
রাজস্থানের জয়পুরে সিনএনজি ট্যাঙ্কার বিস্ফোরণের ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৪। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনে রয়েছেন অন্তত ৩০ জন। এদের বেশিরভাগেরই অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে, এই দুর্ঘটনা কীভাবে ঘটল, রাজস্থান সরকারের কাছে তার রিপোর্ট চেয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। আগামী ২০ জানুয়ারির মধ্যে শীর্ষ আদালতে সেই রিপোর্ট পেশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শুক্রবার জয়পুর-আজমের হাইওয়ের ধারে একটি পেট্রোল পাম্পের কাছে দাঁড় করানো ছিল একটি সিনএনজি ট্যাঙ্কার। পিছন থেকে একটি এলপিজি বোঝাই ট্রাক এসে ধাক্কা মারে ট্যাঙ্কারে। সিএনজি ট্যাঙ্কারের পাইপ লিক করে। মুহুর্তের মধ্যে আগুন লেগে বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল যে, তৎক্ষণাৎ ৩০০ মিটার জায়গা জুড়ে ছড়িয়ে পরে তা।
জানা যায়, এই বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের ট্রেলার, ট্রাক, কন্টেনার, পিকআপ ভ্যান, মোটরবাইক, অটোরিকশা, গাড়ি এবং দু’টি বাস মিলিয়ে মোট ৪০ টি গাড়ি পুড়ে যায়। এতো দ্রুত ঘটনাটি ঘটে যে অনেকেই গাড়ি থেকে বেরোতে পারে নি। গাড়ির মধ্যেই ঝলছে তাঁদের মৃত্যু হয়েছে। এমনকি, এই বিস্ফোরণের ফলে অনেক পাখিও মারা গেছে।
যে ট্রাকের সাথে এলপিজি ট্যাঙ্কারের ধাক্কা লাগে, তার চালক বছর চল্লিশের সুমের সিং প্রাণে বেঁচে গেছেন। তিনি ঘটনার মুহূর্তের বিবরণ দিতে গিয়ে বলেন, "কোন রকমে ট্রাকটাকে বাঁদিকে ঘুরিয়ে লাথি বাইরে রাস্তায় পড়েই উঠে দৌড়াতে শুরু করি। কিছুটা এগিয়ে পিছনে তাকিয়ে ছিলাম একবার, মনে হল সব আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেল যেন। কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না তো।"
তিনি জানান, "খুব ঠান্ডা ছিল। সঙ্গে কুয়াশা। আমি আস্তে আস্তে চালাচ্ছিলাম। ভাবতেও পারিনি এরকম একটা ঘটনা অপেক্ষা করছে আমার জন্য। দৌড়ে অনেকটা চলে গিয়েছিলাম। পরে ফিরে এসে দেখি সব দাউদাউ জ্বলছে।"
স্থানীয় এক পাবলিক স্কুলের ভ্যান চালক বলেন, যত কাছে এগোচ্ছিলাম, তত বুঝতে পারছিলাম কী ভয়ঙ্কর অবস্থা। কারও গোটা শরীর জ্বলছে, সেভাবেই দৌড়াচ্ছে। কারও চোখ পুড়ে গেছে। আমরা সাহায্যের জন্য ঘটনাস্থলে পৌঁছাতেই পারছিলাম না।"
স্থানীয়দের দাবি, রাসায়নিক ভর্তি কয়েকটি ট্যাঙ্কার এবং তেলের ট্যাঙ্কারের বিস্ফোরণের ফলে ওই এলাকার বাতাসে মিশেছে রাসায়নিক। যার ফলে অনেকের চোখে জ্বালা, শ্বাসকষ্টের মত উপসর্গ দেখা দিয়েছে পরে।
অন্যদিকে, এই ঘটনায় ইতিমধ্যেই রাজ্য একটি কমিটি গঠন করেছে। এছাড়া মৃত এবং আহতদের পরিবারের জন্য ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রাজস্থান সরকার। মৃতদের পরিবারের জন্য ৫ লক্ষ টাকা এবং আহতদের পরিবারের জন্য ১ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজ্য সরকারের পাশাপাশি কেন্দ্রের পক্ষ থেকেও মৃতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করা হয়েছে।
স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে বাঁচিয়ে রাখতে পিপলস রিপোর্টারের পাশে দাঁড়ান। পিপলস রিপোর্টার সাবস্ক্রাইব করতে এই লিঙ্কে ক্লিক করুন