ্যমে বিগত ১০ বছর ধরে সেই চেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছে। এই কাজকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজন আপনাদের মতো পাঠকদের সহায়তা। আপনি ভারতে থাকুন বা দেশের বাইরে — নিচের লিঙ্কে ক্লিক করে একটি পেইড সাবস্ক্রিপশন নিতে পারেন। স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন